ন্যায্য দামে মুরগি, আদা বিক্রির জন্য কিছু সুলভ স্টল বা ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ স্টলের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু মুরগি রান্নায় যা না-দিলেই নয়, সেই পেঁয়াজের জন্য তেমন কোনও বন্দোবস্ত এখনও হয়নি। বাড়তে বাড়তে রবিবার কলকাতায় পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকা কিলোগ্রাম। সরকারের দাবি, শহরের ৬০টি জায়গায় ভ্যানে ১০০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা জানেন, খোলা বাজারে আদার কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
অন্যান্য বার এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও ৩০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত। অথছ এ দিন উত্তরের শোভাবাজার থেকে দক্ষিণের গড়িয়াহাট বাজার সর্বত্রই পেঁয়াজ ছিল ৬০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়ল কেন?
কোলে বাজারের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ রাজ্যে পেঁয়াজ আসে মূলত নাসিক থেকে। কিন্তু নাসিকে এ বার অতিবৃষ্টির জন্য খুব কম পেঁয়াজের উৎপন্ন হয়েছে। ফলে আমদানিও হচ্ছে অনেকটাই কম। অথচ চাহিদা একই থাকায় দাম বেড়ে গিয়েছে।” ব্যবসায়ীরা বলছেন, নাসিকে পেঁয়াজ কম উৎপাদন হলেও বাড়তি লাভের আশায় সেখান থেকে বিদেশে রফতানির পরিমাণ একই রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত উৎপাদনের সময় আরব দেশগুলোতে যত পেঁয়াজ রফতানি হতো, উৎপাদন-ঘাটতি চলা সত্ত্বেও সেই পরিমাণ কমানো হয়নি। ফলে দেশের বাজারগুলোর ভাগে কম পড়ছে। স্বভাবতই বাড়ছে দাম।
নাসিকের খোলা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। সেখান থেকে কলকাতার পাইকারি বাজারে আসার পরে তা বিকোচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। তা হলে খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম তার ৬০ টাকা হচ্ছে কী ভাবে?
মানিকতলা বাজার ও লেক মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী বলছেন, বর্ষায় পেঁয়াজ মজুত রাখতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাতে দাম বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী পরিবহণ-খরচ বেড়ে যাওয়ার কথাও বলছেন। ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছে ফাটকাবাজির জন্য। |
রবিবারের দাম |
গড়িয়াহাট বাজার ৬০
লেক মার্কেট ৬০
মানিকতলা বাজার ৫০
শোভাবাজার ৫০
|
* প্রতি কেজিতে দাম টাকায় |
|
কোলে বাজারের কিছু পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা জানাচ্ছেন, এক ধরনের ছোট পেঁয়াজ হতো বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর জেলায়। সেই পেঁয়াজের দামও ছিল ভিন্ রাজ্যের পেঁয়াজের চেয়ে কম। কিন্তু বেশি দিন মজুত রাখতে গিয়ে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা এখন চাষ করছেন না। বিকল্প হিসেবে সেই ছোট পেঁয়াজে টান পড়াও দাম বাড়ার কারণ।
কী করছে সরকার?
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “রাজ্যে আগে যা পেঁয়াজ উৎপাদন হতো, তাতে মেরেকেটে তিন মাসের চাহিদা মিটত। এখন সরকার চাষিদের বিনামূল্যে পেঁয়াজ-বীজ সরবরাহ করছে।” এখন রাজ্যে পেঁয়াজ কম হলেও অদূর ভবিষ্যতে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলা স্বনির্ভর হবে বলে আশা করছেন উদ্যান বিভাগের অধিকর্তা পীযূষকান্তি প্রামাণিক।
বিশেষ, হিমঘরে পেঁয়াজ রেখে টানাটানির সময় তা সরবরাহ করার কথা হয়েছিল। তার কী হল?
উদ্যান বিভাগের অধিকর্তা জানান, পচন এড়াতে বারাসত, মুর্শিদাবাদ, হুগলির মতো কিছু জায়গায় মুক্তবায়ুতে পেঁয়াজ রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সেখানে পেঁয়াজ চাহিদা মেটানোর মতো রাখা যাচ্ছে না। তাই আরও ৩৮টি জায়গায় পেঁয়াজ রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
গত বছর পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্ষায় এক ধরনের পেঁয়াজ চাষের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কী হল?
পীযূষবাবু জানান, আগে রাজ্যে শুধু মার্চ-এপ্রিলে পেঁয়াজ চাষ হতো। নাসিকের পেঁয়াজ-বীজ এনে কৃষি দফতর পরীক্ষা করে দেখেছে, এখানে তার চাষ করা যায়। বর্ষাতি পেঁয়াজের জন্য সরকার কয়েকটি জেলায় ৮০০ হেক্টর জমি নির্বাচন করেছে। কৃষক-গোষ্ঠী তৈরি করে জুনে সেই সব জমিতে নাসিকের বীজ লাগিয়ে চাষ শুরু হয়েছে। এটাই বাংলার প্রথম বর্ষাতি পেঁয়াজ। আশা, অক্টোবর অর্থাৎ পুজোর মাসের গোড়া থেকে পেঁয়াজের জোগান নিয়ে আর সমস্যা হবে না।
আদা চাষের জন্যও ৬৪০ হেক্টর জমি নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানান পীযূষবাবু। উদ্যান বিভাগের কর্তাদের আশা, সেখানে আদার চাষ শুরুও হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি খোলা বাজারে আদার দাম কমে যাবে। |