বৃহৎ কৃষি বাজার গড়তে আগ্রহপত্র পুজোর আগেই
কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। চাষিদের স্বার্থে প্রস্তাবিত বৃহৎ কৃষক বাজারে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরা যাতে পুঁজি ঢালেন, সে জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে তারা। পুজোর আগেই কৃষি বিপণন দফতর এ ব্যাপারে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অফ ইনটারেস্ট) চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।
বৃহৎ কৃষক বাজার তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে ভিন্ রাজ্যের একাধিক সংস্থা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পঞ্জাব ও গুজরাতের দু’টি সংস্থা তো রীতিমতো প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে এ রাজ্যের গ্রামীণ হাট-বাজারগুলির বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়েও দেখেছে। তাদের বর্ধমানের গলসি ও হুগলির সিঙ্গুর ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারেরা। পুরুলিয়া, কোচবিহার ও পূর্ব মেদিনীপুরেও যাওয়ার কথা আছে আরও দু’-তিনটি সংস্থার। নদিয়ার হরিণঘাটায় বৃহৎ কৃষক বাজার গড়তে আগ্রহ দেখিয়ে সরকারের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছে কর্নাটকের একটি ‘প্রসেসড ফুড’ প্রস্তুতকারী সংস্থা।
সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সময় ওই দুই সংস্থার প্রতিনিধিরা চাষিদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন: তাঁরা কোন কোন ফসল ফলান, উৎপাদন কেমন হয়, কী ভাবে ওই ফসল বাজারে যায়, কত হাত ঘোরে, লাভ কত থাকে, কত ফসল নষ্ট হয় ইত্যাদি। কৃষি বিপণন দফতরের একাধিক অফিসার জানান, ওই প্রতিনিধিরা বলেছেন, ফসল বেচতে গিয়ে এ রাজ্যের কৃষকেরা যে সব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন, পঞ্জাব ও গুজরাতের চাষিরা তা ২৫ বছর আগে পেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা এখন আর ফসল বিক্রির দুশ্চিন্তা নিয়ে চাষ করতে নামেন না। লাভের নিশ্চয়তা থেকে প্রতি বছর লগ্নির পরিমাণ বাড়াচ্ছেন তাঁরা।
রাজ্য কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “বেসরকারি বিনিয়োগের রাস্তা খোলার পরে রিলায়্যান্স ফ্রেশ তো বটেই, কেভেন্টার্স অ্যাগ্রো, আদানি উইলমার, স্পেনসার্স, আইটিসি এবং ব্রিটানিয়া বৃহৎ কৃষক বাজার গঠনে লগ্নির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ওই প্রকল্পে টাকা ঢাললে সরকার কী কী সুবিধা দেবে, তা বিস্তারিত ভাবে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এত কিছুর পরেও দুশ্চিন্তা কাটছে না কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারদের একাংশের। কেন? এক কর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের উপরে সরকার যে সব শর্ত চাপিয়েছে তার গোড়াতেই বলা হয়েছে, বাজার গঠনে ন্যূনতম ১০০ একর জমি নিতে হবে। খুব কম হলে ৯০-৯৫ একর পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এবং নিজেদের উদ্যোগে ওই জমি কিনতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই। কিন্তু যেখানে কাটোয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি এখনও পুরোটা কিনে উঠতে পারেনি এনটিপিসি, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরির জন্য জমি কিনতে গিয়ে পদেপদে বাধা পেতে হচ্ছে ডিভিসি-কে, সেখানে ভিন্ রাজ্যের লগ্নিকারীদের পক্ষে নিজ উদ্যোগে জমি কেনা কতটা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই। কৃষি বিপণন দফতরের আর এক কর্তা অবশ্য বলেন, “বৃহৎ কৃষক বাজার গড়ে উঠলে আখেরে লাভ হবে কৃষকদেরই। আমাদের আশা, ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা জমি বিক্রি করতে অরাজি হবেন না।” জমি যে নিজেদেরই কিনতে হবে, বর্ধমান ও হুগলি যাওয়ার আগে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল পঞ্জাব ও গুজরাতের সংস্থা দু’টিকে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “চাষিদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ওঁরা জমির দরদামও জেনে গিয়েছেন। তবে আমাদের কিছু জানাননি।”
জমিই শুধু নয়, আগ্রহপত্রের বয়ান মোতাবেক, বাজারের নকশা থেকে শুরু করে পরিকাঠামো গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ সব দায়িত্বই সংশ্লিষ্ট সংস্থার। কী ভাবে ওই কৃষক বাজার চলবে, সেই নিয়মবিধি তৈরিতেও সরকার নাক গলাবে না বলে জানান রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা।
তা হলে সরকারের ভূমিকা কতটা? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেটিং কমিটি’ আইন মেনে বিনিয়োগকারী সংস্থাকে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও গুদামজাত করার অধিকার দেবে সরকার। তারা যাতে আশপাশের ১৫-২০টা ছোট কৃষক বাজারের ফসল কিনে বৃহৎ কৃষক বাজারে মজুত করতে পারে, সেই নিয়ন্ত্রণও দেওয়া হবে তাদের। সরকার বিদ্যুৎ, জল ও সংযোগকারী রাস্তার মতো পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি এককালীন পাঁচ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে।
গোটা প্রকল্প তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দু’বছরের বেশি সময় দিতে চায় না রাজ্য। কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গ যে হেতু অন্য রাজ্যের থেকে পিছিয়ে রয়েছে, সে হেতু জমি কেনার আগে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেওয়া যাবে না, এমন শর্ত আগ্রহপত্রে রাখা হচ্ছে না। প্রকল্প রিপোর্ট খতিয়ে দেখার জন্য বিপণন অধিকর্তাকে মাথায় রেখে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তাদের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পথে হাঁটবে সরকার। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’বছরের মধ্যে কৃষক বাজার চালু করতে না পারলে চুক্তি বাতিল করবে। ওই কর্তার বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী জমি নিয়ে ফেলে রাখার বিরোধী। প্রকল্প শেষ করতে দু’বছরের বেশি সময় দেওয়া যাবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.