দুর্গাপুরের অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে কলকাতা নয়, প্রথমে দিল্লির উড়ান চালু করতে চায় বেঙ্গল এরোট্রোপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল)। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে একাধিক বিমানসংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে বুধবার জানান বিএপিএল-কর্তা পার্থ ঘোষ।
আগামী ছ’মাসের মধ্যে অন্ডাল বিমানবন্দর চালু হয়ে যাবে বলে আশাবাদী পার্থবাবু। যদিও এ দিন বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গিয়েছে, কাজ অনেকটাই বাকি। ঝাঁ চকচকে আধুনিক টার্মিনাল তৈরির কাজ অবশ্য শেষের মুখে। আজ, বৃহস্পতিবার সেই টার্মিনালেরই উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চান, বিমানবন্দরটি নজরুল ইসলামের নামে হোক। কলকাতার নতুন টার্মিনাল, কোচবিহার ও বাগডোগরার পাশাপাশি আগামী দিনে এই অন্ডাল বিমানবন্দরকেও রাজ্যের ভাবমূর্তি তৈরিতে কাজে লাগাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই সম্প্রতি কলকাতা ছাড়া অন্যান্য বিমানবন্দর থেকে বিমান-জ্বালানির উপরে রাজ্যের প্রাপ্য কর পুরোপুরি মকুব করে দিয়েছে সরকার। পার্থবাবুর কথায়, “ছ’মাস আগেও যে বিমানসংস্থা অন্ডাল থেকে উড়ান চালাতে আগ্রহী ছিল না, জ্বালানি-কর ছাড়ের ঘোষণা শুনে এখন তারাই আগ্রহ দেখাচ্ছে।”
কিন্তু বিমানযোগে কলকাতার আগে দিল্লির কথা ভাবা হল কেন?
পার্থবাবু ছাড়াও আরও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, কলকাতা-অন্ডাল রুটের বিমানে আদৌ যথেষ্ট যাত্রী হবে কি না, তা নিয়ে একটা সংশয় রয়েছে। কারণ, দুই শহরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ যথেষ্টই ভাল। কাজেই বেশি ভাড়া দিয়ে (এবং বিরাট কিছু সময়ও বাঁচছে না) বিমানযোগে ক’জন অন্ডাল থেকে কলকাতা যাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। বস্তুত, দমদম থেকে এত কম দূরত্বে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা কতদূর কার্যকরী হবে, তা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। |
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার (ডিএসপি) মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন কানুনগোর কথায়, “আমাদের সংস্থার অনেকেই বিমানে যাতায়াত করতে আগ্রহী। কিন্তু গাড়ি নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছতে এখন যেখানে বড়জোর তিন ঘণ্টা লাগে, সেখানে দুর্গাপুর থেকে অন্ডালে পৌঁছে সমস্ত নিয়ম মেনে বিমান ধরতে দেড় ঘণ্টা লাগবেই।” কাজেই তাঁর মত, অন্ডাল থেকে কলকাতা সড়কপথে যাওয়াই ভাল। এবং অন্ডাল থেকে দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদের উড়ান থাকলে তবেই এই বিমানবন্দরের সুবিধে পুরোমাত্রায় উসুল করা যাবে।
কলকাতা থেকে নিয়মিত দুর্গাপুর যাতায়াত করা ব্যবসায়ী অগ্নিমিত্র বিশ্বাসের কথায়, “ভলভো বাসে চেপে বড়জোর ৩৫০ টাকা খরচ করে তিন ঘণ্টায় দুর্গাপুর পৌঁছে যাই। গাড়ি নিয়ে গেলে এক হাজার টাকার তেল পোড়ে। বিমানের ভাড়া কি দেড় হাজারের মধ্যে থাকবে? তা হলে দেখা যেতে পারে।” আবার ভাড়ার প্রসঙ্গ তুলেও আশাবাদী দুর্গাপুর ক্ষুদ্র শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সমীর বসু। বললেন, “যখন প্রথম ভলভো চালু হল তখন ভাবা হয়েছিল এত ভাড়া দিয়ে কেউ যাতায়াত করবে না। কিন্তু এখন আগে টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না।” তাঁর মতে দুর্গাপুর এলাকায় ডিএসপি, ইন্ডিয়ান অয়েল এবং ইসিএল-এর যথেষ্ট অফিসার থাকায় বিমানে ভালই যাত্রী হবে।
কলকাতা থেকে নিয়মিত উড়ান চালানো একটি বিমানসংস্থার এক কর্তা বললেন, “দিল্লি থেকে যে বিমানটি যাত্রী নিয়ে কলকাতায় নামছে, সেটিকে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর পাঠালে তাতে চেপে দিল্লি ও কলকাতা দুই শহরের যাত্রীরাই যেতে পারবেন। আবার মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ থেকে আসা যাত্রীরাও ওই উড়ানটি পাবেন। একই ভাবে ভুবনেশ্বর-রাঁচি থেকে আসা যাত্রীরাও ওই উড়ানে দুর্গাপুরে যেতে পারবেন। সেই ভাবেই সময়সূচি বানাতে হবে। তবেই যাত্রী পাওয়া সম্ভব।” অন্ডালে জ্বালানি কর না থাকার বিষয়টি যে লাভজনক হবে, সে কথা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন তিনি।
আর এক বিমানসংস্থা-কর্তার মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলকাতায় নামতে না পারা বিমান এখন থেকে অন্ডালে নামতে পারবে। সেটা বড় সুবিধে। আগে যেতে হতো রাঁচি বা ভুবনেশ্বর। কিন্তু এখন অন্ডাল থেকে যাত্রীরা প্রয়োজনে সড়কপথেই কলকাতা চলে আসতে পারবেন।
তবে এখন অন্ডালের রানওয়ের উপর দিয়ে আড়াআড়ি যাওয়া হাইটেনশন লাইন না সরালে কিন্তু বিমানবন্দর চালু হওয়া অসম্ভব। পার্থবাবু যদিও জানিয়েছেন, ডিসেম্বরেই সরিয়ে ফেলা হবে ওই লাইন। কিন্তু রানওয়ে ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বসেনি ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম, যা বিমানকে নামার সময় পথ দেখায়। এ সব শেষ হলে তবেই মিলবে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর ছাড়পত্র। |