তথ্য, পাল্টা তথ্যের বাগযুদ্ধে মোদী-চিদম্বরম
র কোনও কথার মারপ্যাঁচ নয়, লোকসভা ভোটের অনেক আগেই এ বার সরাসরি বাগ্যুদ্ধে নেমে পড়ল কংগ্রেস ও বিজেপি। এ বারে তরজার বিষয়বস্তু এনডিএ এবং ইউপিএ জমানায় দেশের বৃদ্ধির হারের তুল্যমূল্য পরিসংখ্যান। এবং বিতর্কের শুরুটা হল নরেন্দ্র মোদীর একটি বক্তব্যকে ঘিরে।
যেখানে দেশের অর্থনীতির বর্তমান দশার জন্য ইউপিএ সরকারের তুমুল সমালোচনা করার পাশাপাশি এনডিএ জমানার বৃদ্ধির ছবি তুলে ধরেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে বেঁধার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে দেরি করেনি কংগ্রেস। ভুয়ো তথ্য তুলে ধরার অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতৃত্ব মোদীকে সরাসরি ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছেন। পাল্টা জবাব দিতে নেমে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘আসলে সংখ্যা নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম’।
রবিবার আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের এক সভায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রসঙ্গটি তোলেন মোদী। উন্নয়ন এবং বৃদ্ধির হার নিয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পণ্ডিতরা কেবল তর্কেই জিততে পারেন। আসল ঘটনা হল, এনডিএ জমানার ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধির হার ইউপিএ জমানায় ৪.৮ শতাংশে নেমে এসেছে।”
সোমাবার সকাল থেকেই পাল্টা জবাব দিতে আসরে নামে কংগ্রেস। এক দিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে চিদম্বরম বলেন, “নরেন্দ্র মোদী কেন তথ্য নিয়েও ভুয়ো সংঘর্ষ করছেন, তা দেখে আমি বিস্মিত। যা সত্যি, তা তো সত্যিই থাকবে!” এ কথা বলার পাশাপাশি এনডিএ জমানার প্রতি বছরের বৃদ্ধির হার তুলে ধরেন তিনি। আর্থিক সমীক্ষা উদ্ধৃত করে চিদম্বরম জানান, ১৯৯৯ থেকে এনডিএ জমানার পাঁচ বছরে বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৭.৬, ৪.৩, ৫.৫, ৪ এবং ৮.৪ শতাংশ। যার অর্থ, গড় বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৬ শতাংশ। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, প্রথম ইউপিএ জমানায় বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৮.৪ শতাংশ। গত ৯ বছরে গড়ে আট শতাংশ হারে বৃদ্ধি হয়েছে দেশের। চিদম্বরম যখন সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে মোদীর দাবি খারিজ করছেন, তখন দিগ্বিজয় তো মোদীকে সরাসরি ‘ফেকু’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “দেশের বৃদ্ধি নিয়েও এখন তথ্য জাল করতে শুরু করেছেন মোদী!” মজার বিষয় হল, বৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্কেও শব্দ-বিন্যাসে ভুয়ো সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে কৌশলে মোদীকে কোণঠাসা করতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেস এ ভাবে আসরে নামতেই দিল্লিতে দলের নেতাদের সক্রিয় হতে বলেন মোদী। চিদম্বরমকে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য সাংবাদিক বৈঠক করতে বলা হয় বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদকে। যেখানে চিদম্বরমের বক্তব্য খণ্ডন করার জন্য ২০০৫ সালে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁরই পেশ করা আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট তুলে ধরেন রবিশঙ্কর। রিপোর্টে ইউপিএ সরকারই দাবি করেছিল, এনডিএ আমলে বৃদ্ধির হার ৮.