|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রী আসছেন না, মন খারাপ মেদিনীপুরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তৃণমূলের জেলা পরিষদ দখলের পর এই প্রথম জেলায় আসছেন দলনেত্রী। কথা ছিল তিনি মেদিনীপুরেও আসবেন। কয়েক দিন ধরেই সাজো সাজো রব ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন বলে স্থির হয়েছিল, সেই প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনও সাজানো-গোছানোর কাজ শুরু হয়। রাতারাতি লাল রঙের পর্দা সরিয়ে সবুজের ছোঁয়া আছে এমন পর্দা টাঙানো হয়। প্রদ্যোৎ সদনের যে ঘরে অতিথিরা বিশ্রাম করেন, সেই ঘরের দেওয়াল রং করা হয়। নতুন রং চড়ানো হয় বাগানে এবং শহিদ ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের মূর্তিতে। বাগানের গাছগুলির পরিচর্যা করা হয়।
শেষমেশ অবশ্য সাজগোজই সার। কারণ, আজ, বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক সভা করতে মেদিনীপুরে আসছেন না মুখ্যমন্ত্রী। শেষ মুহূর্তে সভাস্থল পরিবর্তন হয়েছে। মেদিনীপুরের বদলে সভা হবে ঝাড়গ্রামে। ফলে, জেলা পরিষদ জুড়ে এখন শুধুই হা-হুতাশ।
জেলা পরিষদের এক কর্মীর কথায়, “কয়েক দিন আগেই আমরা জানতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী এই সভাঘরে প্রশাসনিক সভা করবেন। সেই মতো প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন সাজানোর কাজ শুরু হয়। হাতে বেশি সময়ও ছিল না। তাই দিনরাত এক করে কাজ হয়েছে। আগে কখনও মুখ্যমন্ত্রী জেলা পরিষদে আসেননি। আমরাও আশায় ছিলাম, ওঁনাকে কাছ থেকে দেখব। কিন্তু, কোথায় কী! সব আশা শেষ!” মেদিনীপুরের সভার জন্য আরও কিছু ব্যবস্থা করতে হয়েছিল প্রশাসনকে। যেমন, ফুলের বরাত দেওয়া, খাবারের প্যাকেটের বরাত দেওয়া প্রভৃতি। মৌখিক ভাবেই এ সবের বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু, শেষ বেলায় সব বাতিল করা হয়েছে।” জেলা পরিষদের এক কর্মী বলছেন, “সভা যদি হবেই না, তাহলে এত আয়োজনের কী ছিল? কিছু অর্থেরও তো অপচয় হল।” |
|
জেলা পরিষদে পাল্টেছে পর্দার রং।—নিজস্ব চিত্র। |
মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন সাজাতে ঠিক কত খরচ হয়েছে? জেলা পরিষদ কর্তাদের মুখে কুলুপ। এক সূত্রের দাবি, সব কিছু মিলিয়ে সওয়া লক্ষ টাকা তো হবেই।
রাজ্যে পালাবদলের পর বহুবার জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবারই প্রশাসনিক সভা করেছেন। কখনও সভা হয়েছে মেদিনীপুরে। কখনও বা ঝাড়গ্রামে। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে যতবার প্রশাসনিক সভা হয়েছে, তার সব ক’টিই হয়েছে সার্কিট হাউসে। জেলা পরিষদের এই সভাঘরে একটিও সভা হয়নি। কারণ, শুরু থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের দখল ছিল সিপিএমের দখলে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এ বারই প্রথম জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসায় জেলা পরিষদের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে প্রশাসনিক সভার প্রস্তুতি শুরু হয়। গোড়ায় ঠিক ছিল, ওই সভা হবে জেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের শহিদ ক্ষুদিরাম পরিকল্পনা ভবনের সভাঘরে। কিন্তু, সভাঘরটি রয়েছে বহুতলে। তাই বহুতলে সভা হলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরে ঠিক হয়, সভা হবে প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে। ফলে, সদনের চেয়ার, টেবিল, পর্দা, বাতানুকূল যন্ত্র, আলো সবুই নতুন। মেদিনীপুরে সভা হবে জানার পরই গত শুক্রবার সভাস্থল পরিদর্শন করেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ, বিধায়ক তথা এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ প্রমুখ। শুরুতে সভাস্থলের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হয়। দেখেন, সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে কি না। উপস্থিত সকলে নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় আলোচনা সারেন। এই সময়ই নজরে আসে, সদনের মধ্যে থাকা পর্দাগুলোর রঙ লাল। ঠিক হয়, লাল রঙের পর্দগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। সঙ্গে আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। এই কয়েক দিনে জোরকদমে সভার প্রস্তুতি চলেছে। কিন্তু, সভাই তো হচ্ছে না। সভাঘরের এই সাজগোছ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “কারও লালে অরুচি থাকতেই পারে। আমি আর কী বলব! তবে, নতুন পর্দা লাগানো হল। ঘরদোর পরিষ্কার হল। কিন্তু, যে জন্য এই আয়োজন, সেটাই তো হল না।” জবাবে জেলা পরিষদের বর্তমান সভাধিপতি তৃণমূলের উত্তরা সিংহর মন্তব্য, “সিপিএমের তো কাজ নেই। তাই শুধু কুৎসা আর অপপ্রচার করতেই ব্যস্ত!” |
|
|
|
|
|