মওকা বুঝে নিঃশব্দে ভাড়া বাড়াল অটো

জ্বালানি দিন দিন মহার্ঘ হচ্ছে। উত্তরোত্তর বাড়ছে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। তবু সাধারণ মানুষের উপরে চাপ বাড়বে এই যুক্তি দেখিয়ে রাজ্য সরকার বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়াতে নারাজ। অন্য দিকে সরকারি নীতি-নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহানগরের বিভিন্ন রুটের অটোরিকশা খেয়াল-খুশিমতো ভাড়া বাড়িয়ে চলেছে। এই বৈপরীত্য ঘিরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে নাজেহাল যাত্রীমহলে। যার সন্তোষজনক কোনও ব্যাখ্যা প্রশাসনের তরফে মেলেনি।
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই অটো-রাজে লাগাম পরানোর লক্ষ্যে কোমর বেঁধেছিল। তৈরি হয়েছিল অটো-কমিটি। কিন্তু পরবর্তী দু’বছরে কার্যকর ব্যবস্থা কিছু চোখে তো পড়েইনি, উল্টে অটোরিকশার বেপরোয়া ভাবগতিক আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। যার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত, বাস ধর্মঘটের মওকায় ভাড়া মর্জিমাফিক বাড়িয়ে নেওয়া।
কী রকম?
গত বৃহস্পতিবার আটচল্লিশ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছিল বাস ও মিনিবাস-মালিকদের দু’টি সংগঠন। তার দু’দিন আগে, অর্থাৎ গত মঙ্গলবার ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। বস্তুত সে দিন থেকেই রাস্তায় বেসরকারি বাস উধাও হয়ে যায়। আর সেই সুযোগে কলকাতা ও শহরতলির অন্তত ১৬টি রুটের অটোচালকেরা মঙ্গলবার থেকেই ভাড়া কোথাও এক টাকা, কোথাও বা পাঁচ টাকাও বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর।
আটচল্লিশ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট দশ ঘণ্টায় উঠে গেলেও বেড়ে যাওয়া অটোভাড়া কিন্তু কমেনি। উপরন্তু নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা, পুজোর মুখে ফের এক বার অটোর ভাড়া বাড়তে পারে, কেননা ‘বোনাস’ হিসেবে ফি বছর তেমনটাই হয়ে থাকে। এবং অভিযোগ, অনেক রুটে পুজোর পরে ওই বর্ধিত ভাড়াই স্থায়ী হয়ে যায়।
সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় অটোভাড়ায় ‘জোয়ার’ আসার সম্ভাবনা দেখছেন যাত্রীরা। এ দিকে ভাড়া না-বাড়ায় লোকসানের ভয়ে বহু বাস বসে গিয়েছে। বাসের অভাবে রিকশা-অটো-ট্যাক্সি-মেট্রো ইত্যাদিতে চড়ে, যাত্রাপথ ভেঙে ভেঙে লোকজনকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। তাতে খরচ যেমন বাড়ছে, তেমন ঝক্কিও পোয়াতে হচ্ছে বিস্তর। অনেকে দেখছেন, মালিকদের দাবিমতো বাড়তি বাসভাড়া গুনতে হলেও পকেটে সাশ্রয় হতো। তাই ওঁরা এখনবলছেন, “বাসের ভাড়া বাড়ানোই তো ভাল ছিল! রাস্তায় বাস থাকত, শান্তিতে যাতায়াত করা যেত, খরচা কিছু হলেও বাঁচত।”
এমতাবস্থায় অটোর মাসুল আচমকা চড়ে যাওয়ায় নিত্যযাত্রীরা প্রমাদ গুনছেন। বাস ও অটো সম্পর্কে সরকারের ‘দ্বিমুখী নীতি’ নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁদের একাংশ। পরিবহণ দফতরের কী বক্তব্য?
