পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নির্বাচনে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বন্দোবস্ত হয়েছে। এ বার একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও মহিলাদের যোগদান বাড়াতে তৎপর হল সরকার। সরকারের লক্ষ্য, এই প্রকল্পে অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলার কর্মসংস্থান। লক্ষ্যপূরণে ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে মহিলা কেন্দ্রিক কাজের পরিকল্পনা করতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তুলনায় হালকা কাজের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে যেখানে শুধুমাত্র মহিলারা কাজ করবেন। জেলা থেকেও নির্দেশ পৌঁছেছে ব্লকে ব্লকে। বলা হয়েছে, গ্রামে গ্রামে মাইকিং, লিফলেট, পোস্টার, দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। সেই মতো ব্লকস্তরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলাদের কাজ দেওয়ার নিরিখে রাজ্যের হাল খুব একটা ভাল নয়। এ ক্ষেত্রে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ২৩ নম্বরে। গত বছর ছিল ২২ নম্বরে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে দেশের গড় যেখানে ৫৬.১৭ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের হার মাত্র ৩৫.২ শতাংশ। যে জঙ্গলমহলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নানা প্রকল্প নিয়েছে সরকার, সেখানেও কিন্তু একশো দিনের প্রকল্পে মেয়েদের অংশগ্রহণ খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। এ রাজ্যে জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পে মেয়েদের কর্মসংস্থানের গড় ৩৭.৬ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রকল্পে যদি ১০০ জন কাজ করেন, তার
মধ্যে গড়ে ৩৮ জন মহিলা। বাকি ৬২ জন পুরুষ।
মেয়েদের কাজের সুযোগ বাড়াতে তাই তৎপর হয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি অর্থবর্ষে প্রথম পাঁচ মাসে ৯৪টি এমন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র মহিলারাই কাজ করছেন। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ২০ হাজার ৯৩৬ (৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। সব থেকে বেশি মহিলা কেন্দ্রিক প্রকল্প চলছে মোহনপুরে, ৩৪টি। মহিলা কেন্দ্রিক প্রকল্পের কাজ চলছে জেলার ১৪টি ব্লকে। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ব্লকের সংখ্যা ২৯। যে ১৫টি ব্লকে মহিলা কেন্দ্রিক প্রকল্প শুরু হয়নি তার মধ্যে রয়েছে ঝাড়গ্রাম, লালগড় (বিনপুর-১), নয়াগ্রাম, মেদিনীপুর সদর, শালবনির মতো জঙ্গলমহলের পিছিয়ে পড়া এলাকা।
কেন এখানে মহিলা কেন্দ্রিক প্রকল্প শুরু করা যায়নি?
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে বেশিরভাগ মাঠেঘাটে কাজ করতে হয়। অনেক পরিবারই বাড়ির মহিলাদের সেখানে পাঠাতে চান না। পরিস্থিতির পরিবর্তনে এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যেখানে কাজ করা অনেক বেশি সহজ। অন্তত, মহিলাদের পক্ষে।” এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে বৃক্ষরোপণ, মোরাম রাস্তার কাজ, জমি সমতলীকরণ, সেচ খাল তৈরি প্রভৃতির উপর। সেই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতেও প্রচারমূলক কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
হিসেব বলছে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এই প্রকল্পে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন ২২ দিন। ১০০ দিনই কাজ পেয়েছে, এমন পরিবারের সংখ্যা ১৫২। জবকার্ড দেওয়া হয়েছে ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার পরিবারকে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার পরিবার কাজ পেয়েছে। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ৩৬ লক্ষ ৯৫ হাজার। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৩২৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ হাজার ৫১৩টি প্রকল্পের
কাজ চলছে।
একশো দিনের প্রকল্পে আরও বেশি সংখ্যক মহিলার অংশগ্রহণ জরুরি বলে মানছে সকলেই। জেলা পরিষদের তৃণমূল সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের জেলার পরিস্থিতি ভাল। তবে, আরও বেশি সংখ্যক মহিলার অংশগ্রহন দরকার। এ জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার সব রকম চেষ্টা করছে। দরকারে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর সাহায্য নেওয়া হবে।” প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “আরও বেশি সংখ্যক মহিলা প্রকল্পে কাজ করলে ভালই হবে। বেশি সংখ্যক মহিলা স্বনির্ভর হবেন।” |