|
|
|
|
উন্নয়ন দিয়েই শান্তিরক্ষা, জঙ্গলমহলে বার্তা মমতার |
সুমন ঘোষ • শিলদা |
উন্নয়নের অস্ত্রে মাওবাদী মোকাবিলায় সাফল্য এসেছে। শান্তি ফিরেছে জঙ্গলমহলে। আগামী দিনেও সেই উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই জঙ্গলমহলকে মাওবাদী শূন্য করার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বেলপাহাড়ির শিলদার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, মাওবাদীদের ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেওয়ার গুরুদায়িত্ব জঙ্গলমহলের মানুষকেই নিতে হবে। সভাস্থলে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনারা বন্দুক ধরবেন না তো? লুকিয়ে কেউ অপরাধমূলক কাজ করলে তাঁকে ধরুন। বলুন, বন্দুক নয়, ভাত চাই। জঙ্গলমহলে শান্তি চাই।” এই শান্তিরক্ষার কাজে কখনও উন্নয়ন দিয়ে, কখনও পাশে থেকে তাঁর সরকার সব রকম সহায়তা করবে বলেও এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বারের জঙ্গলমহল সফরের শেষ পর্বে এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার বারিকুলে সভা সেরে শিলদা পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল চারটে বেজে যায়। ততক্ষণে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। তারই মধ্যে শিলদা চন্দ্রশেখর কলেজ মাঠের সভাস্থলে হাজার সাতেক মানুষ তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য শোনেন। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ আবার কাকভেজা হয়ে। বক্তব্যের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীকেও বলতে শোনা যায়, “জঙ্গলমহলের মানুষের আমাদের প্রতি আস্থা রয়েছে বলেই পঞ্চায়েতে বিপুল জয় এসেছে। আস্থা রয়েছে বলেই এই বৃষ্টির মধ্যেও এত মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। মানুষ বিশ্বাস রেখেছে বলেই আজ জঙ্গলমহলে শান্তি রয়েছে।” কোনও মূল্যেই এই শান্তি বিঘ্নিত হতে দেবেন না বলেও এ দিন নিশ্চিত করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদীদের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “মাওবাদীরা খতম তালিকার প্রথমে আমার নাম রেখেছে। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি বারবার জঙ্গলমহলে আসব।” |
|
নৃত্যের তালে। শিলদার প্রশাসনিক জনসভায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
শিলদা-কাণ্ডের স্মৃতিতে এলাকায় একটি স্মৃতিসৌধ তৈরির কথা এ দিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের অদূরেই শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে ২০১০ সালে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪ জন জওয়ান। এখন আর ওখানে ক্যাম্প নেই। ২০১০ সালে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই তৈরি হবে সৌধ। এলাকায় কমিউনিটি হল তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সৌধ বানাবে পুলিশ। আর কমিউনিটি হল তৈরির জন্য মুকুল রায়ের সাংসদ তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা এ দিন ঘোষণা করেছেন মমতা। শিলদায় একটি ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান তৈরির চেষ্টা করবেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় শিলদার সভামঞ্চ থেকে গুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস-উদ্বোধনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে নতুন কলেজ, হস্টেল, সেতু, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির জন্য ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ১০০টি বাজার তৈরি হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকার বিভিন্ন শিল্পীদের মাসে ৬-৭ হাজার টাকা মাসোহারা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য শিল্পীদের বিডিও অফিসে গিয়ে আবেদন জানাতে বলেন তিনি।
এ দিন শিলদার সভায় সিভিক পুলিশে নিয়োগের পরেও কাজ না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন কর্মপ্রার্থীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী জবাবে বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আটকে ছিল। এ বার কাজ পেয়ে যাবেন।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ছ’হাজার ক্লাবকে সাহায্য দেওয়া হবে। যারা এখনও সাহায্য পাননি সে রকম দু’হাজার ক্লাবকেও সাহায্য দেওয়া হবে।” পাশাপাশি জঙ্গলমহলে ফুটবল-সহ বিভিন্ন খেলাধুলার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বারবারই ফিরে এসেছে একটি প্রসঙ্গ, মাওবাদী মুক্ত জঙ্গলমহলে উন্নয়ন। উন্নয়ন দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে জঙ্গলমহলে শান্তিরক্ষা করতে চান তৃণমূল নেত্রী। সভার শেষলগ্নেও মুখ্যমন্ত্রীকে তাই বলতে শোনা যায়, “জঙ্গলমহল জিতকার (জিন্দাবাদ), বন্দুক নয় শান্তি চাই।”
|
জঙ্গলমহল জিতকার |
‘বন্দুক নয় ভাত চাই, জঙ্গলমহলে শান্তি চাই’ |
শিলদার সভা থেকে |
উদ্বোধন |
• ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র।
• শিলদা কলেজে ছাত্রাবাস।
• লালগড়ের বনপুকুরিয়া হস্টেল।
• রগড়া জল সরবরাহ প্রকল্প।
• দু’টি হাইস্কুলে মাল্টি জিম।
• স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।
• মোহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
• নাড়াজোল, আঁধারনয়নে হস্টেল।
• খাকুড়দা সেতু।
• পিংলায় রাজীব গাঁধী সেবাকেন্দ্র।
• খড়্গপুরে ইউনিক ক্লিয়ারেন্স সেন্টার।
• মোহনপুরে অসামরিক প্রতিরক্ষা কেন্দ্র। |
|
প্রশাসনিক সভায় চেনা মেজাজে।
|
শিলান্যাস |
• ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে ট্যুরিজম হাব।
• কাঁকড়াঝোরে প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র।
• চিল্কিগড়ে কনকদুর্গা মন্দির সংস্কার ও পরিকাঠামো নির্মাণ।
• রামেশ্বর মন্দির সংস্কার ও পরিকাঠামো নির্মাণ।
• এঁঠেলা-এড়গোদা ২৭ কিমি রাস্তা।
• শালবনিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল।
• হিজলি ফরেস্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।
• কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর-২, মোহনপুর, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে নতুন কলেজ।
• দাসপুর ১ ব্লকের কলমিজোড়, কেশপুরের আমড়াকুচিতে নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্প।
• চন্দ্রকোনা-ঘাটাল রোডে শিলাবতী নদীর উপরে দুই লেনের সেতু।
• সবং ও কেশপুরে কৃষক বাজার। |
|
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সভায়।
|
পূর্ব ঘোষিত প্রকল্পের হাল |
• নয়াগ্রামে সেতু২৫ শতাংশ হয়েছে।
• লালগড়ে সেতু২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে।
• নেতাই-লালগড় রাস্তা৪০ শতাংশ হয়েছে।
• রামগড়ে পলিটেকনিকভবন তৈরি হচ্ছে।
• লালগড়ে কলেজ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে।
• শালবনি, নয়াগ্রামে স্টেডিয়ামকাজ চলছে।
• ঘাঘরার সৌন্দর্যায়নে ৭ কোটি শুরু হয়নি।
• ভুলাভেদায় ট্রেকিং রুটকাজ শুরু হয়নি।
|
তথ্য: কিংশুক গুপ্ত |
|
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
পুরনো খবর: জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের চ্যালেঞ্জ মমতার |
|
|
|
|
|