আধার পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ও কার্ড বণ্টন প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও ঢিলেমির অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে।
মূল সমস্যা নাম নথিভুক্তি নিয়ে। অনেকেরই অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় এই প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। আবার নাম নথিভুক্তি করলেও আধার নম্বর বা কার্ড মেলেনি। এই প্রশ্নের জবাব কোথায় মিলবে, তা-ও স্পষ্ট নয়। পুরো পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে ১১ সেপ্টেম্বর মহাকরণে জেলাশাসক, কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার কমিশনারদের সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এর মাধ্যমে বৈঠক করবেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব তথা এই প্রকল্পের নোডাল অফিসার বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে থাকবেন ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) ও জাতীয় জনগণনা দফতরের আঞ্চলিক কর্তারাও।
এর পর ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যে আসবে ইউআইডিএআই প্রতিনিধিদল। ইউআইডি এআই-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল ভি পি পাণ্ডে রাঁচি থেকে ফোনে বলেন, “সমস্যা খতিয়ে দেখতেই কলকাতা যাব। সচেতনতা বাড়াতে কী ধরনের প্রচার প্রয়োজন তা-ও পর্যালোচনা করা হবে।” তবে ইউআইডিএআই এবং জনগণনা দফতরের বক্তব্য, শিবিরে যাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে তাঁরা ইউআইডিএআই-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন কোন পর্যায়ে রয়েছে তা দেখতে পারেন। যদি দেখা যায়, আধার নম্বর তৈরি হয়ে গিয়েছে তা হলে ওয়েবসাইট থেকেই কার্ড ‘ডাউনলোড’ করে ‘প্রিন্ট’ করিয়ে নিতে পারেন। যোজনা কমিশন জানিয়েছে, এ ভাবে পাওয়া আধার কার্ড সর্বত্র গ্রাহ্য হবে। |
নাম নথিভুক্তির শিবির সংক্রান্ত খোঁজ-খবর |
• জেলা: জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও বা গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়ক/এগ্জিকিউটিভ অ্যাসিট্যান্ট-এর দফতরে।
• কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা: কমিশনারের দফতর বা বরো অফিসে (প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা ওয়ার্ড-ইনচার্জ থাকার কথা)।
• অন্যান্য পুরসভা: এগ্জিকিউটিভ অফিসারের দফতর (প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা ইঞ্জিনিয়ার বা আধিকারিক থাকার কথা)।
• আধার নম্বর তৈরি হয়ে থাকলে: ওয়েবসাইট থেকে কার্ড প্রিন্ট করানো যাবে। www.uidai.gov.in ওয়েবসাইটের রেসিডেন্ট পোর্টালে গিয়ে ‘ই-আধার’-এ ক্লিক করতে হবে। যে-তথ্য চাওয়া হবে, তা দাখিল করে নির্দেশ অনুযায়ী এগোলে, সেখান থেকেই আধার কার্ড ‘ডাউনলোড’ করা যাবে। |
|
বস্তুত, এই প্রক্রিয়ার দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে গোড়ায় কেন্দ্রীয় জনগণনা দফতর ও যোজনা কমিশনের অধীন ইউআইডিএআই-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকেই আধার নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত। নাগরিকের দেওয়া ১৫টি তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জী তৈরি করছে জনগণনা দফতর। এ ছাড়া তাঁদের বায়েমেট্রিক তথ্যও (যেমন ছবি, দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) সেই পঞ্জীতে থাকবে। আধার পরিচয়পত্র ওই জনসংখ্যা পঞ্জীরই অংশ বিশেষ, যেখানে বায়োমেট্রিক তথ্য ছাড়াও ওই ১৫টি তথ্যের মধ্যে ৫টি থাকবে। কিছু রাজ্যে সম্পূর্ণ দায়িত্ব ইউআইডিএআই-এর। আবার, পশ্চিমবঙ্গে নাম তোলা ও তথ্য সংগ্রহ করছে জনগণনা দফতর। দুই কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে সংগৃহীত ওই তথ্য তারা পাঠাচ্ছে ইউআইডিএআই-এর কাছে। তার পর ইউআইডিএআই আধার কার্ড তৈরি করে তা ডাকে পাঠাচ্ছে। জনগণনা দফতরের আঞ্চলিক যুগ্ম অধিকর্তা প্রণব কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, নথিভুক্তি ও তথ্য সংগ্রহ দ্রুত শেষ করতে পরিকাঠামো ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য তাঁরা ওই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে আমজনতার অভিযোগ, নাম নথিভুক্তি ও তথ্য সংগ্রহ শিবির প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। কেউ কোনও কারণে শিবিরে না-যেতে পারলে পরে কী ভাবে নাম তুলবেন, তা স্পষ্ট নয়। সরকারি সূত্রের খবর, অগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ৩.৪১ কোটি নাগরিকের নাম নথিভুক্তি ও তথ্য সংগৃহীত হলেও ২.১৫ কোটি আধার নম্বর তৈরি হয়েছে। এঁদের মধ্যেও অনেকেরই অভিযোগ, তাঁরা কার্ড হাতে পাননি। এর দায় অবশ্য ডাক বিভাগের উপরেই চাপিয়েছেন পাণ্ডে।
এর মধ্যেই তেল মন্ত্রকের নয়া নির্দেশ, ১ নভেম্বর থেকে কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে আধার নম্বরের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হবে। ডিসেম্বর থেকে হুগলি ও জানুয়ারি থেকে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহেও ওই ব্যবস্থা চালু হবে। কার্ড না-পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে তেল সংস্থাগুলির পাল্টা বক্তব্য, দু’একদিন নয়, নাম নথিভুক্তির স্থায়ী শিবির না-করলে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে না। |