বহুকাল আগে দাদাঠাকুর গান বেঁধেছিলেন, ‘ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটার আয়’। সেই বার্তা নিয়েই কমবয়সী ভোটারদের কাছে পৌঁছতে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীলকুমার গুপ্ত বলেন, “আরও বেশি সংখ্যক যুবক-যুবতীকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেই এই আয়োজন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন জেলা, মহকুমা ও ব্লকস্তরে ঘুড়ি ওড়ানো হবে। ঘুড়িতে কমিশনের প্রতীক ছাড়াও ভোটার তালিকায় নাম তোলানোর বার্তা থাকবে।”
আগে বিভিন্ন সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারে ঘুড়ি ওড়ানোকে ব্যবহার করেছে। এডস সচেতনতায় এবং নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে প্রচারেও ওড়ানো হয়েছে ঘুড়ি। তবে ভোট সচেতনতায় এমন উদ্যোগ নতুন। ইতিমধ্যেই কমিশনের নির্দেশ জেলায় পৌঁছে গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন জেলা সদর, মহকুমা এবং ব্লক স্তরে ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করতে হবে। ঘুড়িতে লেখা থাকবে নানা স্লোগান। যেমন ‘চলো নাম তুলি, দেশ গড়ি’, ‘আমজনতার শ্রেষ্ঠ অধিকার, সর্বজনীন ভোটাধিকার’ ইত্যাদি। লেখা থাকবে কর্মসূচির মূল বার্তাও ‘শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য অধিকতর অংশগ্রহণ’। |
এমন ঘুড়িই দেবে দেবে ভোট দেওয়ার বার্তা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
নির্দেশ মতো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন জেলার প্রতিটি স্কুলে ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। থাকছে পুরস্কার। যারা পড়াশোনার জগতে নেই, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সী এমন ছেলেমেয়েরাও প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারবে। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে ১৮-১৯ বছরের ছেলেমেয়েরা ভোটার তালিকায় নাম তোলার বিষয়ে তেমন উৎসাহী নয়। এই বয়সের মাত্র ৪৫ শতাংশ ছেলে মেয়ের নাম আছে ভোটার তালিকায়। এই বয়সী একশো শতাংশ ছেলেমেয়ের নাম ভোটার তালিকায় তোলাই আমাদের লক্ষ্য।” জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের কথা, “জেলার প্রতিটি হাইস্কুল যাতে এই প্রতিযোগিতা করে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মেদিনীপুরে আবার ঘুড়ি ওড়ানোর চল পৌষ সংক্রান্তির পরদিন, বড়াম পুজোয়। এ বার অবশ্য বিশ্বকর্মা পুজোতেই উড়বে ঘুড়ি। সৌজন্যে কমিশনের কর্মসূচি। ২ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। এখন চলছে তালিকা সংশোধন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি। ফলে, এই সময়টা তালিকায় নাম তোলার জন্য জরুরি। তাই নানা সচেতনতা কর্মসূচিতে জোর দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে স্কুলে স্কুলে অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর হবে ক্যুইজ। প্রতিযোগিতায় সফলদের আগামী ২৫ জানুয়ারি ‘জাতীয় ভোটার দিবস’-এ পুরস্কৃত করা হবে।
হুগলির বিভিন্ন এলাকায় আবার ভোটার তালিকায় মেয়েদের নাম তোলায় জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি এবং জাঙ্গিপাড়ায় ভোটার তালিকায় মহিলাদের নাম অস্বাভিক কম। মহিলাদের উৎসাহ বাড়াতে আজ, রবিবার জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের দিয়ে ‘মানব বন্ধন’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলেন,“প্রতিটি কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে।”
নানা প্রতিযোগিতার মধ্যে সাড়া ফেলেছে ঘুড়ি ওড়ানো। পড়ুয়ারা অনেকেই লাটাই-সুতোর অপেক্ষায়। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আকাশ দাশ, প্রীতম ঘোষদের কথায়, “সবাই স্কুলের মাঠে ঘুড়ি ওড়াব ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে। শক্ত কথা শোনার থেকে ঘুড়ি ওড়ানো ঢের ভাল।” কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভদ্র, মাজদিয়া রেলবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডলও বলছেন,“ কমিশনের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
তবে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দেক মাঝে মূল উদ্দেশ্যটা না ভোকাট্টা না হয়! কমিশন ও প্রশাসন অবশ্য সে বিষয়ে সতর্ক। |
(সহ-প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার, বরুণ দে, গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়) |