শহরের বিবিধ অটো-রুটের ভাড়া যে তাঁদের ‘অজ্ঞাতসারে’ বেড়ে গিয়েছে, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র তা অস্বীকার করেননি। “এমন কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা দেখছি। পুলিশকে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে যেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” রবিবার বলেছেন মদনবাবু। এক পরিবহণ-কর্তার অবশ্য পরিষ্কার স্বীকারোক্তি, “অটোভাড়ায় আমাদের কার্যত কোনও লাগাম নেই। বিভিন্ন রুটের শ্রমিক সংগঠনই ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করে। বাম আমলে তা-ই হতো, এখনও হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে হরেক অটো-রুটের ইউনিয়নও রাজনৈতিক রং বদলে ফেলেছে। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-কে হটিয়ে অধিকাংশ ইউনিয়নে এখন তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি’র আধিপত্য। মর্জিমাফিক ভাড়াবৃদ্ধির জন্য সিটু তাদের দিকেই আঙুল তুলেছে। “বলা হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ায় ভাড়া বেড়েছে। অথচ অটোর এলপিজি যখন ৪৭ থেকে ৫৩ টাকা হল, তখন ভাড়া বাড়ল না! গ্যাসের দাম কমে এখন ৫০, কিন্তু ভাড়া বাড়ল এখনই!” মন্তব্য এক সিটু নেতার। তাঁর দাবি, “ভাড়াবৃদ্ধির যুক্তিগ্রাহ্য কোনও কারণ তৃণমূল ইউনিয়ন দেখাতে পারছে না। অটো-ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে একমাত্র সরকার। তাই সরকারেরই উচিত অবিলম্বে উদ্যোগী হওয়া।”
অটো ইউনিয়নগুলো কী বলছে?
মহানগরের বিভিন্ন রুটের অটোরিকশা ইউনিয়নের নেতারা এ প্রসঙ্গে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এবং আইএনটিটিইউসি’র রাজ্য নেত্রী দোলা সেন অটো-নৈরাজ্যের যাবতীয় দায় চাপিয়েছেন পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ঘাড়েই। এ দিন তিনি বলেন, “চৌত্রিশ বছরের সব পাপ দু’বছর চার মাসে ধোয়া যায় না। আগের জমানায় বিশেষত পরিবহণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির রাজত্ব তৈরি হয়েছিল। অটোয় সবচেয়ে বেশি। আমাদের সরকার পরিবহণের সর্বত্র নিয়মের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।” সরকারের সমর্থনকারী শক্তি হিসেবে তাঁদের ট্রেড ইউনিয়নও এ ব্যাপারে খুবই সচেষ্ট বলে দাবি করেছেন দোলাদেবী।
তা হলে অটো আগের মতোই যখন-তখন, যত ইচ্ছে ভাড়া বাড়াচ্ছে কী ভাবে?
দোলাদেবীর যুক্তি, “এই ছবিটা সার্বিক নয়। অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ করছি। চার-পাঁচ মাসের মধ্যে পুরো অটো-ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছি।”
অটো চলাচলকে ‘শৃঙ্খলায় বাঁধার’ লক্ষ্যে নতুন সরকারের ক্ষমতা দখলের এক বছরের মাথায় একটি অটো-কমিটি গড়েছিল পরিবহণ দফতর। সেটা ২০১২-র এপ্রিল। দু’মাস বাদে, গত বছরের জুনে কমিটি সরকারকে রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টের অন্যতম সুপারিশ ছিল, শহর জুড়ে অটোভাড়ায় সামঞ্জস্য আনা হোক। কমিটি পরামর্শ দিয়েছিল, প্রথম তিন কিলোমিটার পর্যন্ত অটোর ভাড়া হোক পাঁচ টাকা। পরবর্তী প্রতি দু’কিলোমিটার অন্তর ভাড়া বাড়ুক দু’টাকা করে।
কিন্তু সেই রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করেনি সরকার। ফলে অটো-পথে নৈরাজ্য চলছেই। নিত্যযাত্রীরাও ধরে নিচ্ছেন, ভাড়ায় যথেচ্ছাচার সয়ে যাতায়াত করাটাই ভবিতব্য।
মর্জির মাসুল
ছিল* এখন**
• আহিরীটোলা লঞ্চঘাট-উল্টোডাঙা ১০ ১২
• শোভাবাজার লঞ্চঘাট-উল্টোডাঙা ১০ ১১
• শোভাবাজার মেট্রো-উল্টোডাঙা ১০
• জোড়াবাগান-বিধাননগর ১০
• বড়বাজার-শিয়ালদহ ১০ ১৫
• বি কে পাল-কাশীপুর ৪বি স্ট্যান্ড ১০
• রুবি মোড়-গড়িয়াহাট ১০
• বেহালা কালীমন্দির-গড়াগাছা
• বেহালা থানা-পর্ণশ্রী
• বেহালা চৌরাস্তা-ডাকঘর ১২ ১৪
• জয়শ্রী-বেহালা ট্রামডিপো
• টালিগঞ্জ-রাসবিহারী
• টালিগঞ্জ-হাজরা ১০
• উল্টোডাঙা-সল্টলেক ১৩ নম্বর ১০
• উল্টোডাঙা-করুণাময়ী ১০ ১২
• উল্টোডাঙা-সিটি সেন্টার ১ ১০
* সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত
** মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে
অঙ্ক টাকায়
সূত্র: পরিবহণ দফতর


পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.