বিকেল সাড়ে চারটে। দিনভর কর্মব্যস্ততার জের তখনও চলছে করাচিতে। হঠাৎই পিলে কাঁপিয়ে কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি। শুরু হয়ে গেল আতঙ্কিত জনতার চিৎকার, হুড়োহুড়ি। টিভির পর্দায় ফুটে উঠল, রিখ্টার স্কেলে ৭.৮ তীব্রতার
ভূকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন বালুচিস্তান প্রদেশের আওয়ারান জেলার অন্তত ৪৫ জন বাসিন্দা। আহত অন্তত ১২। ভূকম্পের উৎসস্থল আওয়ারান থেকে ৬৯ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত এলাকা। এতই তীব্র সেই ভূকম্প যে তাতে কেঁপে উঠেছে বহু মাইল দূরের দিল্লি শহরও। |
তথ্য বলছে, বালুচিস্তান প্রদেশ বরাবরই ভূকম্পপ্রবণ। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলের এই ভূকম্প হয়তো ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে অতীতের অনেক ভূকম্পকেই হার মানিয়ে দেবে, আশঙ্কা প্রশাসনের। এমনিতেই ভৌগোলিক ভাবে বালুচিস্তান প্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ দুর্গম। তার উপর মরুভূমি ঢেকে রেখেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে বড়সড় কোনও ক্ষতি হলেও সেখানে উদ্ধারকাজ চালানো বেশ কঠিন। বালুচিস্তান প্রশাসন সূত্রে খবর, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ইতিমধ্যেই ২০০ সেনা পাঠানো হয়েছে। রয়েছেন মেডিক্যাল টিম এবং উদ্ধারকারী দলের লোকজনও। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির উপর দিয়ে উড়ছে সেনা চপার। বালুচিস্তান প্রশাসন আওয়ারানে ‘জরুরি অবস্থা’ও ঘোষণা করা করেছে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও যে ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে খুব তাড়াতাড়ি উদ্ধারকাজ চালানো বেশ কষ্টকর হবে, তা ভেবেই কপালে ভাঁজ বাড়ছে প্রশাসনের।
পাক আবহাওয়া দফতরের হিসেব মতো, মঙ্গলবার বিকেলের ভূকম্প ও তার তিনটি ভূকম্প পরবর্তী কম্পনের সম্মিলিত স্থায়িত্ব ছিল প্রায় মিনিটখানেক। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২৩ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর উৎপত্তিস্থল। বালুচিস্তানের আওয়ারান এলাকার ৬৯ কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকে এটির উৎপত্তি হলেও তাতে কেঁপে ওঠে করাচি, হায়দরাবাদ, লারকানা এবং সিন্ধু প্রদেশের অন্যান্য ছোট-বড় শহর। কম্পন অনুভূত হয় উৎপত্তিস্থল থেকে বহু দূরে লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদেও। তবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আওয়ারান ও তৎসংলগ্ন এলাকা। বালুচিস্তান বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আব্দুল কাদুস সংবাদমাধ্যমকে জানান, আওয়ারানের অন্তত ৩০ শতাংশ বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। এ দিন ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে দুটি নিথর দেহও উদ্ধার করা হয়। কিন্তু আরও কত জন চাপা পড়ে আছেন, তার হিসেব এখনই মিলছে না।
ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি, ভূকম্প বদলে দিয়েছে পাকিস্তানের মানচিত্রেও। গোয়াদর বন্দর থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো ফুট দূরে সমুদ্রে ৪০ ফুট উচ্চতার একটি ‘দ্বীপ’ জেগে উঠেছে এ দিন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভূকম্পের তীব্রতার জেরেই এই পরিবর্তন। |
|
আওয়ারান থেকে প্রায় ৬৯ কিলোমিটার দূরে উৎপত্তিস্থল তীব্রতা ছিল ৭.৮।
করাচি এবং বাকি পাক শহর (ছবিতে দেখানো) তো বটেই, কেঁপে ওঠে নয়াদিল্লিও। |
|