বাগডোগরায় বিমান-জ্বালানির উপর আর কর নেবে না রাজ্য। একই নীতি প্রযোজ্য হবে কোচবিহার এবং নতুন অন্ডাল বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও। মঙ্গলবার মহাকরণে এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুম্বইয়ে সাম্প্রতিক শিল্প সম্মেলনের পর তাঁর এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দরেও জ্বালানির দামে কর ছাড়ের সুবিধে মিলবে, তবে শর্তসাপেক্ষে।
মহাকরণের খবর, আপাতত তিন বছরের জন্য এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এত দিন রাজ্যের বিমানবন্দর (কলকাতা ও বাগডোগরা) থেকে কোনও বিমান জ্বালানি নিলে ৩০ শতাংশ কর নিত রাজ্য সরকার। এই কর যে রাজ্যগুলিতে সব চেয়ে বেশি, পশ্চিমবঙ্গ তাদের মধ্যে অন্যতম। এমনকী দিল্লি-মুম্বইয়েও এই করের হার কলকাতার চেয়ে কম। তাই, কলকাতা থেকে উড়ানের সংখ্যা বাড়াতে হলে রাজ্যকে জ্বালানি-করের পরিমাণ কমাতে হবে বলে অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল বিমানসংস্থাগুলি।
এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল রাজ্যে (বিশেষত উত্তরবঙ্গে) বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ দিন বলেছেন, “উড়ান বাড়লে আরও বিনিয়োগ আসবে।” বাগডোগরায় ইতিমধ্যেই রাতে বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের আশা, জ্বালানিতে কর-ছাড় দিলে বাগডোগরা থেকে উড়ান সংখ্যা আরও বাড়বে। উপরন্তু অন্য দুই বিমানবন্দর থেকেও উড়ান চালাতে আগ্রহী হবে বিমানসংস্থাগুলি। মহাকরণ সূত্রের খবর, বাগডোগরায় জ্বালানি-কর মকুব করার পিছনে পাহাড়ে পর্যটক টানার কৌশলও রয়েছে রাজ্যের। একটি বিমানসংস্থার কর্তা যদিও বলেন, “আগে পাহাড় শান্ত হোক। তার পর মানুষ যাতায়াত করবেন।” |
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, “আমরা চাইছি কলকাতা তথা রাজ্য থেকে আরও বিমান চলাচল করুক। নতুন নতুন বিমানসংস্থা আসুক।” তবে বাগডোগরা, কোচবিহার এবং অন্ডালের ক্ষেত্রে পুরো ৩০ শতাংশ কর মকুব করা হলেও কলকাতা বিমানবন্দরে মকুব হবে তার অর্ধেক, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ। এবং সেটাও শর্তসাপেক্ষে। শর্তটি হল, কলকাতা থেকে ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে কোনও বিমানসংস্থা যত জ্বালানি নিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে (২০১৩-’১৪) পরিমাণ সেই একই থাকলে কোনও কর-ছাড় মিলবে না। জ্বালানির পরিমাণ গত বছরের চেয়ে বেশি হলে তবেই ওই অতিরিক্ত অংশের উপর ছাড় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, গত বছর যে সংস্থা ১০০ টাকার জ্বালানি কিনেছে, এ বার তারা ১২০ টাকার জ্বালানি নিলে অতিরিক্ত ওই ২০ টাকার উপরে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। সরকারের শর্ত জেনে একটি বিমানসংস্থার কর্তা বলেন, “এত দিন কলকাতা থেকে কম জ্বালানি নেওয়া হতো। এ বার হিসেব করে দেখতে হবে বেশি তেল নিলে কতটা লাভ হবে।”
ইতিমধ্যে কোচবিহারের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ৫ হাজার ফুট করা হচ্ছে। তাতে খরচ হবে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এই কাজের জন্য এ দিনই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবালের হাতে ১৫ কোটি টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। রানওয়ের কাজ শেষ হলে কোচবিহার থেকে নিয়মিত উড়ান চালানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বেদপ্রকাশ। তবে অন্ডাল থেকে বিমান পরিষেবা শুরু করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
|