তাঁকে সামনে রাখলে বিজেপি নতুন শরিক পাবে না, পাবে না পুরনোদেরও নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ক্ষেত্রে এটাই ছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীদের অন্যতম আপত্তির কারণ। সেই মোদী এখন এনডিএ-র বিস্তার ঘটিয়ে অপবাদ ঘোচাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আডবাণী বরাবরই বলে আসছেন, লোকসভা ভোটে একক ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে না দল। মোদী তাই তৎপর আগে থেকেই শরিক জোগাড় করে রাখতে যাতে শেষ মুহূর্তে ভেস্তে না যায় তাঁর দিল্লি দখলের স্বপ্ন।
এই সব হিসেব মাথায় রেখেই গত মাসে হায়দরাবাদের সভা থেকেই চন্দ্রবাবু নায়ডুকে এনডিএ-তে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন মোদী। এর এক মাসের মধ্যে তেলুগু দেশম পার্টির এই নেতা দিল্লিতে এসে রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন। তার ঠিক আগেই মোদী দিল্লি এসে দলের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে ছিলেন সঙ্ঘ নেতা সুরেশ সোনিও।
নীতীশ কুমার মোদীর নামে এনডিএ-র সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। তাঁরই দলের নেতা শরদ যাদবের সঙ্গেও আজ বৈঠক করেছেন চন্দ্রবাবু। ক’দিন আগেই সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও শরদ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রে ফের অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোট গড়ার জন্য। কিন্তু যখন মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, সেই সময় ক্ষমতার বিভিন্ন কেন্দ্র না গড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট করাই এখন বিজেপি লক্ষ্য। এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে চন্দ্রবাবু আজ বলেন, “কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
বাজপেয়ী জমানার শরিকদের ফেরানোর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ দলছুট নেতাদেরও ফিরিয়ে আনতে তৎপর মোদী। ফেরানোর তোড়জোর চলছে ইয়েদুরাপ্পাকে। আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বাবুলাল মারান্ডির সঙ্গেও।
মোদী চান, ভোটের আগেই জয়ললিতাও এনডিএ-তে সামিল হওয়ার কথা ঘোষণা করুন। তলে তলে কথা চলছে তার সঙ্গে। চলতি সপ্তাহে তামিলনাড়ুতে গিয়ে মোদী প্রকাশ্যেই জোটবার্তা দিতে পারেন এডিএমকে নেত্রীর উদ্দেশে।
হরিয়ানায় কুলদীপ বিশনোই ইতিমধ্যেই বিজেপি-র হাত ধরেছেন। হরিয়ানার রেওয়ারিতে মোদীর সভামঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন কুলদীপ। এ বারে ওমপ্রকাশ চৌটালার সঙ্গেও জোট চান মোদী। চৌটালার তরফে জানানা হয়েছে, কংগ্রেসকে উৎখাত করার জন্য যা যা করণীয় করা হবে।
অসম গণ পরিষদ ও উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে রামদাস আটাওয়ালের সঙ্গে জোট এখনই রয়েছে। রাজ ঠাকরের সঙ্গেও মোদীর আলোচনা হয়ে রয়েছে। কিন্তু শিবসেনা-প্রধান উদ্ধব ঠাকরের আপত্তিতে আপাতত সেই জোট ঘোষণা আটকে রয়েছে।
নিজেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরতে চান মোদী। কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ অবশ্য আজ পরোক্ষে গুজরাত-দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে মোদীকে বিঁধে বলেছেন, “চিতাবাঘ কখনওই তার গায়ের ছোপগুলি মুছে ফেলতে পারে না।” এই অবস্থায় শরিক সংগ্রহের অভিযানে সাফল্য পেলে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন মোদী। যদিও বাজপেয়ী জমানার শরিক মমতা বন্দ্যোপধ্যায় বা নবীন পট্টনায়ককে তিনি ফের জোটে ফেরাতে পারবেন, এমনটা আশা করছেন না বিজেপি-র নেতারা। দলের কিছু নেতা এখনও পূর্বাঞ্চলে নীতীশের সঙ্গে জোট ধরে রাখার কথা বলে যাচ্ছেন। |