যে জলপ্রকল্প গড়ার ভার পেতে এক সময়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কুলটি পুরসভা, জট কেটে তারা তা হাতে পাওয়ার পরও এডিডিএ-কেই দায়িত্ব ফিরিয়ে দিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
কুলটির ১৩৩ কোটি টাকা জলপ্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্ব এডিডিএ-র হাতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এই সিদ্ধান্তের পরে কুলটির নাগরিকেরা আশায়, এ বার অন্তত দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা হবে।
কুলটির ৩৫টি ওয়ার্ডের জন্য ২০০৬ সালে এই জলপ্রকল্পের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’-এর অন্তর্গত এই প্রকল্পটি ২০১১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের সিকিভাগ কাজও এখনও শেষ হয়নি। কারণ, প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই তৎকালীন বাম পরিচালিত এডিডিএ এবং তৃণমূলের দখলে থাকা কুলটি পুরসভার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। অনুমোদনের সময়ে প্রকল্পের ‘নোডাল এজেন্ট’ করা হয় এডিডিএ-কে। তাই এডিডিএ কুলটি পুরসভাকে জানিয়ে দেয়, দরপত্র ডাকা থেকে শুরু করে নির্মাণ, সবই তারা করবে। প্রকল্প গড়ার পরে সেটি চালানোর দায়িত্ব পাবে পুরসভা। কিন্তু এডিডিএ-র এই প্রস্তাবে রাজি হননি পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, দরপত্র ডাকা থেকে নির্মাণ, সব তাঁরা করবেন। প্রয়োজনে এডিডিএ-র কাছে কারিগরি সহায়তা নেওয়া হবে। |
তাঁদের এই প্রস্তাবে এডিডিএ রাজি না হওয়ায় পুর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজ একক ভাবে করার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট এডিডিএ-র পক্ষে রায় দিলে পুরসভা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলা চলাকালীন ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এর পরে এডিডিএ-র ক্ষমতাও যায় তৃণমূলের হাতে। আর তার পরেই এডিডিএ-র সঙ্গে জলপ্রকল্প গড়া নিয়ে বিবাদ আপোষে মিটিয়ে নেন কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, কুলটি পুরসভাই প্রকল্পটি গড়বে।
তার পরেও কেটেছে দেড় বছর। সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আসানসোলে আসেন। তিনি কুলটির জলপ্রকল্পের খোঁজ নিয়ে কাজের গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অবশেষে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব কুলটি পুরসভার থেকে এডিডিএ-কে দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
সাত বছর আগে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রায় ছ’বছর প্রকল্পের কাজে হাত পড়েনি। শেষে যখন এডিডিএ-কেই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হল, শুরু থেকে তাঁদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে প্রকল্পের কাজ এত দিন পিছিয়ে দেওয়া হল কেন? কুলটির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুর দাবি, বাম আমলে এডিডিএ কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি।
২০১২ সালের গোড়ায় কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ প্রকল্প রূপায়ণে হাত দেয়। এডিডিএ সূত্রের খবর, ঢিমেতালে প্রকল্পের কাজ এগোনোয় ক্ষুব্ধ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। তাই এডিডিএ-কে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই দফতরের মন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সভাও করেছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় প্রকল্পের খরচে কিছুটা রদবদল করতে হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করব।’’ নিখিলবাবু আরও জানান, এত বড় জলপ্রকল্প গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা পুরসভার নেই। এডিডিএ-র সেই দক্ষতা থাকায় তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রকল্প রূপায়ণের ব্যাপারে এডিডিএ কর্তৃপক্ষকে আমার পূর্ণ সহযোগিতা করব।” উজ্জ্বলবাবু আরও জানান, প্রকল্পের সবিস্তার রিপোর্ট আবার নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সেটি তৈরি হলেই কাজে হাত পড়বে।
|