প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে তরজা
একশোয় একশো এখনও অনেক দূর
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ‘একশোয় একশো’ দিন না কেন, পশ্চিম মেদিনীপুরে একশো দিনের প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এখনও বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। বিনপুরের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সাফল্যের ‘বড়াই’ নিয়ে তাই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী,
২০০৯-১০ সালে একশো দিনের প্রকল্পে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ৫২ দিন। এই সাফল্যের আশপাশে আর পৌঁছনো যায়নি। ওই বছরে জেলার ১০ হাজার ৩১৫টি পরিবার ১০০ দিনের প্রকল্পে ১০০ দিন করেই কাজ পেয়েছিল। সেখানে চলতি আর্থিক বছরে (২০ ফেব্রুয়ারি ’১৩) মাত্র ৫ হাজার ২০২টি পরিবার ১০০ দিন করে কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গলমহল এলাকার ১১টি ব্লকের পরিবার রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭২৬টি। বামফ্রন্ট পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী কেন এমন দাবি করেছেন, জানি না। তৃণমূল বরং পরিসংখ্যানটা মিলিয়ে নিক। এখানে তো লুকোনোর কিছু নেই। একশো দিনের প্রকল্পের কাজ যবে থেকে শুরু হয়েছে, তার মধ্যে ২০০৯-’১০ সালেই ভাল কাজ হয়। সে জন্য জেলা পরিষদ পুরস্কারও পেয়েছিল।”
পরিসংখ্যান বলছে, একশো দিনের প্রকল্পের কাজ পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল ২০০৬-০৭ সালে। ওই আর্থিক বছরে জেলার মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ১৬ দিন। পরবর্তীকালে এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। সবচেয়ে ভাল কাজ হয় ২০০৯-১০ সালে। চলতি আর্থিক বছরে জব কার্ড দেওয়া হয়েছে ৮ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৮৩ টি পরিবারকে। এর মধ্যে এসসি পরিবারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮২ হাজার ২১৭, এসটি ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৯৫। অন্য ৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৭১। কাজ চেয়ে আবেদন করে ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮১৪টি পরিবার। কাজ পেয়েছে ৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৪৮টি পরিবার। ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব ধরলে গড়ে কাজ হয়েছে ২৮ দিন।
তা হলে মাত্র দু’দিন আগে বিনপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন একশো দিনের প্রকল্পে তৃণমূল সরকারের ‘সাফল্যে’র দাবি করলেন। কেনই বা বললেন, ‘‘জঙ্গলমহলে ১০০ দিনের কাজ ১০০ দিন হয়ে গিয়েছে। আমরা চাই ভাই-বোনেরা ১০০ দিনের প্রকল্পে ২০০ দিন কাজ করুক।’’
পশ্চিমের খতিয়ান
বছর (অর্থবর্ষ) গড়ে কাজ (দিন) ১০০ দিন পেয়েছে (পরিবার)
২০০৬-০৭ ১৬ ১৫৮
২০০৭-০৮ ২৪ ১২১০
২০০৮-০৯ ২৭ ২০২৭
২০০৯-১০ ৫২ ১০৩১৫
২০১০-১১ ৩৫ ৮৪৫৫
২০১১-১২ ২৮ ৩৯৬৩
২০১২-১৩ ২৮ ৫২০২
২০১২-১৩ অর্থবর্ষে জঙ্গলমহলে একশো দিন কাজ পেয়েছে ১৭২৬টি পরিবার।
এর মধ্যে বিনপুর ১ ব্লকের ১৩, বিনপুর ২-এ ১৭৪, গড়বেতায় ২৩৬,
গোপীবল্লভপুর ১-এ ৭২, গোপীবল্লভপুর ২-এ ৩৫, জামবনিতে ২৬৭, ঝাড়গ্রামে ২৬৬,
মেদিনীপুরে ১৭৩, নয়াগ্রামে ৭৮,শালবনিতে ১১৮ ও সাঁকরাইলে ২৯৪।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন রয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সঙ্গে গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ যুক্ত। তাই প্রকল্পের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে তৎপর সিপিএম, তৃণমূলদু’পক্ষই। সিপিএমের দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ভাল কাজ হয়েছে। এখন তা মুখ খুবড়ে পড়েছে। উল্টোটা তৃণমূলের। সব মিলিয়ে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই প্রকল্পও যে একটা ইস্যু হতে চলেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তত, যুযুধান দু’পক্ষের সওয়াল-পাল্টা সওয়াল তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার যেমন বলছেন, “একশো দিনের প্রকল্পে কেন্দ্র যে অর্থ বরাদ্দ করে, তাতে কখনওই সমস্ত পরিবারকে ১০০ দিন করে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। তা করতে হলে এখন যে বরাদ্দ আসে, তার দশ গুন বরাদ্দ প্রয়োজন। তবেই ১০০ দিনের কাজ ১০০ দিন হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে জঙ্গলমহলের মানুষ হাসছে।” মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির পাল্টা বক্তব্য, “আমাদের সরকারের আমলেই একশো দিনের কাজ ভাল ভাবে এগোচ্ছে। আগে কাজের পরিস্থিতি ভাল ছিল না। বহু অস্বচ্ছতা ছিল। বহু কারচুপি-দুর্নীতি হত। এখন সেই পরিবেশ নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.