কোনও হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কী ধরনের ওষুধ প্রয়োজন, তার খোঁজখবর না নিয়ে ওষুধ কেনা হচ্ছে। যার ফলে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে আর টাকা মিলছে না। এর ফলে জেলার ১৯টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি গ্রামীণ হাসপাতাল, দু’টি মহকুমা ও একটি সদর হাসপাতালে ‘জননী শিশু সুরক্ষা’ খাতে টান দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশের মতে, প্রয়োজন না থাকলেও আতিরিক্ত ওষুধ কিনতেই জেলার স্বাস্থ্য দফতরের ভাঁড়ার শেষ হয়েছে। ফলে সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে, ধার-বাকিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। শুধু মাত্র সিউড়ি সদর হাসপাতালে তিনটি ওষুধের দোকান থেকে প্রায় দশ লক্ষ টাকার কাছাকাছি ওষুধ কেনা হয়েছে ধার-বাকিতে। স্বাভাবিক ভাবে তাঁরা বকেয়া টাকা মেটানোর দাবি জানিয়েছেন। কয়েক মাস আগে টেন্ডারে পাওয়া দু’টি ওষুধ দোকানের মালিক সিউড়ি সদর হাসপাতাল সুপারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, শীঘ্রই বকেয়া টাকা না মেটালে ওই প্রকল্পে আর ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল সদর হাসপাতাল সুপার-সহ অন্য হাসপাতাল ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত ১২ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পে ওষুধ কেনার জন্য তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এই চিঠি পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা হতবাক। কারণ, কলকাতা স্বাস্থ্যভবন থেকে গত ২০১১ সালের ১৪ জুন নির্দেশ আসে, জননী শিশু সুরক্ষা প্রকল্পে প্রসূতিদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ প্রসবের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা ও অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হলে ১৬০০ টাকা খরচ করা যাবে। তার জন্য স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ‘স্লিপে’র মাধ্যমে ওষুধ কেনা যাবে এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেই ওষুধের দাম মেটাতে হবে। স্বাস্থ্যভবন থেকে ওই প্রকল্পে ওষুধ কেনা সংক্রান্ত একটি চিঠি সিউড়ি হাসপাতালে আসে গত বছর ১০ জানুয়ারি। তার মেমো নম্বর ৮/টিডিই/২৬এস-০২/২০১২। তাতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ওষুধ মজুত না থাকলে দোকান থেকে ওষুধ কেনা যাবে।
কিন্তু, সিউড়ির দুই ওষুধের দোকানের মালিক তাপস সাহা ও অব্দুল রকিব গত জুন মাস থেকে কোনও বকেয়া টাকা পাননি বলে দাবি করেছেন। ফলে তাঁরা আর ধার-বাকিতে ওষুধ দিতে পারবেন না জানিয়ে সদর হাসপাতালের সুপার অসিত বিশ্বাসকে চিঠি দিয়েছেন। ওই দুই দোকানের মালিকের দাবি, “তাঁরা প্রত্যেকে প্রায় চার লক্ষ টাকা করে পাবেন।” আর এক ওষুধ দোকেনের মালিক আব্দুল মতিনেরও দাবি, “আমি ২ লক্ষ টাকা পাব।” তিনি অবশ্য এখন আর ওষুধ সরবরাহ করেন না হাসপাতালে। কিন্তু তাপসবাবু ও আব্দুল রকিব ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়বেন বলে হাসপাতাল সুপার অসিতবাবু স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সবই জেলার সিএমওএইচকে জানানো হয়েছে।”
অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই প্রকল্পে ওষুধ কেনার জন্য আগাম অনুমতি নিতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেনেরিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন করছেন না বলে এই বিপত্তি। ১০ শতাংশ ওষুধ হাসপাতালে মজুত রাখা উচিৎ।” কিন্তু ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ওষুধের দোকানের বকেয়া টাকা মেটানো হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। |