অবশেষে দেখা গেল আশার আলো। বাধা কাটিয়ে কুলটি জল প্রকল্প এ বার বাস্তব হওয়ার পথে। ঠিক হয়েছে প্রকল্পটি বানাবে কুলটি পুরসভাই। পুরসভাকে কারিগরি সহায়তা দেবে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট (এমইডি)। পুরো কাজ দেখাশোনা করবে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে ছিলেন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলটি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের দুই সচিব। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, দরপত্র ডাকা থেকে প্রকল্প চালু পর্যন্ত পুরো কাজটাই করবে কুলটি পুরসভা। এডিডিএ শুধুমাত্র কাজ দেখাশোনা করবে।” তাপসবাবু আরও জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকেও।
২০০৯-এর গোড়ায় জল প্রকল্পটির খসরা তৈরি হয়েছিল। সেটি নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদন পায় ওই বছরের শেষ দিকে। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের আওতায় প্রকল্পটির জন্য ১৩৩ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু প্রকল্পটি তৈরির কাজে হাত পড়েনি। কারণ সেই সময়ে বামশাসিত এডিডিএ দাবি করে প্রকল্পটি তারাই বানাবে। তাদের যুক্তি ছিল, প্রকল্পটির নোডাল এজেন্ট করা হয়েছে এডিডিএ-কে। তাই এটি চালু হওয়ার পরে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও আয়-ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে। কুলটি পুরসভা এর বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করে। তাদের পাল্টা দাবি ছিল, প্রকল্পটি পুরসভার। অতএব এটি বানাবে তারাই। এডিডিএ বড় জোর প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা করতে পারবে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট এডিডিএ-র পক্ষেই রায় দেয়। অগত্যা মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায় পুরসভা। তখন থেকেই থমকে প্রকল্পটি। রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে এডিডিএ-র ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। ফলে এডিডিএ তৃণমূূল শাসিত কুলটি পুরসভার দাবি মেনে নেয়।
সেই মামলা এখনও ঝুলে আছে। সেই আইনি ঝামেলা শেষ না হলে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে না। কুলটি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক উজ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা বিচারপতির কাছে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন জানাব। এর পরে আর কোনও জটিলতা থাকবে না।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি আছে। সে দিনই মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করবেন পুরসভার আইনজীবী।
পুরসভার দাবি, এই প্রকল্পের অধীন ১১টি উচ্চ জলাধার, একাধিক পাম্প হাউস, ৫টি পরিশোধনাগার হবে। প্রায় ১২০ কিলোমিটার ব্যাস এলাকা জুড়ে পাইপ লাইন বসবে। লক্ষাধিক বাসিন্দার বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হবে। রাস্তায় কলও বসবে। প্রকল্পের আয়ু ২০৪১ সাল পর্যন্ত। মাথা পিছু জল বণ্টন হবে ১৩৫ লিটার। আইনি জটিলতা কবে কাটবে, তার উপরেই আপাতত ঝুলছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। |