মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে পুলিশের সাহায্য না পেলে দলের কর্মীরাই ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তুলবেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু শুক্রবারও শিল্পাঞ্চল জুড়ে কার্যত একতরফা মার খাওয়ারই অভিযোগ তুলেছেন দলের কর্মীরা। পাণ্ডবেশ্বর থেকে বারাবনি, সর্বত্রই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে উঠেছে। সন্ধ্যায় অবশ্য ফরিদপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ উঠেছে।
লাউদোহায় বৃহস্পতিবার জেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকার সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বাধা পান। ব্লক অফিসের সামনে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের আটকায় বলে অভিযোগ। শুক্রবার অবশ্য পরিস্থিতি তুলনায় শান্ত ছিল। নির্বিঘ্নেই মনোনয়ন জমা দেন সিপিএম প্রার্থীরা। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা অবশ্য জানান, শুক্রবার পুলিশ ও প্রশাসন সতক থাকায় কোনও সমস্যা হয়নি। সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, “তৃণমূল গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।” তৃণমূলের বিরুদ্ধে জেমুয়ার চার সিপিএম প্রার্থীকে বাড়িতে গিয়ে হুমকির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তৃণমূলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “সহানুভূতি আদায়ের জন্য সিপিএম এ সব বলছে।”
এ দিন সন্ধ্যায় ফরিদপুরের লস্করবাঁধে তৃণমূল-সিপিএমে অশান্তি বাধে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তাঁদের কর্মী কমলাকান্ত মণ্ডল-সহ ছ’জনকে মারধর করে সিপিএমের লোকজন। কমলাকান্তবাবুর কানে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারা হয়। বাকি পাঁচ জনও জখম হন। তাঁদের লাউদোহা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাবি করে সুজিতবাবু বলেন, “সন্ত্রাস করে এলাকা হাতে রাখতে চাইছে সিপিএম।”
ফরিদপুরের সিপিএম নেতা শিশির ঘোষ পাল্টা অভিযোগ করেন, তৃণমূলের হুমকি সত্ত্বেও গোগলা অঞ্চল থেকে কয়েক জন মনোনয়ন দেওয়ায় তাঁদের প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হয়। লস্করবাঁধ কলোনির সিপিএম প্রার্থী সীমন্ত বিশ্বাসের বাড়ির লোকজন ও পড়শিদের মারধর করা হয়। তাতে ছ’জন জখম হন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, এলাকায় টহল চলছে।
শুক্রবার জামুড়িয়ায় চুরুলিয়া পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেরার পথে সিপিএম প্রার্থী হারু রুইদাস ও প্রস্তাবক রবীন রুইদাসকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। চুরুলিয়ার ৯ নম্বর সংসদের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ শাহ মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে তৃণমূল সমর্থকেরা ব্লক অফিসের অদূরে মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেয় বলে অভিযোগ। পরে মনোনয়ন দাখিলের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে জোর করে বসিয়ে রাখা হয় বলে দাবি সিপিএমের। বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতে মনোনয়ন দাখিল করে ফেরার সময়ে সিপিএম প্রার্থী সীমা মণ্ডলকে জামতোড় গ্রামে আটকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূল সমর্থকেরা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সকালে বাহাদুরপুর গ্রামে বন্দনা গড়াই ও মায়া কোড়ার নামে দুই সিপিএম কর্মীর বাড়িতে গিয়ে ‘প্রার্থী হলে গ্রামছাড়া করা’র হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
বিকেলে পাণ্ডবেশ্বরের ডিভিসি পাড়ায় দুই সিপিএম সমর্থককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাদের প্রার্থীদেরই ভয় দেখানো হচ্ছে। সন্ধ্যায় পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দা গ্রামের সিপিএম নেতা পরেশ গঙ্গোপাধ্যায় ও দিলীপ লাহার পুলিশে অভিযোগ করেন, তাঁদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার রাতে অন্ডালের পলাশবনের সিপিএম প্রার্থী বাবলু মণ্ডল ও দলের নেতা মিহিরকিরণ চক্রবর্তীর বাড়িতে গিয়েও তৃণমূল কর্মীরা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অন্ডালের নেতা কাঞ্চন মিত্র ও পাণ্ডবেশ্বরের নেতা নরেন চক্রবর্তী অবশ্য অভিযোগ মানেননি।
বারাবনিতে তাদের এক কর্মীকে মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিডিও এবং পুলিশে অভিযোগ করেছে সিপিএম। অভিযোগ, দুপুর ১টা নাগাদ জামগ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য মনোনয়ন তুলে ফিরছিলেন সিপিএমের বারাবনি জোনাল সদস্য ধ্বজাধারী মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, “মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা।” তৃণমূল অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। বারাবনির বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাস ও কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) তন্ময় মুখোপাধ্যায় জানান, তদন্ত চলছে। |