প্রত্যেক বছর পুজোর সময়টা ওঁরা আসেন দুর্গাপুর শহরে। এই শহরে পুজোর সময় রকমারি সুদৃশ্য মণ্ডপ তৈরি হয়। মণ্ডপের কাঠামো তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় বাঁশ। আর তাই জেলার নানা প্রান্ত থেকে বাঁশ ব্যবসায়ীরা এখানেই ছুটে আসেন। তা ছাড়া, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এই সময় লাভ হয় একটু বেশি।
শুধু বর্ধমান জেলা নয়, প্রচুর সংখ্যক বাঁশ ব্যবসায়ী আসেন বীরভূম জেলা থেকেও। গরুর গাড়ি বোঝাই করে বাঁশ নিয়ে আসেন তাঁরা। এমনই এক ব্যবসায়ী বীরভূমের দেবোড়া গ্রামের শেখ মুসাহার। তিনি প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বহু বছর ধরেই দুর্গাপুরে আসছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কোনও লরি বা ভ্যানে বাঁশ নিয়ে আসি না। কারণ তা হলে পরিবহনের খরচ অনেক বেড়ে যায়। সেই খরচের জোগান দিতে পারব না।” তিনি জানান, ভোর তিনটের সময় তাঁরা গ্রামের বাড়ি থেকে গরুর গাড়ি নিয়ে বের হন। অজয় নদে জল কম থাকলে বীরভূমের জয়দেব হয়ে সেদিন দুপুরের মধ্যে দুর্গাপুরে চলে আসেন। কিন্তু বর্তমানে জয়দেবের রাস্তা বন্ধ। জল বেশি থাকার কারণে ওই দিক দিয়ে আসা যাচ্ছে না। তাই ইলামবাজার হয়ে ঘুরে আসতে হয় তাঁদের। ফলে সময় অনেক বেশি লাগছে। |
পুজোর আগে দুর্গাপুর শহরে আসেন এমন কয়েক জন বাঁশ ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, এক একটি গরুর গাড়িতে ৩০ থেকে ৩৫টি বাঁশ থাকে। বাঁশ সংগ্রহের কাজ চলে গোটা বছরই। নিজের এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাঁরা বাঁশ সংগ্রহ করেন। প্রচুর সংখ্যক বাঁশ জোগাড় হলে তাঁরা চলে আসেন এই শিল্পশহরে। একসঙ্গে বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ী আসেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ভোররাতেই। রাস্তার মাঝে কোথাও দাঁড়িয়ে গরুর গাড়ির তলায় রান্না করে খাওয়া দাওয়া সারেন। বাঁশ ব্যবসায়ী শেখ নইমুদ্দিন, শেখ একরামরা জানালেন, তাঁদের সবার বাড়ি বীরভূমের ইলামবাজার থানা এলাকায়। সারা বছর ধরে তাঁরা বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ বিক্রি করে থাকেন।
সারা বছর চলে ব্যবসা। তবে বাঁশ ব্যবসায়ীদের দাবি, খুব বেশি লাভ হয় না বাঁশ ব্যবসায়। তাই তাঁরা পুজোর দিনগুলির জন্য মুখিয়ে থাকেন। কারণ বছরের এই সময়েই একটু বেশি লাভের মুখ দেখেন তাঁরা। প্রতি বছর তাঁরা দুর্গাপুরেই কেন আসেন? শেখ নইমুদ্দিনদের কথায়, “এই সময় দুর্গাপুর জুড়ে বাঁশের প্রচুর চাহিদা থাকে।” একই ধ্বনি শোনা গেল শেখ মুসাহারের কথায়, “সারা বছর ধরে মাসে এক থেকে দু’বার দুর্গাপুরে এলেও পুজোর সময় মাসে তিন থেকে চার বার গরুর গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুরে আসি।” |