শো-কজ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সেই চিঠি পাঠানোর আগেই বিক্ষুব্ধ সাংসদ কুণাল ঘোষকে বহিষ্কারের দাবি উঠল তৃণমূলের অন্দরে। দল সূত্রের খবর, অন্য দুই বিক্ষুব্ধ সাংসদ তাপস পাল এবং শতাব্দী রায়কে এ যাত্রা সতর্ক করেই রেহাই দেওয়া হতে পারে। কিন্তু কুণালের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আগামী সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য পরিষদের যে বর্ধিত সভা হবে, তার প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন দলীয় নেতারা। সেই সভায় শৃঙ্খলারক্ষার প্রশ্নে অনেকেই কুণালদের অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে সরব হন। তৃণমূল সূত্রের খবর, ডেরেক ও’ব্রায়েন, চৌধুরী মোহন জাটুয়ার মতো সাংসদ, মদন মিত্র, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো রাজ্যের মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতো নেতারা স্পষ্ট জানান, দল করতে গেলে শৃঙ্খলা মেনে চলতেই হবে। দলের মহাসচিব তথা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির আহ্বায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে চরম শিক্ষা দেওয়া উচিত। |
সাংবাদিকদের মুখোমুখি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিনের সভায় লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথমে শৃঙ্খলারক্ষার প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করেন, দলের কিছু সাংসদের আচরণে চঞ্চলতা দেখা যাচ্ছে। বিধায়ক তাপস রায়, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলেন। শুভেন্দু দাবি করেন, শুধু চঞ্চলতা বলে ছেড়ে দিলে হবে না, কুণালকে দল থেকে তাড়াতে হবে। বৈঠকের পরে পার্থবাবু বলেন,“আমরা যে নথিপত্র (বক্তৃতার সিডি) পেয়েছি তার ভিত্তিতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তিন সাংসদকে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, তাঁদের বক্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এবং দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করেছে।”
শো-কজের চিঠি তৈরির প্রক্রিয়া শেষ জানিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা এ দিন বলেন, তাপস-শতাব্দী এবং কুণালের বিষয়টি আলাদা আলাদা ভাবে দেখা হচ্ছে। তাপস-শতাব্দীর কাছে মূলত জানতে চাওয়া হবে, সাসপেন্ড হওয়া দলীয় বিধায়ক শিখা মিত্রের ডাকে কেন তাঁরা সে দিন মধ্য কলকাতার ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন এবং দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন। তবে যে হেতু ওই দুই সাংসদের সমালোচনার সুর অনেক নরম ছিল এবং ওই ঘটনার পর থেকে তাঁরা সংবাদমাধ্যমে বিশেষ মুখ খোলেননি, সে হেতু তাঁদের সম্পর্কে নরম মনোভাব নেওয়া হতে পারে বলেই ওই নেতার ধারণা।
কিন্তু কুণাল সম্পর্কে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি। তা ছাড়া, ওই দিনের বিষোদ্গারের পরে অনুশোচনা দূরে থাক, সংবাদমাধ্যমে তিনি একের পর এক দলবিরোধী কথা বলে চলেছেন। রবিবারও বিধাননগর কমিশনারেটে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে বেরিয়ে কুণালবাবু বলেন, “কিছু কিছু বিষয় আছে যা প্রশাসনিক তদন্তে বললে দল অস্বস্তিতে পড়তে পারে। দলের কথা আমি বাইরে বলতে চাই না। আমি দলকে অনুরোধ করছি, দলীয় তদন্ত কমিশন তৈরি হোক। সেখানে মন খুলে কিছু কথা বলতে পারব।” সারদা-কাণ্ড নিয়ে বোমা ফাটানোর পরোক্ষ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে
কুণাল এ-ও বলেন, “আমাকে যদি পুলিশ গ্রেফতার করে তবে আমি অনুরোধ করব, তার আগে আমাকে যেন সাংবাদিক সম্মেলন করার অনুমতি দেওয়া হয়। কারণ আমার কিছু কথা বলার আছে।”
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, এই কারণেই কুণালকে যে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, তা তাপস-শতাব্দীর থেকে আলাদা এবং অনেক বড়ও। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে, দুর্গাপুরের অন্ডালে ‘এরোট্রোপলিস’কে জমি দেওয়ার সমালোচনা করে সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ টেনে কেন তিনি সরকারের বিরুদ্ধে দু’রকম নীতি নিয়ে চলার অভিযোগ তুলেছেন? সাংসদ হয়ে কী ভাবে তিনি দলের সরকারের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য সমালোচনা করেন? সারদা-কাণ্ড নিয়ে তাঁর কাঁধে বন্দুক রেখে দলের অন্য নেতারা পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে যে অভিযোগ কুণাল করেছেন, তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে শো-কজের চিঠিতে। ব্যাখ্যা চাওয়া হবে অনিচ্ছুক সোমেন মিত্রকে তিনি তৃণমূলে নিয়ে এসেছিলেন বলে যে দাবি করেছেন, সে সম্পর্কেও। এ ছাড়া, দলে পুরনো নেতাদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে না বলেও সে দিন অভিযোগ করেছিলেন কুণাল। দলীয় নেতৃত্বের মতে, এই মন্তব্য করে অন্তর্দ্বন্দ্বকে উস্কানি দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে কুণালের বক্তব্য জানতে চাইবে দল।
দু’এক দিনের মধ্যেই তিন সাংসদের কাছে শো-কজের চিঠি চলে যাবে বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। সেই চিঠির উত্তর দেওয়ার সময়সীমা নিয়ে পার্থবাবু বলেন, “চিঠি প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যেই উত্তর দিতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক না-হলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” মুকুলবাবু এ দিন ফের বলেন, “দলের নির্দেশ না-মেনে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, দলও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” |