সরকারি ভর্তুকি বা পরিষেবা পেতে আধার কার্ড থাকা আবশ্যিক নয় বলে অন্তর্বর্তী রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই কার্ড যাতে কোনও ভাবে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে না-পড়ে সে ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই নির্দেশের ফলে ভর্তুকির টাকা সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে
পৌঁছে দেওয়ার যে পরিকল্পনা কেন্দ্র নিয়েছে, তা ধাক্কা খেতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গ্যাসে ভর্তুকি থেকে পড়ুয়াদের বৃত্তি হরেক সুবিধা পেতে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের বাছাই করা কয়েকটি জেলায় আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা জমা দেওয়ার পাইলট প্রকল্প শুরু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকারও জানিয়ে দিয়েছে, বেতন, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড হাতে পেতে এমনকী বিয়ে বা সম্পত্তির নথিভুক্তির জন্যও আধার কার্ড জরুরি। এমন নির্দেশ দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সম্প্রতি জনস্বার্থ মামলা করেন কর্নাটক হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কে এস পুট্টাস্বামী-সহ কয়েক জন।
আজ বিচারপতি বি এস চহ্বাণ ও বিচারপতি এস এ বোবদের ডিভিশন বেঞ্চে পুট্টাস্বামীদের হয়ে সওয়াল করে আইনজীবী অনিল দিওয়ান বলেন, ভর্তুকি এবং পরিষেবা পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আধার কার্ড না-থাকার কারণে অনেকেই সেই সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। যেমন, মহারাষ্ট্র সরকারের নির্দেশে বম্বে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, আধার কার্ড দেখালে তবেই বিচারপতি ও বিচারবিভাগের কর্মীদের বেতন দেওয়া হবে। বিবাহ নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক বলেও ঘোষণা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।
এর উত্তরে কেন্দ্রের কৌঁসুলি জানান, কেন্দ্র আধার কার্ড আবশ্যিক করেনি। কোনও নাগরিকের সম্মতি থাকলে তবেই তাঁর আধার তৈরি হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের এক বড় অংশের কোনও আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র নেই। তাঁদের সুবিধার জন্যই আধার চালু করা হয়েছে। তার পরেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, আধার কার্ড না থাকলে কোনও নাগরিককে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
পাশাপাশি বেআইনি শরণার্থীদের হাতে আধার কার্ড যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের মতে, কোনও অনুপ্রবেশকারী আধার কার্ড পেয়ে গেলে তাঁর ভারতে থাকার উপরে আইনি সিলমোহর পড়বে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে মমতা বলেন, “এই কথাটাই আমি কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। কেন্দ্র আসলে সাধারণ মানুষের জন্য নানা ভর্তুকি, সুযোগ-সুবিধা তুলে দিয়ে আধার কার্ডকে খুড়োর কল করতে চাইছে। সময়সীমা বেঁধে দেওয়াটাও মানুষের সুবিধা কেড়ে নিতেই।”
মহাকরণের খবর, দিন তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখে আধার কার্ড নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি তাঁকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠির প্রতিলিপিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন মমতা। মমতার বক্তব্য, জনগণনা কর্তৃপক্ষ গোটা দেশে যে বায়োমেট্রিক তথ্য ভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু করেছে, তা শেষ হবে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। অথচ মইলি তার আগেই আধার কার্ড তৈরির কাজ শেষ করার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিচ্ছেন! বলা হচ্ছে আধার কার্ড না থাকলে গ্যাসের ভর্তুকি মিলবে না। এটা কী করে সম্ভব? মানুষকে এ ভাবে দুর্দশার মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও চিঠিতে মন্তব্য করেছেন মমতা।
|