পাঁচ বছর আগে দেশের প্রথম ক্লাব হিসাবে এএফসি কাপের সেমিফাইনালে ওঠার পর স্বপ্ন দেখেছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হব। জেদ ছিল, এশিয়ার অন্য দেশগুলো পারলে ভারতের কোনও ক্লাব এই টুর্নামেন্টে কেন চ্যাম্পিয়ন হবে না?
আমার ডেম্পো টিমের তখন সোনার সময় চলছে। আই লিগ, ফেড কাপ-সহ দেশের সব টুর্নামেন্ট ওই সময় পকেটে পুরেই চলেছি আমরা। দেশের কোনও ক্লাব ছুঁতে পারছে না আমাদের। র্যান্টি, মহেশ, ক্লাইম্যাক্স, জোয়াকিম দারুণ টিম। স্বপ্ন না দেখার কোনও কারণ নেই। কিন্তু বুঝতে পারিনি লেবাননের টিমটা আমাদের ও ভাবে হারিয়ে দিয়ে যাবে! কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালের মধ্যে কত তফাত বুঝলাম সাফা এফসি-র বিরুদ্ধে বেইরুটে এবং হায়দরাবাদে মাঠে নেমে। এশীয় পর্যায়ে তখন সাফা অন্যতম সেরা টিম। ওদের কিছু সিডি জোগাড় করে দেখিয়েছিলাম ছেলেদের। বেইরুটে ওরা আমাদের এক গোলে হারিয়েছিল। আর এখানে আমরা খেয়েছিলাম চার গোল। পাসিং, ফিটনেস, ‘স্কোরিং-এবিলিটি’, সেট পিস সবেতেই ওরা এগিয়েছিল আমাদের থেকে। যার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব ছিল না। ইস্টবেঙ্গল যে আমার সময়ের ডেম্পোর করা রেকর্ড ছুঁয়েছে এতে আমি এতটুকু দুঃখিত নই। বরং আমি ওদের অভিনন্দন জানাচ্ছি এএফসি কাপের শেষ চারে যাওয়ার জন্য। এবং আমি এখনও বিশ্বাস করি ভারতের ক্লাব টিম এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিছুই অসম্ভব বলে মনেও করি না। কে ভেবেছিল ডেম্পো আই লিগে এমন রেকর্ড করবে যা ছোঁয়া যে কোনও ভারতীয় ক্লাবের পক্ষে কঠিন।
চিডিদের পরের খেলা যাদের সঙ্গে সেই কুয়েত এফসি যথেষ্ট শক্তিশালী দল। গত বারের চ্যাম্পিয়ন। ওরা প্রথম ম্যাচে মলদ্বীপের রেডিয়ান্টকে সাত গোল দিয়েছে। এমনিতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের টিমকে হারানো সহজ। কিন্তু উপসাগরীয় দেশের ক্লাবগুলো প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়। নানা দেশে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে তবে আসে এই টুর্নামেন্ট খেলতে। |
সামনে কুয়েতি দৈত্য |
• আল কুয়েত স্পোর্টস ক্লাব গত বারের এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন।
মোট দু’বার এএফসি কাপ জয়ী (২০০৯, ২০১২)।
• কুয়েতের প্রথম এশিয়ান খেতাব জয়ী ক্লাব। ১১ বার কুয়েতি প্রিমিয়ার লিগ জয়ী।
১১টা লিগ খেতাব ছাড়াও ২১টা কাপ (কুয়েত ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, ক্রাউন প্রিন্স কাপ) জয়ী। • এএফসি কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্বে মলদ্বীপের ক্লাব নিউ রেডিয়ান্টকে ৭-২ হারায়।
• সেরা বাজি তুরস্কের স্ট্রাইকার ইসাম জেমা। যিনি নিউ রেডিয়ান্টের বিরুদ্ধে চার গোল করেন। |
সেমিফাইনালের নির্ঘণ্ট |
প্রথম ম্যাচ ১
• অক্টোবর- কুয়েত এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল (কুয়েত)।
দ্বিতীয় ম্যাচ
• ২২ অক্টোবর- ইস্টবেঙ্গল বনাম কুয়েত এসসি (কলকাতা)। |
|
ট্রেভর মর্গ্যানের পর ফালোপা যে টিম হাতে পেয়েছে সেই ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট ব্যালান্সড। কিন্তু পাদাংয়ের বিরুদ্ধে ওদের খেলা আমার ভাল লাগেনি। মাঝমাঠ বলে কিছু ছিল না। টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ফালোপার লক্ষ্যটা কী? ম্যাচটা উনি জিততে চান? না, ড্র রেখে শেষ চারে যেতে চান? মেহতাবের মতো ফুটবলার কেন এত ডিফেন্সিভ খেলবে? চিডি, উগা, সুয়োকাদের খেলাও মন ভরাতে পারেনি। হয়তো পাদাংয়ের দর্শকদের সামনে সমস্যা হচ্ছিল। এই রকম খেললে কিন্তু সেমিফাইনালে জেতা অসম্ভব। আরও আক্রমণাত্মক খেলতে হবে, আরও অনেক পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়ে নামতে হবে। হাতে সময় খুব কম। তাই বলছি, মিস্টার ফালোপা, সামনে কিন্তু শক্ত লড়াই...। ছেলেদের প্রস্তুত করুন মানসিক ভাবে। আমি আশাবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাস কুয়েতের টিম প্রচণ্ড শক্তিশালী হলেও ইস্টবেঙ্গলের যা টিম তাতে লড়াই করা সম্ভব। হয়তো জেতাও। ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে যাচ্ছে এই স্বপ্ন আমি এখন থেকেই দেখছি। স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। |