জমি নিয়ে শিল্পমহলের চোখা প্রশ্নে অমিতই ঢাল জয়রামের
কের পর এক চোখা চোখা প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিচ্ছিলেন বণিকসভার কর্তারা। সেই নিরন্তর আক্রমণ থেকে বাঁচতে ওই বণিকসভারই প্রাক্তন মহাসচিবকে ঢাল করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। প্রাক্তন সেই মহাসচিবের নাম অমিত মিত্র এখন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী। হাসতে হাসতে ফিকির-র কর্তাদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন জয়রাম, “তা হলে আপনারা কী শিখিয়েছেন অমিত মিত্রকে?”
শিল্পের জন্য জমি নিতে গেলে কেন ৮০ শতাংশ জমি-মালিকের সম্মতির বিধান অধিগ্রহণ আইনে রাখা হয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন ছিল ফিকি-কর্তাদের। তাঁদের যুক্তি, এর ফলে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল হবে। জয়রাম মনে করিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো ১০০ শতাংশ জমি-মালিকের সম্মতি নেওয়ার কথা বলছে। রাজ্যের হয়ে সেই দাবি আবার অমিত মিত্রই তাঁর কাছে প্রথম জানিয়েছিলেন। জয়রাম বলেন, “অমিত মিত্র তো আপনাদেরই লোক ছিলেন, তাই না!”
দীর্ঘ বিতর্কের পর নানা সংশোধনী নিয়ে জমি অধিগ্রহণ আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু তাতে কৃষক না শিল্প কার স্বার্থ রক্ষা হয়েছে, তা নিয়ে ধন্ধ রয়েই গিয়েছে। এই আইন পাশ হওয়ার পরে আজ প্রথম বার শিল্পমহলের মুখোমুখি হয়েই তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে জয়রামকে। শিল্পমহলের অভিযোগ, নতুন আইনে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া জটিলতর হবে। ফিকি-র সহ-সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নতুন বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে কিন্তু ধনী-গরিবের ফারাকটাই বাড়বে। ভাল মাইনের চাকরি ও উন্নত জীবনযাত্রা থেকে বঞ্চিত হবে তরুণরা। ফিকি-র আর এক কর্তা সঞ্জয় ভাটিয়া বলেন, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পে ৭০ শতাংশ জমি-মালিকের সম্মতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ অধিকাংশ জমির মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ডই ঠিকঠাক নেই। মন্ত্রীকে তাঁর প্রশ্ন, “এর ফলে কি অধিগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না?”
দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে জয়রাম রমেশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
প্রশ্নবাণে জর্জরিত জয়রাম বলেন, “আপনারা যদি ভাবেন, আমি বামপন্থী, তা হলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে কী বলবেন? ঘোর নৈরাজ্যবাদী? সরকার যেখানে জমি অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে, শুধু সেখানেই ৮০ শতাংশ বা ৭০ শতাংশ জমি-মালিকের সম্মতির কথা বলা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ছিল, শিল্পের জন্য সরকারের জমি অধিগ্রহণেরই দরকার নেই। কারখানা যারা গড়বে, তারাই জমি খুঁজে কিনে নিক।” শিল্পমহলকে শান্ত করতে জয়রামের আশ্বাস, তাঁদের মতামত নিয়েই আইনের খুঁটিনাটি নিয়মনীতি তৈরি হবে। খসড়া নিয়মনীতি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। তার পরে শিল্পমহল ও বণিকসভাগুলির মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত হবে। পাশাপাশি জমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আগামী তিন বছরের মধ্যে কম্পিউটারে নথিভুক্ত হয়ে যাবে। হরিয়ানা, কর্নাটক, গুজরাত ও ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই সে কাজ শেষ। জয়রাম বলেন, “আপনাদের মতে আমিও আর্থিক সংস্কারই চাই। তার জন্য কারও শংসাপত্রের দরকার নেই।”
কর ফাঁকি প্রতিরোধ বিধিতে ভোডাফোনের পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনের উপর কর চাপানোয় এর আগে শিল্পমহলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। একই ভাবে নতুন জমি আইনে ইতিমধ্যে অধিগৃহীত জমির ক্ষেত্রেও নতুন হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা নিয়ে শিল্পমহল শঙ্কিত। গত পাঁচ বছরে যে সব জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন হারে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে।
শিল্পমহলের যুক্তি, যে কোনও প্রকল্প চালু হতেই তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যায়। এখন নতুন হারে ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে প্রকল্পের খরচই তো বেড়ে যাবে। মন্ত্রীর জবাব, কেবল তিনটি ক্ষেত্রেই এই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক, আগে যেখানে কোনও ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়নি। দুই, কাগজে-কলমে অধিগ্রহণ হলেও বাস্তবে জমি হাতবদল হয়নি। তিন, জমির মালিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি। এ সব ক্ষেত্রে নতুন হারে শুধু ক্ষতিপূরণটুকুই দেওয়া হবে, পুনর্বাসন নয়। শুধুমাত্র সরকার যেখানে বেসরকারি সংস্থা বা যৌথ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে, সেখানেই এই শর্ত প্রযোজ্য। বেসরকারি সংস্থা সরাসরি জমি কিনে নিলে কোনও সমস্যা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.