ক্রমাগত প্রচারেই সাড়া পাচ্ছে সাধনের দফতর
রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ শিবানী দেবী। প্রায় চার মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। তাঁর স্বামী বিষয়টি জানিয়েছিলেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষকে। সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবে কোনও সাহায্য না-পেয়ে শিবানীদেবীর স্বামী ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের জেলা ফোরামে। তাঁর মূল অভিযোগ ছিল, ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে। আর সেই সিলিন্ডার থেকেই আগুন লেগে তাঁর স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের তদন্তে অভিযোগ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারি ও মানসিক যন্ত্রণা এবং মামলার খরচ বাবদ ১৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ওই সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ফোরাম। এ ছাড়াও, সার্বিক ভাবে উপভোক্তাদের কল্যাণের জন্য ওই সংস্থাকে এক লক্ষ টাকা রাজ্য ক্রেতা কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ক্রেতা-সুরক্ষা
সাল মামলা
• ২০১১
• ২০১৩ মার্চ
৫,৬২৪
১০,৪৪০

হেল্পলাইনে নথিভুক্ত ফোন কল
সাল সংখ্যা
• ২৪ ডিসেম্বর, ২০১১- মার্চ,২০১২
• এপ্রিল, ২০১২- মার্চ, ২০১৩
১১৭৬
৭৯২৩
উলুবেড়িয়ার শিবানীই নন, বর্ধমানের নতুনগঞ্জের বাসিন্দা নমিতা চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে চিকিৎসক ও স্থানীয় একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের জেলা ফোরামে। মামলার রায়ের পরে নমিতাদেবীকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে অভিযুক্তদের। আবার হাওড়ার বালির বাসিন্দা মহম্মদ এস আনসারি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে লরি কিনেছিলেন। কিন্তু টাকা সময়মতো জমা দিতে না-পারায় ভাড়াটে কিছু গুন্ডার সাহায্যে লরিটি জোর করে নিয়ে নেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, আনসারির অভিযোগ নিয়ে মামলা হয় হাওড়া জেলা ফোরামে। মামলার রায়ে স্পষ্ট বলা হয়, কিস্তির টাকা সময়মতো না দিতে পারলেও আনসারিকে টাকা শোধের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল ওই ব্যাঙ্কের। অন্যায় ও বেআইনি ভাবে লরিটি নেওয়া হয়েছে বলে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়েছে ব্যাঙ্ককে।
এই সমস্ত দৃষ্টান্ত সামনে রেখে রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “উপভোক্তা বা ক্রেতাদের প্রতারণা করলে নার্সিং হোমই হোক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা বিমা কোম্পানি, প্রোমোটার যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই হোক, কেউ রেহাই পাবে না। অভিযোগ নিয়ে আমাদের রাজ্য আয়োগ বা জেলা ফোরামে মামলা হবে। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থাকে।” ক্ষতিপূরণ না দিলে কী হয়? মন্ত্রী বলেন, “অভিযুক্তের জেল-জরিমানা হবে। এমনকী, তার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।”
সাধনবাবুর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১-র মে থেকে ২০১২-র মার্চ মাসের মধ্যে জেলা ফোরামগুলিতে ২,৮২৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১২-র এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭০% মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। রাজ্য আয়োগের মামলা নিষ্পত্তি ৩২% বৃদ্ধি হয়েছে। সাধনবাবুর মন্তব্য, “মামলা রুজু এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ খতিয়ে দেখলে স্পষ্ট, মানুষ আমাদের দফতরের উপরে আস্থা রাখছেন।”
মানুষের আস্থা অর্জন তাঁরা কী ভাবে করেছেন? কারণ, বাম আমলেও সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রচার তো বটেই, টোল-ফ্রি হেল্পলাইন ছিল ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের। এখন তা হলে সাফল্যের রহস্য কী? মন্ত্রী জানান, ক্রমাগত প্রচার। তার ফলে মানুষ সমস্যা নিয়ে আগের চেয়ে দফতরে অনেক বেশি যোগাযোগ করছে। মন্ত্রীর কথায়, “আগের তুলনায় এখন আমাদের হেল্পলাইনে নথিভুক্ত কল অনেক বেড়েছে।”
বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই দফতরে দ্রুত ই-গভর্ন্যান্সের জন্য সংশোধিত ও পুনর্বিন্যস্ত বিভাগীয় ওয়েবসাইট চালু করায় মানুষ সহজে যোগাযোগ করতে পারছে বলেই তাঁর দফতর ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে বলে সাধনবাবুর মত। তার উপরে, বিপুল সংখ্যায় কলকাতা ও জেলার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দফতরের নানা কর্মসূচি হয়েছে। ক্রেতা-সুরক্ষা বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “২০১১-র মে মাস থেকে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত সেমিনার, বসে আঁকো প্রতিযোগিতার মতো জনসচেতনতা কর্মসূচি ছিল প্রায় ১৩ হাজার। ২০১২-১৩’য় তা বেড়ে ১৫ হাজারের বেশি হয়েছে।” সাধনবাবু মনে করেন, বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ক্রেতা-সুরক্ষা বিষয়কে অন্তুর্ভুক্ত করলে আরও সুফল মিলবে। এই বিষয়ে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.