জ্বালানিতে কর ছাড়ে আদৌ
বাড়বে কি উড়ান, সংশয়
বিমান-জ্বালানিতে করছাড় ও কর মকুবের যে ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গ সরকার করেছে, বিমানসংস্থাগুলির তরফে তাকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি কিছু সংশয়েরও অবতারণা করা হয়েছে। বণিকমহলের একাংশের মতে, বিমান পরিবহণে লগ্নি টানতে পদক্ষেপটি সদর্থক হলেও এর ফলে এখনই রাজ্যে উড়ান বাড়বে কি না, তাতে সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, যেখানে কলকাতায় আরোপিত করের হার আরও ছাঁটাই হলে রাজ্যে উড়ানসংখ্যা বৃদ্ধির বড় সম্ভাবনা ছিল, সেখানে সরকার ওই পথে হাঁটল না কেন, বিভিন্ন বিমানসংস্থা-সূত্রে সে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে আবেদনের কথাও ভাবছে সংস্থাগুলি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, বাগডোগরা, কোচবিহার ও অন্ডাল বিমানবন্দরে কোনও বিমান তেল ভরলে ৩০% করের পুরোটাই মকুব করে দেওয়া হবে। আর কলকাতায় শর্ত: বিগত অর্থবর্ষে কোনও বিমানসংস্থা যত পরিমাণ জ্বালানি কিনেছিল, এ বার ততটা কিনলে ৩০% হারেই কর লাগবে। বেশি কিনলে অতিরিক্ত জ্বালানির জন্য করের হার হয়ে যাবে অর্ধেক, অর্থাৎ ১৫%।
মুখ্যমন্ত্রীর আশা, এই সিদ্ধান্তে রাজ্যে উড়ানের সংখ্যা বাড়বে। বণিকমহলও এতে কিছুটা রুপোলি রেখা দেখছে। যেমন বণিকসভা ফিকি-র সিনিয়র প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ঘোষ মনে করছেন, এটা রাজ্যের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ। “বলা যেতে পারে, আগামী দিনে শিল্পক্ষেত্রে বড়সড় উন্নয়নের পথে প্রথম ধাপ।” মন্তব্য তাঁর। যদিও সিদ্ধান্তটি মূল লক্ষ্যসাধনে এখনই কতটা কার্যকর হবে, বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেই সংশয় দানা বেঁধেছে বিমান পরিবহণ শিল্পের কিছু মহলে। কী বলছে বাস্তব চিত্র?
বাস্তব বলছে, অন্ডাল বিমানবন্দর চালু হয়নি। ফলে সেখানে কর মকুব হলেও বিমানসংস্থার লাভ নেই। কোচবিহারেও এক হাল। সেখানে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে যাতে ৭০ আসনের ছোট যাত্রী-বিমান ওঠা-নামা করানো যায়, রাজ্য তার চেষ্টা চালাচ্ছে। কাজ শেষ হতে অম্তত আড়াই বছর। কিন্তু রানওয়ে হলেও কোচবিহারে নিয়মিত উড়ান শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ যথেষ্ট। কেন?
