নিছকই দুর্ঘটনাবশত পুকুরে পড়ে মৃত্যু না খুন হয়েছেন কলেজছাত্র, ঘোরালো হল রহস্যের কুয়াশা। এই অবস্থায় রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দির পলিটেকনিক কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে বেলুড় থানার পুলিশ।
জলে ডুবে মৃত্যু নয়, সার্থক মজুমদার নামে ওই ছাত্রকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। ওই ছাত্রের বাবা গৌতম মজুমদার মঙ্গলবার বলেন, “ছেলের মাথায়, কানের পাশে, পিঠে, হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তা থেকে স্পষ্ট, মারধরের পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতেই ওকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর বক্তব্য, পা পিছলে জলে পড়ে সার্থকের মৃত্যু হতেই পারে না। কেন? যুক্তি হিসেবে গৌতমবাবু বলেন, “ও ভাল সাঁতার জানত। তাই জলে ডুবে ওর মৃত্যু হতে পারে না।”
সারদাপীঠে ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন বলেও গৌতমবাবুর দাবি। আর সার্থকের মামা তথা সারদাপীঠে ভাঙচুরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, “সার্থকের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। আমরা চাই, দোষীদের খুঁজে বার করতে সেখানকার মহারাজেরাও সাহায্য করুন।”
|
সার্থক মজুমদার। |
রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দির পলিটেকনিক কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে খেলার মাঠের লাগোয়া পুকুর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকেলে সার্থকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, নিছক জলে ডুবে মৃত্যু হয়ে থাকলে মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন এল কী ভাবে? এক পুলিশকর্তা বলেন, “চিকিৎসকের মতামত জানার পরেই বোঝা যাবে, সার্থকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন কী ভাবে এল।”
পুলিশি সূত্রের খবর, সার্থকের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ২১ তারিখ বিকেলে ঠিক কী ঘটেছিল, সেই সম্পর্কে ধারণা পেতে তদন্তকারীদের একটি দল এ দিন ওই কলেজে গিয়ে সার্থকের বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে। ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও। কলেজ-চত্বরের সিসিটিভি-র ফুটেজও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে যে-পুকুরে সার্থকের দেহ পাওয়া গিয়েছে, সে-দিকে কোনও সিসিটিভি নেই বলেই কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার বেলা দেড়টায় কলেজ ছুটির পরে দু’টি ফুটবল ম্যাচ ছিল। তার প্রথমটিতে যোগ দিয়েছিলেন সার্থক। ভাল খেলে জেতার পরে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দও করেছিলেন। সেই ছবি তোলেন কয়েক জন ছাত্র। বেলা আড়াইটেয় খেলা শেষ হওয়ার কিছু পরে সার্থককে পুকুরের ঘাটে বসে হাত-পা ধুতে দেখেছিলেন কয়েক জন ছাত্র এবং কলেজের কিছু কর্মী। কিন্তু তাঁরা সার্থককে পুকুরে স্নান করতে দেখেননি বলে পুলিশকে জানান।
সার্থকের বন্ধুরা জানান, দ্বিতীয় ফুটবল ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে পুকুরের ঘাটে সার্থকের চশমা পড়ে থাকতে দেখে সেটি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন এক পড়ুয়া। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পরে সার্থককে খুঁজে পাননি তিনি। ইতিমধ্যে কলেজের ঘর বন্ধ করতে গিয়ে কর্মীরা দেখেন, সার্থকের বই পড়ে আছে। কিন্তু কোথাও তাঁর খোঁজ মিলছে না।
এ দিন বিকেলে চুঁচুড়ার ফুলপুকুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সার্থকের বাড়ির লোকজন। সার্থকের মামা দেবাশিসবাবুর দাবি, শনিবার রাতে বেলুড় থানা থেকে বেরিয়ে তাঁরা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। তাঁর কথায়, “নিরাপত্তারক্ষীরা গেট খুলতে না-চাওয়ায় আমরা চেঁচামেচি করি। তার পরে পুলিশ চলে আসায় সেখান থেকে বেরিয়ে জি টি রোডের উপরে এসে দাঁড়াই।” দেবাশিসবাবু জানান, বাস ধারার জন্য তিনি এবং তাঁর ১২-১৩ জন সঙ্গী জি টি রোডের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই স্থানীয় কয়েক জন যুবক সার্থকের মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে চলে যান বেলুড় মঠের দিকে। তার কিছু পরেই এক পুলিশ অফিসার এসে তাঁদের থানায় নিয়ে যান। দেবাশিসবাবু-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাঁরা সকলেই জামিন পান।
|