মামলা মিটেছে, তবুও জট কাটেনি জলপ্রকল্পের
হু টানাপোড়েন শেষে কুলটি জলপ্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব হাতে নিয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। কিন্তু সাত মাস পরেও নির্মাণ কাজ পরে আছে সেই তিমিরেই। এমনকী কবে কাজ শুরু হবে তাও জানতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে আরও এক বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে কুলটি জল প্রকল্প। হতাশ কুলটিবাসীরাও।
২০০৬ সালের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের আওতায় কুলটির জল প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কেএমডি-র সাহায্যে ২০০৭ সালের গোড়ায় বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প রির্পোটও (ডিপিআর) বানানো হয়। তাতে বলা হয় ২০১১ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে। প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সরকার ১৩৩ কোটি টাকা অনুমোদনও করে। কিন্তু রিপোর্টের পরে ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের নির্মাণ কাজই এখনও শেষ হয়নি। রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, কুলটি পুরসভার ৩৫টি ওর্য়াডে ১১টি উচ্চ জলাধার বসানো হবে। প্রায় দেড়শো কিমি এলাকা জুড়ে পাইপ বিছানো হবে। পাইপ পৌঁছবে বসতি এলাকাতেও। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা আবেদন করা মাত্র জলের সংযোগ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। ডিপিআরএ-তে আরও বলা ছিল, দামোদরের চারটি জায়গায় একাধিক সাবমারসিব্ল পাম্প বসিয়ে নদীগর্ভ থেকে জল তোলা হবে। পরে ক্লোরিন গ্যাস দিয়ে সেই জলে পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা হবে।
মামলা-কথা
• ২০০৬ সালের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের আওতায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
• ২০১১ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা।
• প্রক্রিয়া দেখভাল নিয়ে বিবাদ বাধে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ ও কুলটি পুরসভার। বিবাদ গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে।
• হাইকোর্টে হেরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ। ‘পরিবর্তনে’র পর কুলটি পুরসভাকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
• তারপরেও কাজ এগোয়নি।
কিন্তু কোনওটাই বাস্তবায়িত হল না কেন? কারণ, আইনি জটিলতা। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পটির নোডাল এজেন্ট বসিয়ে ছিল এডিডিএকে। অর্থাৎ এই প্রকল্পের নির্মাণের যাবতীয় প্রক্রিয়া ও দেখভাল করবে এডিডিএ। পরে নির্মান শেষ হলে সেটির দায়িত্ব দেওয়া হবে কুলটি পুরসভাকে। এ নিয়েই বিবাদ বাধে তৎকালীন বামশাসিত এডিডিএ কতৃর্পক্ষ ও তৃণমূল জোটশাসিত পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বিবাদ গড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। পুর-কর্তৃপক্ষ দাবি তোলে, প্রকল্প নির্মাণের যাবতীয় কাজ করবে পুরসভা। কারণ প্রকল্পটি তাঁদের। তবে দাবি মানতে নারাজ ছিল এডিডিএ। পরে হাইকোর্টে হেরে যায় কুলটি পুরসভা। বিচারক রায় দেন নির্মাণের যাবতীয় প্রক্রিয়া করবে এডিডিএ। এরপরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ। বছর কয়েক মামলা ঝুলে থাকে। তার মধ্যেই ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এডিডিএ-রও কর্তা বদলায়। বামেদের হাত থেকে তৃণমূলের হাতে যায় তা।
কিন্তু এর পরেও দু’বছর কেটে গিয়েছে। প্রকল্প শুরু হয়নি। এ বছরের মার্চ মাসেও আসানসোল ও কুলটি পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কুলটি জল প্রকল্পের হাল দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। পুর কর্তৃপক্ষকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে এডিডিএ-র হাতে প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বও দেন। নির্দেশ মতো মামলাটি তুলে নেওয়া হয়। সরকারি ভাবে এডিডিএ প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব হাতে নেয়।
কিন্তু এরপরেও কবে জল-সমস্যা থেকে কুলটিবাসী রেহাই পাবেন তার নিশ্চয়তা নেই। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে তৈরি ডিপিআর অনুযায়ী আর প্রকল্প বানানো যাবে না। জল প্রকল্পের খরচও ১৩৩ কোটি থেকে কমিয়ে ১০০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। ফলে নতুন করে আবার ডিপিআর বানাতে হবে। এডিডিএ-র চেয়্যারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ডিপিআর বানানোর জন্য বিভিন্ন আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে জুন মাসে প্রকাশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট’ ডাকা হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিও কোনও সংস্থা আগ্রহ দেখিয়ে আবেদন করেননি। প্রশ্ন উঠেছে খরচ কমানো হল কেন। নিখিলবাবু বলেন, “প্রকল্পের সময়সীমা ৭ বছর পিছিয়েছে। এই ক’বছরে জিনিসের দাম বেড়েছে তাই খরচ কমিয়েছে।” তবে বিরোধী নেতাদের দাবি, কুলটি পুরসভার গড়িমসীর কারণেই কুলটির বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই দাবি অবশ্য মানতে চাননি কুলটি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাসিন্দাদের স্বার্থে আমরা প্রকল্প গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন এডিডিএ-র রাজনীতিতে তা সম্ভব হয়নি।” কিন্তু এ বার কি নির্দিষ্ট দিন জানা যাবে? নিখিলবাবুর উত্তর, এখনই নিশ্চিত করে দিনক্ষণ জানানো সম্ভব নয়।
আবারও কি একটা নির্জলা বছর যাবে? আশঙ্কা কুলটিবাসীর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.