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল। রবিশঙ্করের দাবি, কৃষি, শিল্প, পরিষেবা-সহ সব ক্ষেত্রেই বিপুল বৃদ্ধির জন্য এই সংখ্যা ছুঁতে পেরেছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার। চিদম্বরমের পেশ করা সেই আর্থিক সমীক্ষা তুলে ধরে রবিশঙ্কর বলেন, “২০০৫ সালে চিদম্বরম নিজে যে কথা বলেছিলেন, গত কাল নরেন্দ্র মোদী ঠিক সে কথাই বলেছেন। বরং বাজপেয়ী সরকারের বৃদ্ধির হার যেখানে ৮.৫ শতাংশে ছিল, মোদী তার থেকে একটু কমই বলেছেন।” এই বিজেপি নেতার কথায়, “অর্থমন্ত্রী হিসেবে চিদম্বরম রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে পারেন না। তবে তিনি যদি মোদীর বক্তব্যকে ভুয়ো সংঘর্ষ বলতে পারেন, তা হলে চিদম্বরমের নিজের বক্তব্য তো তথ্য নিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষেরই সামিল!”
বিজেপির বক্তব্য, ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮ শতাংশ। আর ২০০৪ সালে তারা যখন ক্ষমতা থেকে সরে যায়, তখন বৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৮.৫ শতাংশে। বিজেপির অভিযোগ, তারা ক্ষমতায় আসার আগে পরিস্থিতি যা ছিল, মনমোহন সিংহ সরকার দেশকে সেই জায়গাতেই ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। মনমোহন সরকারের নীতি পঙ্গুত্ব, দুর্নীতি-সহ নানা বিষয় বাজপেয়ী সরকারের গড়ে দেওয়া মজবুত ভিতকে দুর্বল করে দিয়েছে। যশবন্ত সিন্হার দাবি, “চিদম্বরম সংখ্যা নিয়ে সন্ত্রাস করছেন!”
চাপানউতোর অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বরং পরে ফের সাংবাদিকদের সামনে এসে চিদম্বরম বলেন, “সংখ্যা নিয়ে সন্ত্রাসের প্রশ্নই ওঠে না।” কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, মোদী কেবল বাজপেয়ী জমানার শেষ বছরের বৃদ্ধির হার তুলে ধরছেন। আসলে তার আগের দু’বছর বৃদ্ধির হার ছিল তলানিতে। ফলে ২০০৩-২০০৪ আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার গণনার সময় আগের বছরের ‘বেস’ ছিল কম। তাই শেষ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে লোককে বোকা বানাতে চাইছেন মোদী।
পরে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “ভুয়ো তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে মোদী হইচই ফেলে দিতে চাইছেন। সেটাই ওঁর বরাবরের খেলা। কিন্তু রাহুল গাঁধীর নির্দেশ, মোদী ভুয়ো পরিসংখ্যান দিলেই তা সঙ্গে সঙ্গে খণ্ডন করে ওঁর মুখোশ খুলে দিতে হবে।” আবার বিজেপি সূত্রে খবর, কংগ্রেসের ভাবমূর্তি মলিন করতে ইউপিএ জমানার তথ্য-পরিসংখ্যানই হবে তাঁদের হাতিয়ার।
যার মোদ্দা অর্থ একটাই। লোকসভা ভোটের আগে কথার লড়াই চলবেই।

বৃদ্ধির লড়াই

অটলবিহারী বাজপেয়ী গড় বৃদ্ধির হার
৪.৮ শতাংশ থেকে ৮.৪ শতাংশে নিয়ে
গিয়েছিলেন। মনমোহন সরকার তা আবার
৪.৮ শতাংশে ফিরিয়ে এনেছে।
নরেন্দ্র মোদী

নরেন্দ্র মোদী তথ্য নিয়েও কেন ভুয়ো
সংঘর্ষ করছেন, তা দেখে আমি বিস্মিত।
এনডিএ জমানায় গড় বৃদ্ধির
হার ছিল ৬ শতাংশ।
পি চিদম্বরম


সংখ্যা নিয়ে সন্ত্রাস
চালাচ্ছেন চিদম্বরম।
যশবন্ত সিন্হা

‘ফেকু মোদী’ তাঁর সেরা ফর্মে রয়েছেন। বৃদ্ধির
হার নিয়েও এখন তথ্য জাল করছেন!
দিগ্বিজয় সিংহ


২০০৫ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন চিদম্বরম নিজেই
জানিয়েছিলেন এনডিএ আমলে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৫ শতাংশ।

রবিশঙ্কর প্রসাদ

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.