|
|
|
|
গরহাজির, তবু মোদীই নিশানা সংহতি পরিষদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যতটা না সংহতি, তার থেকে বেশি রাজনীতি!
উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে জাতীয় সংহতি পরিষদের বৈঠক ডেকেছিল মনমোহন সরকার। সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তুলে সেই মঞ্চকেই নরেন্দ্র মোদীকে একঘরে করার চেষ্টা চালালেন কংগ্রেস তথা ইউপিএ-র নেতারা। সরাসরি তাঁর নাম করেননি কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতা। তবে ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে মোদী তথা সঙ্ঘ পরিবারের অঙ্গুলিহেলনেই দেশে গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাড়ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যে প্রশ্নে তাঁরা পাশে পেয়েছেন নীতীশ কুমার, মুলায়ম সিংহ যাদব, লালুপ্রসাদ, ওমর আবদুল্লা থেকে শুরু করে সিপিএম ও ধর্মনিরপেক্ষ আঞ্চলিক দলগুলিকে। বহুত্ববাদের কথা বলে ও গুজরাত-দাঙ্গার কথা স্মরণ করিয়ে সুকৌশলে কংগ্রেসের নেতারা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কেউই মোদীর পাশে নেই।
পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠকের কারণে মোদী থাকতে পারেননি বলে আজ গুজরাত সরকারের প্রতিনিধি জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে প্রশ্ন তোলেন, “সাম্প্রদায়িক ঐক্য তৈরির লক্ষ্যে সম্মেলন ডাকা হয়েছে বলেই কি মোদী এড়িয়ে গেলেন? ওঁর মতো নেতার তো আরও বেশি করে এই সম্মেলনে আসা উচিত ছিল।”
দু’বছর জাতীয় সংহতি পরিষদের বৈঠক হয়নি। মুজফ্ফরনগরের ঘটনার পরে সেই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কেন্দ্রের অনেক আমলাও মনে করছেন, লোকসভা ভোটের মুখে সাম্প্রদায়িক ঐক্য তৈরির সম্মেলন কার্যত রাজনীতির ঘুঁটি সাজানোর মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। |
|
ধুন্ধুমার: মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রতিবাদে লখনউয়ের পিস পার্টির
সমর্থকদের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: পিটিআই। |
মুজফ্ফরনগরের ঘটনায় অখিলেশ যাদব ও তাঁর সরকারের দিকে ব্যর্থতার আঙুল উঠেছে। একই ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের কিস্তওয়ারে গণ্ডগোলের পরে সমালোচনার মুখে পড়েন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। দু’জনেই আজ বিজেপি-র দিকে আঙুল তুলেছেন। অখিলেশের বক্তব্য, “দেখা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে কিছু রাজনৈতিক দল রাজ্যের সাম্প্রদায়িক ঐক্য নষ্টের চেষ্টা করছে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মেরুকরণের চেষ্টা হচ্ছে।” একই ভাবে অরুণ জেটলির মতো বিজেপি নেতাদের কিস্তওয়ারে যাওয়ার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওমর। বাদ যাননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের এমন একটা সংস্কৃতি গড়তে হবে যেখানে ভারতের বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয়।” মুলায়ম, লালুরা কিন্তু আজ মোদী ও অমিত শাহের নাম করেই আক্রমণ শানান। লালু বলেন, “মোদী সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাঁধাতে সিদ্ধহস্ত।” আর মুলায়মের সাফ কথা, “অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশকে গুজরাত বানানোর চেষ্টা করছেন।” সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও জোরালো বক্তব্য রাখেন।
লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজ আজ দিল্লির বিজ্ঞান মঞ্চে এই সম্মেলনে হাজির ছিলেন। কিন্তু প্রায় সকলেই যখন অনুপস্থিত মোদীর দিকে আঙুল তুলছেন, তখন তাঁর দলের কাউকে সে ভাবে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। যদিও ঘরোয়া বৈঠকে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য কী ভাবে মোদীকে দায়ী করা যায়?
মোদীর মত রামন সিংহ, মনোহর পারিক্করের মতো বিজেপি-র অন্য মুখ্যমন্ত্রীরাও ছিলেন না। শুধু শিয়রে ভোট নিয়েও ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। তিনি মোদী-পন্থী বলে পরিচিত নন
মোটেই। আর ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। এনডিএ-র সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও আজ যাঁকে দেখে এগিয়ে যান নীতীশ কুমার। সাম্প্রতিক অতীতের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনেই সচেতন ভাবে মোদীকে এড়িয়ে গেলেও নীতীশ আজ আডবাণীর দিকে এগিয়ে যেতে দ্বিধা করেননি। তাঁদের দীর্ঘ করমর্দন ও কুশল বিনিময় নজর এড়ায়নি কারও।
মোদীকে আক্রমণের সুরটা বেঁধে দেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছোট ছোট মতভেদকে উস্কানি দিয়ে বড় আকারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।” শিন্দে বলেন, “সকলেই এক বিষয়ে একমত। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পিছনে ক্ষুদ্র স্বার্থ রয়েছে।
সাম্প্রদায়িক ঐক্য বাড়ানোর কথা বলা হলেও এ দিনের সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ রোখার কোনও রূপরেখা মেলেনি।
|
পুরনো খবর: সংঘর্ষ রুখতে মনমোহনের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীদের |
|
|
|
|
|