|
|
|
|
আম্মার শহরে সৈকতের দখল নিল বাঘ-বাহিনী
সন্দীপন চক্রবর্তী • চেন্নাই |
দিদির শহরে যা তাদের কল্পনার অতীত, ‘আম্মা’র তালুকে তা-ই করে দেখাল ফরওয়ার্ড ব্লক!
সকাল থেকে ব্যাঘ্রপতাকা-শোভিত গাড়িতে বোঝাই মেরিনা বিচের পার্কিং লট। বিকেলে গোটা বিচ রোডে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ির শোভাযাত্রা। তারস্বরে বাজছে হর্ন, বাকিটা মুখরিত কয়েক হাজার ওয়াটের তামিল সঙ্গীতের শব্দব্রহ্মে! বাসের ছাদে সমর্থকদের উল্লাস, এসইউভি-র জানলা থেকে শরীর বার করে স্লোগান! গাড়ির মিছিলের আগে খানতিনেক রথ। আইল্যান্ড গ্রাউন্ডে (যে ময়দানে সভা করার জন্য সব দলকে প্রতি দেড় বর্গফুট হিসাবে মোটা কড়ি গুণতে হয়) ঢোকার আগে যার একটায় চাপতে হল
দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস এবং তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্পাদক পি ভি কাথিরাবণকে!
রবিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই ভরপুর হুল্লোড়ের উপলক্ষ চেন্নাই শহরে বাম শরিক ফ ব-র ১৭তম পার্টি কংগ্রেসের সূচনা। যা নিয়ে চেন্নাই শহরে একটা সাংবাদিক সম্মেলনও করেননি ফব নেতৃত্ব। কলকাতার কায়দায় ক’দিন ধরে শহরের মোড়ে মোড়ে কোনও প্রস্তুতি-সভাও হয়নি। তাতেও চেন্নাইয়ের সমুদ্র সৈকত এ ভাবে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার বহর দেখে বাংলা থেকে আসা ফব নেতাদের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! দক্ষিণী কমরেডদের উৎসাহ দেখে দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির এক সদস্য বলেই ফেললেন, “আহা! এ রকম একটা মিছিল যদি হাজরা মোড় দিয়ে এক বার নিয়ে যাওয়া যেত!” |
পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচ রোড ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থকদের দখলে।—নিজস্ব চিত্র। |
তামিলনাড়ুর আর পাঁচটা প্রথম সারির দল যা করতে পারত, তা-ই তাঁরা করতে পেরেছেন বলে ফব নেতারা উজ্জীবিত। অথচ, কিছু দিন আগেও চেন্নাই শহরে ফব-র একটা পার্টি অফিসও ছিল না। এক নেতাজি-ভক্ত তাঁর নিজের জমি ফব-কে দান করায় সেখানেই ঝাঁপ খোলার বন্দোবস্ত হয়েছে। রাজ্যে দলের একমাত্র বিধায়ক কাথিরাবণও মাদুরাই থেকে নির্বাচিত। রাজধানী শহরে এ দিনের ‘ম্যাজিক শো’র নেপথ্যে তিনিই। তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্পাদকের কথায়, “চেন্নাইয়ে এই প্রথম দলের পার্টি কংগ্রেস হচ্ছে। রাজধানীতে কিছু করতে না-পারলে যে চোখে পড়া যায় না, এটা ওঁরা সকলেই বোঝেন। তাই আজ ঢেলে এসেছেন!”
কারণ অবশ্য আরও একটা আছে। তামিলনাড়ুর তেবর সম্প্রদায় রাজ্য রাজনীতিতে এখনও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের মধ্যে ফ ব-র কিছু প্রভাব এখনও রয়ে গিয়েছে। গোটা দেশ থেকে আসা দলের নেতাদের কাছে নিজেদের প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন কাথিরাবণেরা। তামিলনাড়ুতে ইদানীং সম্প্রদায়-ভিত্তিক দলের সভা থেকে মাঝেমধ্যে গণ্ডগোল ছড়াচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তাই ঝুঁকি নেননি। পুলিশ দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন মিছিল-সরণি এবং সভাস্থল!
বিপুল জগঝম্পের মাঝে নবতিপর অশোক ঘোষকে যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে দেখা গেল। তবু উৎসাহী সমর্থকদের হাতে গাড়ির কাচের মাগত ওঠা-নামার ঠেলায় আঙুল কেটে রক্ত ঝরল! তামিলনাড়ুর কমরেডরা না হয় আড়ম্বর, হুল্লোড় সেরে রাতে বাড়ি ফিরে গেলেন। বাংলার প্রতিনিধিরা প্রস্তুত হতে শুরু করলেন সেই কোচবিহারে কেন ধাক্কা খেতে হল, পুরুলিয়ায় কেন দলত্যাগের হিড়িক চেনা সব প্রশ্নের চর্বিত চর্বণের জন্য! |
|
|
|
|
|