সাত দিন ধরে মেলা চলছে নজরুলের জন্মভিটে চুরুলিয়ায়। গত রবিবার ১১ জৈষ্ঠ্য শুরু হয়েছে এই মেলা। শুক্রবার সেই মেলা ছ’দিন অতিক্রান্ত হল। আজ, শনিবার শেষ হচ্ছে রাতের এই মেলা। প্রতি সন্ধ্যাতেই ছিল আলোচনা, গান, আবৃত্তি, নাচ ও যন্ত্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান। প্রথম দিন মেলার সূচনা করেন কবি আবদুস সামাদ।
১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চুরুলিয়ার নজরুল অ্যাকাডেমি। ১৯৭৮ সাল থেকে তারাই শুরু করে এই মেলা। প্রথম দিন ছিল নজরুল দিবস। এর পরের দিনগুলির নামকরণ করা হয়েছে কবি, সাহিত্যিকদের নামে। রবীন্দ্রনাথ থেকে বোগম রোকেয়াকে নেই সেখানে? আজ শনিবার লোকসংস্কৃতি মেলার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই মেলা।
নজরুল অ্যাকাডেমির সম্পাদক কবির ভ্রাতষ্পুত্র কাজি মজাহার হোসেন জানান, দু’বছর ধরে এই মেলায় কোনও স্টল দেয়নি রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতর। এ বছর থেকে আবার তারা স্টল দেওয়া শুরু করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর মেলার জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দিত। পরে তা বেড়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। ২০১২-১৩ সালে অবশ্য কোনও অনুদান মেলেনি। সংশ্লিষ্ট সবক’টি দফতরে আবেদন জানালেও কোনও সাড়া মেলেনি।
নজরুল মেলার একটি দীর্ঘ ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনই বহু গুণী মানুষের আসা, যাওয়ায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই মেলা। ১৯৯৯ সালে চুরুলিয়ায় এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরেই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এসেছিলেন চুরুলিয়ায়। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমোদ মহাজন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তখনই এখানে এসে অ্যাকাডেমির উন্নয়ন খাতে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। মজাহারবাবু বলেন, “সে টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অ্যাকাডেমিকে তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে।”
তবু থেমে যায়নি মেলার ধারাবাহিকতা। সাত দিনের এই মেলায় অংশ নিয়েছেন ছোট বড় নানা শিল্পী। ২৯ জুন বুধবার মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজি। সঙ্গে ছিলেন ওস্তাদ সালাউদ্দিন আহমেদ, রাহাত আলাগীতি, ফতেমা তুজ জোহরা, কবীর পলাশ এবং সাফায়েদ আলম। খিলখিল বলেন, “এই নিয়ে ছ’বার আমরা চুরুলিয়ার প্রমীলা মঞ্চে গান গাইলাম। এখানে আসা একেবারে অন্য রকম একটি অনুভূতি।” শুধু বর্ধমান নয়, মুর্শিদাবাদ, সিউড়ি, শিলচর এমনকি অসম থেকেও এই মেলায় অনুষ্ঠান করতে এসেছেন বহু শিল্পী। বীরভূমের আত্মজা নাট্য সংস্থা ‘বহুরূপী’ নাটক পরিবেশন করেন। শুক্রবার গান গেয়েছেন শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায়ও। আজ, শনিবার নৃত্য পরিবেশন করবেন অসমের নৈঋ
তা চৌধুরী, নন্দিতা চৌধুরী ও বন্দিতা শর্মা। নজরুল অ্যাকাডেমির শিলচর শাখা থেকেও নানা অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সংস্থার তরফে সুভদ্রা ভট্টাচার্য বলেন, “তিন বছর ধরে অ্যাকাডেমির শিলচর শাখার অস্থায়ী কমিটি কাজ করেছে। এ বছর ২০ এপ্রিল ১৭ জনকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁরা প্রতি বছরই এই মেলায় এসে নানা অনুষ্ঠান করেন।”
শুধু শিল্পীরা নন, এলাকার বাসিন্দা থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শকদের কাছে এই মেলা বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। চুরুলিয়ার বাসিন্দা শিক্ষিকা ফতেমা ইয়াসিন, দোকানদার কাজী আসারুল, দিনমজুর খলিল শেখরা জানান, এই মেলায় তাঁদের বিভিন্ন আত্মীয়েরা বাড়িতে আসেন। উৎসবের চেহারা নেয়। বার্নপুর থেকে এসেছেন চাটের দোকানদার শম্ভু সিংহ, মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন খাজা ব্যবসায়ী জয় সাহা। বাঁকুড়া থেকে মেলায় এসেছিলেন চা বিক্রেতা সঞ্জয় দত্ত। মেলায় এসে বেজায় খুশি তাঁরা। বলেন, “সাত দিনের এই মেলায় সারা দিন আনন্দ তো হয়ই। কিন্তু রাতের বেলাতেই জমে ওঠে এই মেলা।” |