ভর্তুকির পেঁয়াজ মেলে না। সরকারি নজরদারিও নেই। দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে উত্তরবঙ্গে পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে। তবু যে পেঁয়াজ উত্তরের ক্রেতাদের ব্যাগে ঢুকছে, তার বেশির ভাগটাই, পচা এবং খারাপ মানের বলে অভিযোগ।
সোমবার উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জেলার বাজারে নুন্যতম ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। গত ১৬ অগস্ট থেকে কলকাতা, হাওড়া এবং সল্টলেকের ২০টি কেন্দ্রে সরকারি নুন্যতম ১৮ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হলেও উত্তরবঙ্গের ক্রেতারা ব্রাত্যই থেকেছেন বলে অভিযোগ। দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্সের নজরদারিও নেই উত্তরবঙ্গে। সম্প্রতি ২০টির থেকে বাড়িয়ে ৪০টি কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হলেও, সেই তালিকাতেও উত্তরবঙ্গের নাম নেই বলে অভিযোগ। যদিও উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দর কমার কোনও লক্ষণ পাইকারি বাজারে নেই।
মূলত মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকেই সারা দেশে পেঁয়াজের সরবারহ হয়। চলতি বছরে নাসিক এবং লাগোয়া এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। আবার কিছু ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ভিন রাজ্যের পাইকারদের যোগসাজশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে। নাসিকের পেঁয়াজ শিলিগুড়িতে এসে পৌঁছনোর পরেই তা উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন প্রান্তে বিলি হয়। অভিযোগ, উত্তরবঙ্গে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার সুযোগ নিয়ে ঘরে মজুত রেখে, অভাব তৈরি করেছেন।
রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “কলকাতা থেকে দূরত্বের কারণে উত্তরবঙ্গে পেঁয়াজ পাঠানো নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় সরকারি মূল্যে বিক্রি সীমাবদ্ধ রাখা হয়। আজ মঙ্গলবার আধিকারিকদের সঙ্গে ফের বৈঠক হবে। উত্তরবঙ্গে সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিয়ে আলোচনা করব।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্যে টাস্কফোর্স গঠিত রয়েছে। টাস্কফোর্সের সঙ্গে কথা বলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে হানা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও যাতে সরকারি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘দেশ জুড়েই পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখী। তাই এতে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের করণীয় নেই। পেঁয়াজের মতো পচনশীল পণ্য মজুত করে রাখা সম্ভব নয়।” উত্তরবঙ্গের অন্যতম আমদানিকারী সংস্থার পক্ষে সন্তোষ প্রসাদ বলেন, “আমাদের সংস্থা প্রতি মাসে ৩০০ ট্রাক ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আনে। গত তিন মাস ধরে পেঁয়াজের জোগান কমে গিয়েছে। জোগান যতটা কমেছে, দাম তার তিন গুন বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে দাম কিছুটা কমেছে।”
উত্তরবঙ্গেও স্থানীয় ভাবে পেঁয়াজ চাষ হলেও, মোট উৎপাদন চাহিদার দারে কাছেও পৌঁছয় না বলে উদ্যান ও পালন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। যেমন কোচবিহারে সাকুল্যে মাত্র ৫২০ হেক্টর এলাকায় পেঁয়াজ চাষ হয়। উদ্যান পালন দফতরের জেলা সহকারী আধিকারিক দীপক সরকার বলেন, “পেঁয়াজ চাষের এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে।” |