গত কয়েক দিন ক্রমাগত বাউন্সার সামলানোর পর মঙ্গলবারের সন্ধে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এল। তবে সেই স্বস্তি সাময়িক কি না, তা দিন কয়েকের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভার উপর যে স্থগিতাদেশ ছিল, তা উঠে গেল। যার অর্থ হল, বুধবার ললিত মোদীকে নিয়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভা হওয়ায় আপাতত আর কোনও বাধা রইল না। এবং সেই বৈঠকেই সম্ভবত মোদীকে চির নির্বাসনে পাঠানো হবে।
কিন্তু এর পাশাপাশি একটা কাঁটাও থেকে যাচ্ছে শ্রীনির জন্য। তিনি কি ২৯ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক সভায় অংশ নিতে পারবেন? যে প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত পাওয়া যাবে আগামী শুক্রবার। যখন বিহার ক্রিকেট সংস্থার আনা মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। আবার এও শোনা যাচ্ছে, লড়াইয়ে ফিরে আসার একটা শেষ চেষ্টা করবেন মোদীও। তিনি নিজে কিছু না বললেও খবর হল, তাঁর আইনজীবীরা বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন দিল্লি হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে।
দিন কয়েক আগে বোর্ড বৈঠকের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ আদায় করে মোদী যেমন হুঙ্কার দিয়েছিলেন, এ দিন হাইকোর্টের রায়ের পর তিনি কিছুটা ব্যাকফুটে। সন্ধ্যায় টুইটারে লিখলেন, “আমি নির্বাসনে গেলাম কি না, বড় কথা নয়। ক্রিকেটের উপর মানুষের আস্থাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাক্ষস শ্রীনি ও তার মাফিয়াদের এগোতে দেওয়া যাবে না। এবং সেই চেষ্টা আমি চালিয়ে যাব।” রাতে ‘টাইমস নাও’ টিভি চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে আজীবন নির্বাসনের সম্ভাবনা কার্যত মেনে নিয়েও আক্রমণাত্মক মোদী বলেন, “হয়তো আমি নির্বাসিত হব। কিন্তু হতাশ হব না। আমার লড়াইটা চলবে। কিন্তু শ্রীনিবাসন ফের বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে পড়লে তার চেয়ে হতাশার আর কিছু হবে না। শ্রীনির উত্থানের পিছনে নিঃসন্দেহে আমার কিছু অবদান রয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আমি বসে বসে ওর ধ্বংসলীলা দেখব। আমি লড়ে যাব।”
এর পর সরাসরি শ্রীনিবাসন ও তাঁর অনুগামীদের আক্রমণ করে মোদী বলেন, “আমি কিন্তু লুকোইনি। বরাবরই মিডিয়ার সামনে এসেছি। শ্রীনিরাই লুকিয়ে। এখন শ্রীনিকে যারা সমর্থন করছে, তারা সবাই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।”
দিল্লি হাইকোর্টে মোদীকে চির নির্বাসনে পাঠানোর সভার উপর স্থগিতাদেশ নাকচ করাতে পারলেও যে এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন শ্রীনি, তা নয়। কারণ, আগামী রবিবার বোর্ডের বার্ষিক সভা আদৌ হবে কি না বা হলেও তাতে চেয়ারম্যানের আসনে তিনি বসতে পারবেন কি না, তা সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করে দেবে শুক্রবার। তবে আজ, বুধবারের সভায় শ্রীনিই সম্ভবত চেয়ারম্যান থাকছেন। যেখানে ৩১ জনের মধ্যে ২১ জনের ভোট মোদীর বিরুদ্ধে পড়লেই প্রাক্তন আইপিএল কমিশনারের চির নির্বাসনের সিদ্ধান্তের উপর সিলমোহর দিয়ে দিতে পারবেন শ্রীনি।
দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট গত সপ্তাহে মোদীর আবেদনের ভিত্তিতে বিশেষ সভার উপর স্থগিতাদেশ দিলেও সোমবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা মামলা করে দিল্লি হাইকোর্টে। মঙ্গলবার বিচারপতি ভি কে শালি বোর্ডের আইনজীবীদের বক্তব্য ও মোদীর পক্ষের সওয়াল শোনার পর জানিয়ে দেন, বুধবারের সভা হওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। বোর্ডের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, সভাটি যেহেতু চেন্নাইয়ে হওয়ার কথা, তাই দিল্লির ট্রায়াল কোর্টে এই নিয়ে কোনও শুনানি আইনানুগ নয়। মোদী শুধু বিশেষ সভার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া ও সচিব সঞ্জয় পটেলের নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই নিয়ে শুনানি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা কতটা প্রাসঙ্গিক, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
|