ঊর্ধ্বসীমা ছেঁটে জমি বণ্টনের প্রস্তাবে উদ্বিগ্ন শিল্প
মি অধিগ্রহণ আইনে অসন্তুষ্ট শিল্পমহলের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে এ বার নতুন ভূমি সংস্কার নীতি চালু করতে উদ্যোগী হলো কেন্দ্রীয় সরকার। যে নীতির মূল কথা, গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জমির ঊর্ধ্বসীমার পরিমাণ কমিয়ে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। শিল্পমহলের একটা বড় অংশের মতে, এমনিতেই নতুন জমি অধিগ্রহণ আইনের ফলে শিল্পের জন্য জমি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই নীতি চালু হলে তা কঠিনতর হবে।
‘জাতীয় ভূমি সংস্কার নীতি ২০১৩’ নামে ওই পরিকল্পনার খসড়া সম্প্রতি রাজ্যগুলির কাছে পাঠিয়ে তাদের মতামত চেয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, দেশের অর্ধেক মানুষের হাতে এখনও কোনও জমি নেই। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে যে ভূমি সংস্কার হয়েছে, তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে কোনও না কোনও ভাবে ভূমি সংস্কারের আওতায় আনা যাবে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ চান, সিলিং-অতিরিক্ত জমি উদ্ধারের পর তা খাস ঘোষণা করে গরিবদের মধ্যে বিলি করতে।
রাজ্যকে পাঠানো খসড়ায় বলা হয়েছে, সেচসেবিত এলাকায় জমির মালিকানার ঊর্ধ্বসীমা ৫ থেকে ১০ একর এবং অসেচসেবিত এলাকায় ১০ থেকে ১৫ একরের মধ্যে বেঁধে রাখা হোক। দেবোত্তর সম্পত্তি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, গবেষণা সংস্থার একটি ইউনিটের ক্ষেত্রেও ১৫ একরের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখন রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ২৪ একর পর্যন্ত জমি ব্যক্তিগত মালিকানায় রাখা যায়। কেন্দ্রের প্রস্তাব মানা হলে হাজার হাজার একর জমি খাস ঘোষণা করতে পারবে ভূমি দফতর।
কেন্দ্রের এই প্রস্তাব দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। ভূমি দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য: জমি সংক্রান্ত যে কোনও বিষয় রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে। সেখানে কেন্দ্র কী ভাবে ভূমি সংস্কার নীতি ঠিক করে দেবে? তা ছাড়া, গোটা দেশে একটাই ভূমি সংস্কার নীতি হতে পারে না। প্রতিটি রাজ্য তাদের নিজস্ব জমির পরিমাণ, চরিত্র এবং ব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি সংস্কার করবে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের (মুখ্যমন্ত্রীই ভূমি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) এক কর্তাও বলেন, “কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইন তো পাশ হয়ে গিয়েছে। ভূমি সংস্কার নিয়ে নতুন করে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ এখন অপ্রয়োজনীয়।” জয়রাম অবশ্য বলছেন, “কোনও রাজ্যকে ভূমি সংস্কার নীতি মানতে বাধ্য করা হচ্ছে না। তারা জাতীয় নীতি দেখে নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
কেন্দ্রের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শিল্পমহলও। এমনিতেই শিল্পায়নের স্বার্থে তারা জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন শিথিল করার কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে। এখন সেই সীমা যদি আরও সঙ্কুচিত হয়, তা হলে শিল্পায়ন আরও ধাক্কা খাবে বলেই তাদের আশঙ্কা। তা ছাড়া, জমি খাস করে বণ্টন করা হলে একই পরিমাণ জমিতে মালিকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইনে যখন ৮০ শতাংশ মালিকের সম্মতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তখন ওই বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়া করে জমি কেনা কতটা বাস্তবোচিত হবে, সেই সংশয়ও থাকছে।
বণিকসভা ফিকির পূর্বাঞ্চলের সভাপতি গৌরব স্বরূপ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে জমির ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। পুরনো যে সব আইন-কানুন রয়েছে তা বদলের সময় এসেছে। কিন্তু তার বদলে জমির উর্ধ্বসীমা যদি আরও কমিয়ে দেওয়া হয় তা হলে বলব, সরকার উন্নয়ন এবং আর্থিক বৃদ্ধিকে বলি দিয়েই এ সব করছে।”
এর বিপরীত মতও অবশ্য রয়েছে। ভিডিওকন গোষ্ঠীর কণর্ধার বেণুগোপাল ধুত যেমন বলেন, “কোনও ব্যক্তির হাতে ১৫ একর জমি থাকাই যথেষ্ট। আর শিল্পের জন্য জমি লাগলে শিল্পপতিরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নেবেন। জমির অতি বিভাজনে হয়তো দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তার জন্য ভূমিহীনদের জমি দেওয়ার কাজ বন্ধ থাকবে, তা তো হতে পারে না।”
তবে জমির ঊর্ধ্বসীমা ১৫ একরে বেঁধে দিলে শিল্প এবং উন্নয়নের কাজে যে জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা স্বীকার করছেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারাই। তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, সরকারকে সব দিক বিবেচনা করে চলতে হয়। মধ্যপ্রদেশে ভূমিসংস্কার করার জন্য বড় মাপের আন্দোলন চালাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আবার মহারাষ্ট্রে এনসিপি ভূমি সংস্কারের বিরোধী। তাদের মতে, এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, আদআদমির ভরসাতেই আগের দু’টি ভোট বৈতরণী পেরিয়েছে দল। এ বারও সেই আমআদমির ভরসাতেই ভোটে যেতে চায় গাঁধী পরিবার। আর তাই খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ বিল পাশের পরে ভূমি সংস্কার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জয়রাম।
কেন্দ্রের ভূমি সংস্কার নীতির আরও একটি লক্ষ্য হল অধিগৃহীত জমি ফেলে রাখা হলে তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। খসড়ায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে নেওয়া জমি ৫ বছর ফেলে রাখলে তা রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে জমির মূল মালিককে সরকার জমি ফিরিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্প না-গড়ে কোনও সংস্থা যদি জমি অন্য সংস্থাকে বিক্রি করে বা লিজ দেয়, তা হলে জমির বাড়তি দামের ২০% মূল মালিককে দিতে হবে।
সরকারের হাতে থাকা যাবতীয় পতিত জমির রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারেও প্রস্তাব করা হয়েছে এই ভূমি সংস্কার নীতিতে। এ ছাড়া জমির ব্যবহার, চরিত্র বদল, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জমি বিক্রি, অধিগ্রহণের আগে সহমত গঠনের ক্ষেত্রেও গ্রামসভার হাতে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অভাবে পড়লে গরিব মানুষ যাতে সস্তায় জমি বিক্রি করতে বাধ্য না হন, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের ভূমি সংস্কার
• সিলিং-অতিরিক্ত জমি খাস ঘোষণা ও বণ্টন
• ভুমি বণ্টনে মহিলাদের অগ্রাধিকার
• অভাবী বিক্রি রোধে জমি সুরক্ষা তহবিল গঠন
• পতিত, আদিবাসীদের জমিরক্ষার ভার পঞ্চায়েত হাতে
• দেবোত্তর বা ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার
• ৫ বছর অব্যবহৃত অধিগৃহীত জমি ফিরিয়ে নেওয়া
• গ্রামসভার সম্মতি ও সহমতের ভিত্তিতেই খনির ইজারা

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.