ভোট বয়কটে তুলকালাম
শুরু সিপিএমে
চার দশক পরে ভোট বয়কটের রাজনীতিতে ফিরল সিপিএম। আর তা নিয়েই তুলকালাম শুরু হয়েছে দলে। বিশেষ করে বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের সংঘাত প্রবল আকার নিয়েছে। সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, বর্ধমানের থেকেও বেশি সন্ত্রাস হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে পর্যন্ত সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পানিহাটি থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়নি। তা হলে বর্ধমানে চরম পদক্ষেপ করতে হল কেন? এই অবস্থায় সিপিএম পলিটব্যুরো ঠিক করেছে, কেন বর্ধমান এবং পানিহাটিতে ভোট বয়কট করতে হল, তা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
১৯৭২ সালে বিধানসভা ভোটের দিন তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস এবং বুথ দখলের অভিযোগ তুলে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সিপিএম। সে বার দলের ১৪ জন প্রার্থী ভোটে জিতলেও পরের পাঁচ বছর কেউ বিধানসভামুখো হননি। এর পরের ভোটে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। আর সেই থেকে তারা ইতিবাচক রাজনীতির পথেই হেঁটেছে। সিপিএমের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বাম জমানায় অনেক সময়ই মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাই বলে ভোট বয়কট করা হয়নি।
এখন প্রশ্ন হল, বর্ধমানে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন কে? চাকদহেই বা একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন? সেটা কি বর্ধমানের সিদ্ধান্তের প্রভাব?
বর্ধমান জেলার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন। প্রশ্ন উঠছে, ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত কি তাঁরই নেওয়া? যা জেলা সম্পাদক অমল হালদার মেনে নিয়েছেন। না কি, এটা আসলে অমলবাবুর সিদ্ধান্ত, যা মেনে নিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মদন ঘোষ? আর নিরুপমবাবু জেলা নেতাদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাননি বলেই সেই সিদ্ধান্তকে নীরবে সমর্থন করেছেন? এবং জেলাটা যে হেতু বর্ধমান, রাজ্য সিপিএমে যার প্রবল প্রভাব, সে হেতু রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও অতি সক্রিয় হয়ে জেলা নেতাদের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেননি?
সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, পুরভোটের আগে প্রায় এক মাস ধরে বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের সংঘাত চলেছে। এমনকী নিরুপমবাবুর পরিবারের বহু সদস্য, যাঁরা সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত, তাঁরাও নানা ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আলিমুদ্দিনের কাছে। কিন্তু সন্ত্রাসই ভোট বয়কটের একমাত্র কারণ কিনা, এবং সেই সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, তা তদন্ত করে দেখবে দল।
তবে সিপিএম পলিটব্যুরো নেতাদের কাছে একটা জিনিস স্পষ্ট। সেটা হল, জেলায় জেলায় দলের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পঞ্চায়েত ভোটেও সিপিএম-কে বয়কটের পথে হাঁটতে হয়নি। কিন্তু তাতে আরও এক দফা বিপর্যয়ের পরে পুরভোটে দলের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এ বার বুথে বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়নি। বিনয় চৌধুরী, সরোজ মুখোপাধ্যায়ের জেলা বর্ধমান এবং অনিল বিশ্বাসের জেলা নদিয়ায় দলের এই অবস্থা বেদনাদায়ক, বলছেন, দিল্লির সিপিএম নেতারা।
গত বিধানসভা ভোট থেকেই বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব একের পর এক ভুল রিপোর্ট দিচ্ছেন বলেও আলিমুদ্দিনের অভিযোগ। যা সাংগঠনিক শক্তির অবক্ষয়ের নজির বলেই মনে করা হচ্ছে। একদা লাল দুর্গে দলের হাল কেন এমন হলো, তার বিশ্লেষণ জরুরি বলে মনে করছে পলিটব্যুরো। চলতি মাসেই রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তার পর কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর বৈঠকে প্রসঙ্গটি উঠবে।
তবে ময়নাতদন্তের আগেই সিপিএম নেতাদের একাংশ বলছেন, মূল সমস্যা দু’টি। প্রথমটা হল জেলা থেকে রাজ্য সর্বস্তরে নেতৃত্বের সঙ্কট। নতুন প্রজন্মের কোনও নেতাকে তুলে ধরা হচ্ছে না। ফলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করার মতো তাজা নেতৃত্বের অভাব দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় সমস্যা, লুম্পেন শ্রেণির উপরে নির্ভরতার অভ্যাস। দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন এই শ্রেণি স্বাভাবিক ভাবেই তার দিকে ঝুঁকেছিল। আর এদের উপর নির্ভর করেই গড়ে তোলা হয়েছিল সংগঠন। এখন এই লুম্পেন শ্রেণি শাসক তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছে। ফলে দলের সংগঠনও ধসে গিয়েছে। এই সিপিএম নেতারা বলছেন, পেশিশক্তির উপরে নির্ভর করার বদলে যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠন তৈরি করা হত, তা হলে আজ এই সঙ্কট দেখা দিত না।
সমস্যাটা বুঝলেও সমাধানের রাস্তা কী, সেটাই ঠাওর করতে পারছেন না সিপিএম শীর্ষনেতারা। জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার বদলে এখন মমতা সরকারের ভুল পদক্ষেপে মানুষের মোহভঙ্গের উপরই বেশি নির্ভরশীল আলিমুদ্দিন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.