বিমাননগরীতে লগ্নি টানতে আসরে নামছে চাঙ্গিই |
দুর্গাপুরের কাছে অন্ডাল বিমানবন্দর ঘিরে নগরী গড়তে নিজেরাই বিনিয়োগ আনতে চাইছে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
মনে করা হচ্ছে, এই বিমাননগরী গড়ে না উঠলে বিমানবন্দর গড়ে তোলা ফলপ্রসূ হবে না। বিমানবন্দর লাভজনক হতে গেলে বড়সড় শিল্প গড়ে ওঠাও দরকার। প্রয়োজন বড় মাপের বিনিয়োগ। সে কথা অনুধাবন করেই চাঙ্গির এই উদ্যোগ। বিষয়টি তাঁরা প্রকল্পে যুক্ত ভারতীয় কর্তাব্যক্তিদের হাতে পুরোপুরি ছেড়েও দিচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবার কাজী নজরুল ইসলামের নামে বর্ধমানের এই বিমানবন্দরের নামকরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সিইও লিম লিয়াং সং। প্রগতি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে চাঙ্গি এই বিমাননগরী গড়ার পরিকল্পনা করেছে। লিম বলেন, “সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সংস্থা সে দেশের ব্যবসায়ীদের সামনে এই প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছে।”
বিদেশের কোথায় কোথায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে তা ঘুরে দেখে দেশীয় ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরাই ইন্টারন্যশনাল এন্টারপ্রাইজের কাজ। দু’বছরে তিন বার তাদের প্রতিনিধিরা অন্ডাল ঘুরে গিয়েছেন। লিম বলেন, “শুধু আমাদের দেশ নয়, অন্য যে সব দেশ আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করে, তাদের ব্যবসায়ীদের সামনেও এই প্রকল্পের কথা তুলে ধরা হবে। বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করা হবে।” এই প্রসঙ্গে জাপানের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। |
মঞ্চে ছিলেন চাঙ্গির কর্তা এবং ভারতে সিঙ্গাপুরের হাই কমিশনার লিম থুয়ান কুয়ান। তাঁদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনারা এই রাজ্যের অন্যত্রও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করুন না। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। চা, ধর্ম, সংষ্কৃতি, পড়াশোনা ঘিরে পর্যটন গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।” সিঙ্গাপুরের দুই কর্তাকে চমকে দিয়েই তাঁদের ভাষায় ‘নু হাউ’ এবং ‘সিয়া সিয়া’ বলে ওঠেন তিনি। যার বাংলা তর্জমা হল, ‘নমস্কার’ এবং ‘ধন্যবাদ’।
এ দিনই দুর্গাপুরে মমতার প্রশাসনিক বৈঠক থাকায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটক, পূর্ণেন্দু বসুর মতো মন্ত্রী এবং ১২-১৪ জন সচিব স্তরের আইএএস অফিসার সঙ্গে ছিলেন। ছিলেন মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবও। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে প্রথমেই বাইরে নজরুলের মূর্তি উন্মোচন করেন মমতা। তার পরে সকলকে নিয়ে ঘুরে দেখেন টার্মিনাল। সঙ্গে চাঙ্গি কর্তারা ছাড়াও ছিলেন বেঙ্গল এরোট্রপলিস প্রজেক্ট লিমিটেডের কর্তা পার্থ ঘোষ। উচ্ছ্বসিত মমতা বলেন, “এটা বাংলার নতুন মুখ। এখন বাংলার নতুন যুগ। কলকাতায় নতুন টার্মিনাল হয়েছে। কোচবিহার বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে। বাগডোগরায় রাতে বিমান ওঠানামা করবে। তার সঙ্গে এই অন্ডাল। আমরা তিন বছরের জন্য এই তিনটি বিমানবন্দর (কোচবিহার, বাগডোগরা এবং অন্ডাল) থেকে বিমান জ্বালানির উপরে কর পুরো মকুব করে দিয়েছি। আশা করছি, অনেক বিমানসংস্থা এই তিন বিমানবন্দর ব্যবহার করবে।”
পরে পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নতুন টার্মিনাল (চাঙ্গির বিশেষজ্ঞরাই তৈরি করেছেন) দেখে খুশি। কলকাতার নতুন টার্মিনালের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। এই বিমানবন্দর চালু করতে রাজ্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।” কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা সৌগত মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে এই বিমানবন্দর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প আগামী দিয়ে বড় একটা ভূমিকাও নিতে চলেছে।”
স্থির হয়েছে, আপাতত পবন হংস সংস্থা এই বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় হেলিকপ্টার চালাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ এই সংস্থাটি ডিসেম্বরে ছোট বিমান নিয়ে আসছে। বিমান মন্ত্রকের অনুমতি সাপেক্ষে অন্ডাল থেকে সেই বিমান চালানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, পবন হংসের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৪০ ঘণ্টার ভাড়া সরকার দিয়ে দেবে। তার বদলে সরকারি অফিসারেরা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে হলদিয়া, অন্ডাল, দুর্গাপুর-সহ অন্যত্র যাতায়াত করবেন।
অন্ডালের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী, সিপিএমের নিরুপম সেনকেও। কিন্তু তিনি আসেননি। রাতে টেলিফোনে তিনি বলেন, “কখনই কোনও বিষয়ে তো আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এ ক্ষেত্রে কাউকে দিয়ে কার্ড পাঠিয়েছিল। আমার অন্য কাজ ছিল, তাই যেতে পারিনি। কিন্তু নিমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানাই।”
|