পুজো আসছে। কিন্তু মন ভাল নেই পুজোর নেপথ্য নায়কদের।
ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি ও পুজো বাজেটে কাটছাঁট আঘাত করেছে প্রতিমা শিল্পে। অভিমানে এ বছর প্রতিমা গড়বেন না বলেই ঠিক করেছিলেন দুর্গাপুরের প্রবীণ মৃৎশিল্পী বলরাম পাল। দেশভাগ হওয়ার পরে কলকাতায় চলে এসেছিলেন বলরামবাবু। সেখান থেকে দুর্গাপুরে। আশি পেরিয়ে যাওয়া বলরামবাবু দুগার্পুরে রয়েছেন প্রায় ৫২ বছর। তাঁর আক্ষেপ, “আগে দুর্গাপুজোর সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ টি প্রতিমা তৈরি করতাম। লাভের পরিমানও যথেষ্ট ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর লাভ তেমন হচ্ছে না। গত বছর ৪টি প্রতিমা বিক্রি হয়নি। ভেবেছিলাম এ বছর আর প্রতিমা করব না। কিন্তু রথের দিন আসতেই মন কেমন করে উঠল। লোকসানের আশঙ্কা নিয়েও এ বছর প্রতিমা করছি।”
অনেক দিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপের কাজ। পাড়ার মোড়ের হোর্ডিং-ফেক্সে কোথাও এক চালার সাবেকি দুর্গা আবার কোথাও বিরাট মাপের দুর্গাপ্রতিমায় ‘চমক’। বারোয়ারি পুজোর কর্তারা ব্যস্ত পুজোর দিনের অনুষ্ঠান সাজাতে। কিন্তু প্রতিমা গড়তে গিয়ে মাথায় হাত শিল্পীদের। দাম বেড়েছে প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালের। |
বেড়েছে যাতায়াত খরচ। দুর্গাপুরের বিভিন্ন মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এ বছর পেরেক, দড়ির কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। দাম বেড়েছে মাটি, সুতো, জড়ি, চুমকির। তার উপর পেট্রোল ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে যাতায়াতের খরচ অনেকটাই বেড়েছে । রয়েছে সহকারী শিল্পীর সমস্যা।
হোস্টেল অ্যাভিনিউ এলাকার মৃৎশিল্পী নৃপেন পাল বলেন, “সহকারী শিল্পী ছাড়া এতগুলো প্রতিমা বানানো অসম্ভব। কিন্তু বর্তমানে তাঁরাও বেশি মজুরি দাবি করছেন। অনেক সময় বেশি মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এত প্রতিমা বানানোটাই বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” সিটি সেন্টার থেকে এক কিলোমিটার দূরের পলাশডিহা গ্রামের প্রতিমা শিল্পী গণেশ পাল জানান, প্রতিমা পিছু পাঁচশো টাকার বেশি লাভ হয় না।
প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়লেও বেশি দাম দিতে রাজি নন পুজো কমিটিগুলি। অনেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রতিমার দাম কমাতেও বলছেন। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সারদা কান্ডের জেরে দুর্গাপুরের বেশিরভাগ অর্থলগ্নী সংস্থাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যাদের অনেকেই শিল্পাঞ্চলের অনেক পুজোর পৃষ্ঠপোষক ছিল। ফলে অনেক পুজো কমিটিই এ বছর তাদের বাজেট কমিয়েছে। এর ফলে প্রতিমার বাজেটও কমাতে বাধ্য হয়েছে তাঁরা।
চিন্ময়ী দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ গড়তে গিয়ে অথৈ জলে মৃৎশিল্পীরা। সমস্যা সমাধানের পথ আপাতত অজানা। |