ভোট-ময়দানে বাজিমাতে নয়া অস্ত্র ‘অ্যাপ’ |
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ তো ছিলই। তার হাত ধরে ছিল ই-মেল, ফেসবুক, টুইটারও। কিন্তু ভোট ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে এ বার কদর বাড়ছে মোবাইলেরও। সৌজন্যে অ্যাপ (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন)।
রাজনীতির কুশীলবরা মনে করছেন, আজকের প্রজন্মের মনে দাগ কাটার অন্যতম শর্ত হল তার মোবাইল ফোনে সেঁধিয়ে যাওয়া। আর সেই কারণেই কংগ্রেস কিংবা বিজেপির মতো জাতীয় দল তো বটেই, অ্যাপ ব্যবহারে পিছিয়ে থাকছে না আঞ্চলিক দলগুলিও। ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার দাবি, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অন্তত ১৬০টি লোকসভা আসনের প্রচারে বড়সড় প্রভাব ফেলবে অ্যাপ-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার।
এমনিতে অ্যাপ মানে অ্যাপ্লিকেশন। সহজ কথায়, একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্যই যা তৈরি। মোবাইল ফোনে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি এই ধরনের বিভিন্ন অ্যাপে নানা সুবিধা মেলে। কখনও অ্যাপে ক্লিক করে মোবাইলেই পড়ে ফেলা যায় খবরের কাগজ। তো কখনও আবার খেলা যায় মজাদার গেম। তবে তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার এই নতুন ‘ক্রেজ’কে একটু অন্য ভাবে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক দলগুলি। যেমন, নেতা ভাইকোর বক্তৃতা অনুরাগীদের কাছে পৌঁছে দিতে অ্যাপ ব্যবহার করছে তামিলনাড়ুর এমডিএমকে। নেত্রী জয়ললিতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এআইএডিএমকে তৈরি করেছে ‘আম্মাজ মেসেজ অফ দ্য ডে’। দলের দাবি, রাজ্যবাসী তো বটেই, এই
অ্যাপ নাকি ডাউনলোড করছেন অনাবাসী তামিলরাও।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ সংস্থা আই এ কনসাল্টিং-এর মতে, অ্যাপ-এর মাধ্যমে ‘টার্গেট অডিয়েন্স’-এর (যাঁর দরজায় যেতে চাই) কাছে পৌঁছনো সহজ। মার্কিন মুলুকের রাজনীতিকদের জন্য অ্যাপ তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে সে দেশের সংস্থা ভি এমপাওয়ার-এর। এ বার ভারতের বাজারের দিকেও নজর দিচ্ছে তারা। সংস্থার অন্যতম কর্তা হান্নান আহমেদের দাবি, সাধারণ মানুষ ও নেতাদের মধ্যে চটজলদি সেতু তৈরিতে অ্যাপ-এর জুড়ি নেই। ৫৪৩ জন সাংসদের ই-মেল, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য
দিয়ে একটি অ্যাপ ইতিমধ্যেই তৈরি করছেন তাঁরা।
চলতি বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের সময় আই-ফোন, ব্ল্যাকবেরি এবং অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তির মোবাইলের জন্য অ্যাপ তৈরি করেছিল বিজেপি। নেতাদের বক্তৃতা, ছবি থেকে শুরু করে নির্বাচনী সভার যাবতীয় তথ্য পর্যন্ত এর মাধ্যমে পৌঁছে দিত তারা। নিজেদের মতামত জানাতে পারতেন ভোটাররাও। দলের তথ্যপ্রযুক্তি সেল-এর প্রধান অরবিন্দ গুপ্তর দাবি, নেট-প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াবেন তাঁরা।
আগামী লোকসভা ভোটে ডিজিটাল ঘোড়ায় পুরোদস্তুর সওয়ার হতে চায় কংগ্রেসও। কংগ্রেসের প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থা জেডব্লিউটি। সংস্থা সূত্রের খবর, অন্যান্য প্রচারের পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর প্রচারের দিকেও যথেষ্ট নজর দেবে তারা।
এবং তাতে অন্যতম ভূমিকা নেবে অ্যাপ। গত কয়েক মাসে অন্তত তিনটি অ্যাপ এনেছে আম আদমি পার্টিও। দলের দাবি, প্রচার খরচের ২% নেট দুনিয়ার জন্য বরাদ্দ রাখছে তারা।
এ রাজ্যে তৃণমূল গত কয়েক বছর ধরেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। দলনেত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধায় এ বিষয়ে বিশেষ উৎসাহী। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বললেন, “অ্যাপস হচ্ছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি। আমরা ৩৬০ ডিগ্রি প্রচারে আগ্রহী। মিটিং-মিছিল, চায়ের আড্ডা থেকে সোশাল মিডিয়া, অ্যাপস সবই হবে আমাদের প্রচারের হাতিয়ার।”
এক কালে কম্পিউটারের বিরোধিতা করা সিপিএম অবশ্য আপাতত দলীয় ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ উন্নত করার দিকেই জোর দিচ্ছে। অ্যাপস-এর দিকে এখনও বামেদের নজর নেই। রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ নীলোৎপল বসু বলেন, “আমাদের অধিকাংশ সমর্থকই নেট-প্রযুক্তির আওতায় নেই। ফলে প্রচারের কাজে ওয়েবসাইট-এর বাইরে প্রযুক্তির বিশেষ ব্যবহার আমরা করছি না।”
কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাজারে ভোট-অ্যাপের চাহিদা যে চড়া হতে যাচ্ছে, তা আঁচ করতে পারছেন দেশি-বিদেশি অ্যাপ নির্মাতারা। তাঁরা চেষ্টা করছেন ভোটমুখী অ্যাপ তৈরি করে গুগ্ল, মাইক্রোসফট কিংবা অ্যাপল-এর অ্যাপ স্টোরকে বেচে দিতে। জনপ্রিয়তা বুঝে অ্যাপ-এ বিজ্ঞাপন টেনে লাভ করার সুযোগও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট শিল্পের দাবি। |