শো-কজের খাঁড়া ঝুলছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সোমবারও দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। বিঁধলেন দলের দুই মন্ত্রীকে। এই শৃঙ্খলাভঙ্গ বরদাস্ত করা হবে না জানিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দলের বিক্ষুব্ধ তিন সাংসদকে শো-কজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত তাপস পাল, শতাব্দী রায় বা কুণাল, কেউই সেই চিঠি পাননি বলে দাবি করেছেন। তবে কুণালরা যে সভায় বিদ্রোহী হয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত থাকার খেসারত দিয়ে এ দিনই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদের পদ খুইয়েছেন ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্চিতা মণ্ডল।
কুণাল এ দিন গিয়েছিলেন ২১ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিশনে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ও কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। কুণাল বলেন, “মণীশ গুপ্ত কী করছেন? একুশে জুলাই বুদ্ধবাবু, বিমানবাবু গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর উনি ঘরে চুপ করে বসেছিলেন। সব শেষ করে দিয়ে এখন শিল্প করছেন মণীশবাবু।” আর মলয়বাবুর বিরুদ্ধে কুণালের অভিযোগ, তাঁর সম্পাদিত সংবাদপত্র ও চ্যানেলের কর্মীদের হুমকি দেওয়ার। কুণালের কথায়, “মলয়বাবু আমার সহকর্মীদের বলছেন, আমি দলবিরোধী কাজ করছি। আমাদের সংবাদপত্র ও চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তার মানে এতগুলো ছেলেকে ওঁরা কর্মচ্যুত করতে চাইছেন!” মলয়বাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কেন ওঁদের হুমকি দেব! কুণালকেই আমি কোনও দিন ফোন করিনি।”
নাম না-করে এ দিন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন কুণাল। এর আগে সংসদের সেন্ট্রাল হলে আলোচনায় এবং রবিবার দলীয় বৈঠকে কুণালকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন শুভেন্দু। কুণাল এ দিন বলেন, “এক জন বার বার আমার ইস্তফা দাবি করছেন। নিজেকে আড়াল করতে এই সব করছেন।”
কুণাল লাগাতার ভাবে বিষোদ্গার চালিয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আহ্বায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলের এক প্রথম সারির নেতা বলেন, “দুই মন্ত্রী অভিযোগ জানালে দলে আলোচনা করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কিন্তু শো-কজের চিঠি ধরাতে দেরির কারণেই কুণাল সমালোচনার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন বলে তৃণমূলের একাংশে গুঞ্জন। তাকে আমল না দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “কোনও ভাবেই জোর পাওয়ার কিছু নেই। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, দলীয় শৃঙ্খলা যাঁরা ভাঙবেন দল তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবেই।” দলের প্রথম সারির নেতাদের অধিকাংশই মনে করেন, দল কুণালকে ছেড়ে কথা বলবে না। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন মহাকরণে বলেন, “আমাদের দলে কারা মিরজাফর তা জেনে গিয়েছি। আমাদের কর্মীরা অশান্ত হতে শুরু করেছেন। দলকে কেউ ইট-পাটকেল মারলে আমরা ছেড়ে দেব না।”
তবে এই আবহের মধ্যেই এ দিন সঞ্চিতা মণ্ডলকে পুরসভার পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ দফতরের মেয়র পারিষদের পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় সূত্রের খবর, গত শুক্রবার মধ্য কলকাতার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে যে অনুষ্ঠানে গিয়ে কুণালরা দলবিরোধী বক্তৃতা করেছিলেন, সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সঞ্চিতা। তারই শাস্তি হিসাবে সঞ্চিতাকে সরানো হয়েছে। এর আগেও সঞ্চিতাদেবীকে তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের স্ত্রী তথা বিদ্রোহী বিধায়ক শিখা মিত্রের সঙ্গে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। তা নিয়ে তাঁকে সতর্কও করা হয়েছিল। তার পরেও ওই অনুষ্ঠানে তাঁর হাজির থাকাটা মোটেই মেনে নিতে পারেনি তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরসভার এক মেয়র পারিষদের কথায়, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ দিন জানা গেলেও গত শনিবার থেকেই সঞ্চিতাকে সরানোর ব্যাপারে সলতে পাকানোর কাজ চলছিল। মূলত মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই এই রদবদল।” এ প্রসঙ্গে সঞ্চিতাদেবী বলেন, “আজ (সোমবার) পুরসভায় যাইনি। দফতর থেকেই খবরটা পেয়েছি।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ, মঙ্গলবার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন মেয়র পারিষদ হিসেবে শপথ নেবেন।
কুণালের পাশাপাশি শিখাদেবীও এ দিন তৃণমূল-সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “জনগণের করের টাকায় সারদার আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কেন হবে? এটা নিয়ে জনস্বার্থে মামলা হওয়া উচিত।”
বিধানসভায় তাঁর আসন ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। স্পিকার বলেন, “আগামী অধিবেশনের আগে আসন বদল করা হবে।” শিখাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “নোংরামি হচ্ছে। সাসপেন্ড করার চিঠি কোথায়? মানুষ সব দেখছে, শুনছে। এক মাঘে শীত যায় না।”
|