ফুলিয়ার উদ্ভাবন, মসলিন সুতোর ‘সফট কটন’ |
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় • নবদ্বীপ |
তাঁতের শাড়ি মানেই একটু কড়া। ঠিক মতো পরতে না পারলে ফুলে ফেঁপে থাকে। সিল্ক বা অন্যান্য শাড়ির মতো সহজে সামলানো যায় না। তাঁতের শাড়িকে নিয়ে এই সব অভিযোগের দিন বোধহয় শেষ হতে চলল। বাংলার তাঁতের শাড়ির অন্যতম উৎপাদন কেন্দ্র ফুলিয়া এ বারের পুজোয় উপহার দিচ্ছে নতুন ধরনের ‘সফ্ট কটন শাড়ি।’
সাড়ে ছ’শো টাকা থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা দামের সফ্ট কটন শাড়ি এ বারের পুজোয় ফুলিয়ার অন্যতম শাড়ি উৎপাদক বীরেন বসাকের উদ্ভাবন। কী ভাবে তৈরি হচ্ছে এই শাড়ি? বীরেনবাবু জানান, এই শাড়ির তুলো আসে তামিলনাড়ু থেকে। ‘সুভিন কর্পাস’ নামের ওই তুলো থেকে মুর্শিদাবাদের চকবাজারের কারিগরেরা সুতো তৈরি করেন। ফুলিয়ার তাঁতিরা সেই সুতো দিয়ে বোনেন সফট কটন শাড়ি। সুভিন কর্পাস তুলো থেকেই তৈরি হয় মসলিন, অতি-সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য যা প্রায় অদৃশ্য। তবে তেমন উঁচু জাতের মসলিনে অন্তত ৫০০ কাউন্টের সুতো ব্যবহার করা হয়। সফ্ট কটন শাড়িতে অত বেশি কাউন্ট দরকার হয় না। বীরেনবাবুর কথায়, “১০০ কাউন্টের সুতোয় টানা আর ৭০ কাউন্টের সুতোয় পোড়েন দেওয়া হয়েছে। মুগা বা তসরের সুতোয় বোনা হয়েছে পাড়। মুগা বা তসরের পাড় নরম জমিকে ধরে রাখবে।” |
ফুলিয়ায় নিজের দোকানে সফ্ট কটন শাড়ি নিয়ে বীরেন বসাক। —নিজস্ব চিত্র। |
উৎপাদকদের দাবি, অত্যন্ত নরম এই শাড়ি পরার পর ফুলে ফেঁপে থাকবে না। সহজেই সামলানো যাবে। মাড় দেওয়ার দরকার হবে, কেচে ইস্ত্রি করলেই আবার নতুনের মতো। দাম ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০০ টাকা পর্যন্ত।
এ বার পুজোয় আর এক নতুন উৎপাদন ‘কড়িয়াল’ শাড়ি। ফুলিয়ার উৎপাদকদের দাবি, হ্যান্ডলুমে এই ধরনের কড়িয়াল শাড়ি এই প্রথম উৎপাদন হচ্ছে। মটকা, লিনেন এবং খাদি সুতোয় বোনা তিন ধরনের কড়িয়াল শাড়ির দাম ২৫০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত। ঘন রঙের সঙ্গে অফ হোয়াইটের ব্যবহারে নজরকাড়া সমন্বয়।
ফুলিয়ায় আরেক নামী উৎপাদক যোগেন বসাকের তরফে এ বারের পুজোয় নতুন উপহার ‘এক্সপোর্ট শাড়ি’। কেউ কেউ একে ‘বাইলুন’ শাড়িও বলেন। সিল্কের সঙ্গে তসর বা মটকার কম্বিনেশন এই শাড়ির জমি গাঢ় রঙের। মেরুন, চকলেট, ব্লু ইত্যাদি। দাম ১০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে।
ফুলিয়ার তাঁতিদের হাতে এ বার আমূল বদলে গিয়েছে “বাহা” শাড়ি। ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দামের গতবারের বাহা শাড়ির দাম, ডিজাইন এ বার দুই-ই পরিবর্তন হয়েছে। উৎপাদক রবীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, “গতবারের বাহা শাড়ির বৈশিষ্ট্য ছিল তিন রঙা পাড়। ভিতরের জমি এবং পাড় সবই গাঢ় রঙের। এ বারের বাহা শাড়ির পাড় একেবারে আলাদা ধরনের। চওড়া নকশাদার পাড়। গাঢ় রং নেই, বদলে মুগার রং। ভিতরের জমি গাঢ় থাকছে। আর ‘পাটলিপাল্লু’ শাড়ির মতো আঁচল আর কুচিতে অন্য নকশা থাকছে।”
এ ছাড়া ফুলিয়ার নিজস্ব ট্র্যাডিশন্যাল শাড়ির বিরাট সম্ভার তো রয়েছেই। ৭৬ কাউন সুতোর ঢাকাই, নকশাদার পাড়ের শাড়ি। দাম ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। একটু বেশি দামের শাড়ির মধ্যে এ বার ফুলিয়ার তাঁতিরা বুনেছেন মসলিন সিল্ক। সিল্কের সঙ্গে মসলিনের সুতোর মিশ্রণে এই শাড়ির সারা গায়ে হাতের কাজ নজর কাড়বে। হালকা, গাঢ় দুই ধরনের রঙেই পাওয়া যাবে। দাম দশ হাজার টাকা থেকে শুরু, শেষ ১৮ বা ২০ হাজার টাকায়।
তবে বর্ধিত মজুরি আর সুতোর দামের কারণে মাঝারি ধরনের সব শাড়ির দাম বেড়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের উপর চাপ বাড়বে। ছোট বড় সব ধরনের উৎপাদকরাই জানালেন, পাইকারি বা খুচরো বিক্রির পরিমাণ এ বার কিছুটা কম। দোকানদার বা পুশ সেলারের দল এ বার কম শাড়ি তুলছেন। |