ফোন তুলতেই উল্টো দিক থেকে ভেসে এল আর্তনাদ “এখানে কিচ্ছু নেই, সকলে বিনা চিকিৎসায় মরে যাচ্ছে।” ফোনের ও পারে আওয়ারানের বাসিন্দা রহমতউল্লাহ।
সময় যতই এগোচ্ছে, বালুচিস্তানে এ ভাবেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৩৫০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানাচ্ছে, ২৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধু কোয়েটায়। আবার অন্য সূত্রের খবর, আওয়ারান ও কেচ-এই তিনশোর ওপর দেহ মিলেছে। এখনও যে কত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের তলায়, সে কথা ভেবে আতঙ্কিত প্রশাসন, উৎকণ্ঠায় স্বজনেরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। নেই ডাক্তার, ওষুধ, মাথা গোঁজার ঠাঁই। |
গত কাল রাতটা খোলা আকাশের নীচেই কাঠিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এমনিতেই বালুচিস্তান পাকিস্তানের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম। ৭.৭ মাত্রার কম্পনের উৎসস্থল ছিল এই প্রদেশেরই আওয়ারান জেলা। আওয়ারান-সহ আরও পাঁচ জেলা কেচ, গ্বদর, পাঞ্জুর, চাঘি ও কুজদারের তিন লক্ষ মানুষ ঘরবাড়িহীন। সরকারি মুখপাত্র জান মুহাম্মদ বুলেদি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তাই উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই পারছেন না কর্মীরা। আহতদের যে করে হোক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপরেই এখন সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। “চিকিৎসা ব্যবস্থার মারাত্মক অভাব। হাসপাতালে জায়গা নেই। গুরুতর জখমদের হেলিকপ্টারে করে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে”, বললেন বুলেদি।
কিন্তু বুলেদির মুখে প্রশাসনের যেটুকুও উদ্যোগী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, হতাশ বাসিন্দাদের মুখে তার বিন্দুমাত্র লেশ নেই। |
আওয়ারানের রহমতউল্লাহ যেমন বললেন, “হাসপাতালে ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার নেই, পরিকাঠামো নেই। মাটির বাড়িগুলো ধসে গিয়েছে। বহু লোক হয়তো ধ্বংসস্তূপের নীচে বন্দি। আর সরকার, এখনও উদ্ধারকাজ শুরু করার কথা ভাবছে।”
স্বাস্থ্যকর্মী নাজার মুহাম্মদ নিজেই বললেন, “৭০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা করেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
আওয়ারানের এক প্রশাসনিক কর্তা জানালেন, ৯০ শতাংশ বাড়িই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের লোক। যদি কোনও কিছু মেলে। ৪৫ বছর বয়সী নূর আহমেদ বললেন, “সর্বস্ব হারিয়েছি, এমনকী খাবার পর্যন্ত চাপা পড়ে রয়েছে
কাদার নীচে। জল মুখে তোলা যাচ্ছে না। একেবারে কাদাগোলা।” সেনাবাহিনী বলছে ২০০ সেনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? বালুচিস্তানের ওই পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছতেই পারছে না সেনা।
হতাশা ঝরছে বাসিন্দাদের গলায়।
|