ওষুধের তালিকা বানাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর
জননী সুরক্ষার খরচে বৈষম্য
কোথাও সরকারি ওষুধেই হাসপাতালের রোগীদের কাজ মিটে যাচ্ছে। সেখানে রোগী পিছু ওষুধের গড় খরচ ৫ টাকা। আবার কোনও কোনও হাসপাতালে রোগীপিছু ওষুধের খরচের বহর সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই বিপরীত চিত্রই ধরা পড়েছে। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের।
সর্বত্র সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা সত্ত্বেও কেন কিছু হাসপাতালে খরচ বেশি হচ্ছে, তার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সরকার অনুমোদিত ওষুধের পরিবর্তে অন্য ওষুধ লিখছেন। ফলে তা খোলাবাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। আর তাতেই খরচ বাড়ছে।
অভিযোগ, ওই সব ওষুধ সংস্থার সঙ্গে চিকিৎসকদের গোপন চুক্তি রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই চক্রটি ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে। সমস্ত হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠকও করা হয়েছে। বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খরচ কমাতে হবে। সেজন্য ওই সব চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যে তালিকা অনুযায়ী জেলা স্বাস্থ্য দফতর ওষুধ পাঠাবে।
যদিও এই কথা মানতে রাজি নন জেলা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গি। তাঁর কথায়, “কখনও ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি থাকে। তখন বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। আবার সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও দ্রুত আরোগ্যের কারণে নিজেদের সিদ্ধান্তে কখনও অন্য সংস্থার ওষুধ কিনতে পারেন। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” তাহলে কেন বৈঠক করে চিকিৎসকদের কাছ থেকে ওষুধের তালিকা চাওয়া হল? সৌম্যশঙ্করবাবুর সাফাই, “যে ওষুধে বেশি কাজ হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, সেগুলি গ্রামীণ এলাকায় তো পাওয়া নাও যেতে পারে। তাই তা জেলা থেকে পাঠানোর জন্যই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের এই ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ মানতে রাজি নন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র প্রসবকালীন জটিলতার কারণে বছরে দেশে ৬৭ হাজার মহিলার মৃত্যু হয়। ওই একই কারণে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষ শিশুরও মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ৯ লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয় জন্মের চার সপ্তাহের মধ্যে। জন্মের প্রথম সপ্তাহেই মৃত্যু হয় প্রায় ৭ লক্ষ শিশুর। অর্থাৎ মোট জন্মগ্রহণকারী শিশুর ৭৫ শতাংশ। ২০১১ সালের ১ জুন প্রসবকালে শিশু ও মায়ের মৃত্যু রোধ করতে জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পে আয়ের কোনও উর্ধসীমা নেই। যে কোনও মা ও শিশুই এই সুবিধে পেতে পারেন। বাড়ি থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা থেকে প্রসবের (সিজার হলেও) জন্য যত রকমের পরীক্ষা প্রয়োজন সবই নিখরচায় করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকী যদি রোগীকে কোথাও ‘রেফার’ করার দরকার হয় তাও সরকারি খরচেই পাঠানো হয়।
মায়েদের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রসব হলে ৪৮ ঘন্টা ও সিজার হলে ৭ দিন বা তারও বেশি চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়। নবজাতকের ক্ষেত্রে ৩০ দিন নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২ বছর চললেও এই পরিষেবার কথা এখনও সবাই জানে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, কোনও একটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এলাকায় যত পরিমাণ প্রসব হচ্ছে তার পুরোটাই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হচ্ছে তা নয়। আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের ক্ষেত্রেও কিছু ক্ষেত্রে খরচ বেশি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ধরা যাক মেদিনীপুর সদর ব্লকে চলতি আর্থিক বছরে ২২৯ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। এজন্য সরকারি ওষুধ ও পরীক্ষার বাইরে খরচ হয়েছে মাত্র ১২২৩ টাকা। অর্থাৎ রোগী প্রতি গড় খরচ ৫ টাকা। দাসপুর ২, ঘাটাল সদর ব্লক হাসপাতালে রোগী পিছু গড় খরচ ৬৫ টাকা ও ৪৯ টাকা। বেশিরভাগ হাসপাতালেই রোগী পিছু খরচ ৫০ টাকা থেকে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে নয়াগ্রামে খরচ হয়েছে ৫৭৭ টাকা, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ৪৬৮ টাকা ও ডেবরাতে ৪০৬ টাকা! খরচের এই বৈষম্য দূর করতেই এবার উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসকদের কাছ থেকে পছন্দের ওষুদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার জেলা থেকেই সরকারি নিয়ম মেনে সেই ওষুধ কিনে পাঠানো হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তারই সঙ্গে এই পরিষেবা যাতে সকলেই পান সে বিষয়ে প্রচার চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.