কারণ, গো এয়ার বা ইন্ডিগো’র ছোট বিমান নেই। তারা চালায় ১৮০ আসনের এয়ারবাস-৩২০। অদূর ভবিষ্যতে ছোট বিমান কেনার পরিকল্পনাও তাদের নেই। ছোট বিমান রয়েছে যাদের, সেই জেট, স্পাইসজেট ও এয়ার ইন্ডিয়া-র তরফে বিশেষ আশাপ্রদ কথা শোনা যায়নি। স্পাইসজেট জানিয়েছে, তারা পূর্ব ভারতে ছোট বিমান চালায় না, কোচবিহারে চালাতে গেলে উত্তর বা দক্ষিণ ভারতের রুট থেকে বিমান তুলে আনতে হবে। কলকাতায় জেট ও এয়ার ইন্ডিয়া’র ছোট বিমান থাকলেও কোচবিহারের ক্ষেত্রে তাদের অন্য রুটেরই বিমান আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কোচবিহারে কত যাত্রী মিলবে, তা যাচাই না-করে কেউ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। সংস্থাগুলির কর্তাদের কারও কারও বক্তব্য, কলকাতা থেকে কোচবিহার ঘুরে গুয়াহাটি বা বাগডোগরায় উড়ান চালানো গেলে লাভজনক হতে পারে। তখন কলকাতা-কোচবিহার রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী না-হলেও গুয়াহাটি বা বাগডোগরার যাত্রী দিয়ে ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে ইঙ্গিত, কোচবিহারে কর মকুবের ঘোষণাও এই মুহূর্তে খুব সাড়া ফেলতে পারেনি। অন্য দিকে বাগডোগরায় দৈনিক গড়ে কুড়িটি বিমান ওঠানামা করে। কর মকুব হওয়ায় সেখানে উড়ানবৃদ্ধির আশায় রয়েছে মহাকরণ। বিমানসংস্থারাও জানাচ্ছে, বাগডোগরায় জ্বালানির দাম দিল্লি-কলকাতা-গুয়াহাটি-র কম। বাগডোগরা থেকে ওই তিন শহরেই উড়ান চলে, তাই বাগডোগরায় যতটা সম্ভব তেল ভরে নেওয়ার চেষ্টা হয়। তবু এতে খুব লাভের মুখ দেখা যাবে এমনটা ভাবা হচ্ছে না। এক বিমানসংস্থার কর্তার কথায়, “সরকারের সিদ্ধান্ত ভাল। কিন্তু আমাদের লাভ কোথায়? বাগডোগরায় যতটা জ্বালানি তুলছিলাম, হয়তো এখন তার সামান্য বেশি তুলব। সুবিধা হবে তখনই, যখন অতিরিক্ত উড়ান চালানো যাবে।”
এবং বাড়তি উড়ান চালানোটা নির্ভর করছে যাত্রী কত বাড়বে, তার উপরে। “জ্বালানির দামে কত ছাড় পেলাম, সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক।” দাবি করছেন তিনি।
ফলত, বিমানসংস্থারা এখনই বিরাট কিছুর সম্ভাবনা দেখছে না। বরং একটি সংস্থার কর্তা বলছেন, “এ বার বাগডোগরায় উড়ানপিছু খরচ বড়জোর হাজার তিরিশ টাকা কমবে। এক ঘণ্টার উড়ান চালাতে এখন পড়ে গড়ে ছ’লাখ। সে তুলনায় এ তো নগণ্য!” ওঁদের মতে, বাগডোগরায় রাতে নিয়মিত যাত্রী-বিমান ওঠা-নামা শুরু হলেও খুব জোর দু’-তিনটে উড়ান বাড়বে। তাতে উন্নয়নের চিত্রটা এক ধাক্কায় অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিমান পরিবহণ মহলে যে প্রশ্নটি প্রকট হয়ে উঠেছে, তা হল: কলকাতায় জ্বালানি-করে আর একটু বেশি সুবিধা কেন দেওয়া হল না?
কলকাতা থেকে নিয়মিত অভ্যন্তরীণ (দেশের মধ্যে) উড়ান চালায় পাঁচটি সংস্থা গো এয়ার, ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট ও জেট। সকলেরই বক্তব্য, কলকাতায় কর ছাড় আরও বেশি হলে উড়ানসংখ্যা বাড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকত। এক সংস্থার কর্তার কথায়, “এই মুহূর্তে কলকাতার তুলনায় প্রায় প্রতিটি শহরে বিমান-জ্বালানির দাম কম। তাই আমাদের অন্যত্র তেল ভরে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। কলকাতায় দাম কমে গেলে এখানেই তেল তুলতে হুড়োহুড়ি লেগে যেত। জ্বালানি বিক্রিও হতো বেশি।” কলকাতায় এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত বলেন, “করছাড় সংক্রান্ত নির্দেশের কপি হাতে পেলে আমরা চিঠি লিখে সরকারকে বলব কলকাতার ব্যাপারটা ভাবতে।”
রাজ্য প্রশাসনের কী অবস্থান?
প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “একটি সদর্থক সিদ্ধান্তের ফল দেখতে হলে কিছু দিন অপেক্ষা করা দরকার। তার পরে না হয় নতুন ভাবে চিন্তা-ভাবনা করা যাবে।”

দরপঞ্জি
শহর মূল্য*
দিল্লি ৬৬ হাজার
মুম্বই ৬৮ হাজার
চেন্নাই ৭২ হাজার
কলকাতা ৭৬ হাজার
* প্রতি কিলোলিটার বিমান-জ্বালানির গড় মূল্য, টাকায়

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.