বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে ভারত কি কোনও কূটনৈতিক উপহার তাঁর হাতে তুলে দিতে পারবে?
ভারত-বাংলাদেশ আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের আগে আপাতত এই প্রশ্নটিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২৮ অক্টোবর বৈঠকে বসবেন দুই প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। ঘটনাচক্রে ওই দিনটিই জন্মদিন শেখ হাসিনার।
 এর আগেও একাধিক বার নিউ ইয়র্কে জন্মদিন কাটাতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। কারণ প্রত্যেক বছর ঠিক এই সময়টাতেই বসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন। ফলে বৈঠক এবং দৌড়োদৌড়ির মধ্যেই তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতার শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। আবার ছেলে-মেয়ে ও তাঁর বোনও এই দিন চলে আসেন কিছু সময় তাঁর সঙ্গে কাটাতে।
কিন্তু এ বার, এই জন্মদিনেই এমন একটি বৈঠকে বসতে হচ্ছে তাঁকে, যার রাজনৈতিক তাৎপর্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন। তার আগে সম্ভবত এটাই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে শেষ বৈঠক হাসিনার। গত
কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার জল-বণ্টন চুক্তি এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে আওয়ামি লিগ সরকার। কূটনীতিকরা বলছেন, এই দুই চুক্তি নিয়ে শেষ বারের মতো চেষ্টা করবেন হাসিনা। পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়গুলিও তুলে ধরা হবে ঢাকার পক্ষ থেকে।
ভারতও চাইছে শেখ হাসিনাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রতিশ্রুতি যাতে কোনও ভাবে রক্ষা করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে এখনও বিশ বাঁও জলে তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ।
কিন্তু তবুও একটা সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা চলছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব এবং কেন্দ্রীয় জলসম্পদ সচিবের সঙ্গে। আগামী ২৮ তারিখের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কোন কোন বিষয়গুলি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সে ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে এখনও সম্পূর্ণ নিরাশ হওয়ার মতো কোনও কারণ নেই। গত কয়েক মাস ধরে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের নেতৃত্বে সরকার ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চালিয়েছে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে। যে হেতু এই বিলটি সংসদে পাশ করাতে হলে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন, তাই সরকারের পক্ষে বিজেপি-কে পাশে পাওয়া একান্ত ভাবে জরুরি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি বা লালকৃষ্ণ আডবাণী এ বিলটি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও, শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান দলের অসম, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির শাখার আপত্তিতে। আসন্ন বৈঠকে হাসিনাকে আশ্বাস দেওয়া হবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাশ করাতে সব রকম চেষ্টা করা হবে।
হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সহজ সুদে ৫৪০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল ভারত। সেই ঋণের অর্থে সে দেশে ১৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কিছু প্রকল্প শেষও হয়ে গিয়েছে। মনমোহন-হাসিনা বৈঠকে বসে খতিয়ে দেখবেন এই সহযোগিতা কত দূর এগোলো। প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাওড়া-শাহবাজপুর সেকশনের পুনর্নির্মাণ, দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ, খুলনা-মংলা বন্দর রেললাইন নির্মাণ, ২৯০টি দ্বিতল ও ৮৮টি একতলা বাস ক্রয় ইত্যাদি।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা গত কয়েক বছর ধরেই বেড়েছে। অগস্ট মাসে শেষ হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ গ্রিড সংযোগের কাজ। ২০১০ সালে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন চুক্তি সই হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। পাশাপাশি বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্তে ৪টি এবং মেঘালয়ে আরও ১২টি সীমান্ত হাট চালু করার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। |