রক্তাল্পতায় ভুগছে বাজার
মবেশি ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা একটু বেশি আয়ের সন্ধান করেন, সময়টা তাঁদের জন্য আদৌ ভাল যাচ্ছে না। রক্তাল্পতায় ভুগছে শেয়ার বাজার। লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ কেউই বাদ যায়নি এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।
বড় রকমের পতনের কবলে পড়েছে বন্ড বাজারও। এই দুই বাজারে ধস নামায় স্বাভাবিক ভাবেই দুঃসময় চলছে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পেও। ইক্যুইটি ফান্ড, ঋণপত্র নির্ভর ফান্ড এবং ব্যালান্সড ফান্ড, সবারই শক্তিক্ষয় হয়েছে বেশ খানিকটা করে। ফলে আস্থা কমেছে জনগণের। একই কারণে দুঃসময় চলছে বিমা কোম্পানির বাজার নির্ভর ইউলিপ প্রকল্পেও। পাকাপাকি উত্থানের আশু কোনও সম্ভাবনা না-থাকায় এই শ্রেণির লগ্নিকারীরা চিন্তায় পড়েছেন টাকা কোথায় রাখবেন তা নির্ণয় করতে না পেরে। পুরনো লগ্নিকারীদের পোর্টফোলিওর মূল্য অনেকটাই কমে এসেছে। লোকসান কমাতে বর্তমান দামেই শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি বিক্রি করে বেরিয়ে আসবেন কি না, এই নিয়েও ধন্দে অনেকেই। সদুত্তর নিশ্চিত ভাবে দিতে পারছেন না কেউই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত আরও একটি শ্রেণি শেয়ার, বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায় কর্মরত কয়েক লক্ষ এজেন্ট এবং ব্রোকার। এঁদের ব্যবসা এক রকম তলানিতে। বড় ব্রোকারেজ সংস্থাগুলিতে কর্মরত বহু মানুষের চাকরির নিশ্চয়তা অনেকটাই কমেছে। এরই মধ্যে কাজ হারিয়েছেন অনেক কর্মী। সারদা এবং সহারার মতো কোম্পানির হয়ে যাঁরা বাজার থেকে আমানত সংগ্রহ করতেন তাঁদেরও কপাল পুড়েছে এই ধরনের কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার ও সেবি ব্যবস্থা নিতে শুরু করায়। সব মিলিয়ে বহু মানুষের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিদেশি লগ্নিকারীরা, যারা বহু দিন বাজারকে শক্তি জুগিয়েছিল তারা হঠাৎ বড় মাপের লগ্নি সরিয়ে নেওয়ায় বাজারের কাঠামো বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে এক দিকে যেমন ভুগছেন লগ্নি- কারীরা, অন্য দিকে তেমন সঙ্কটে এজেন্ট-ব্রোকার হিসেবে নিযুক্ত অসংখ্য মানুষ।
লগ্নিকারীদের তবুও একটি উপায় আছে। তাঁরা সাময়িক ভাবে ফিরে আসতে পারেন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পে। এই দুই জায়গায় সুদের হার এখনও বেশ ভাল। সমস্যা উঁচু হারের করদাতাদের। মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ারে লগ্নিতে যে-করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়, ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে তার অনেকটাই নেই। ফলে এখানে টাকা রেখে তাঁদের প্রকৃত আয় অনেকটাই কম হবে। তবুও উপায় নেই। তার কারণ, এই দুই জায়গায় মূল টাকা সুরক্ষিত থাকবে। এ কথা মাথায় রেখে ভিড় বাড়ছে ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের আমানত কাউন্টারে। গ্রামের মানুষও আর ভুঁইফোঁড় কোম্পানিতে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না। এঁদেরও ফিরতে হবে সনাতন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে।
আমানতের একটি বড় অংশ ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে প্রবাহিত হলেও তাতে এজেন্ট এবং ব্রোকারদের সমস্যার সুরাহা খুব একটা হবে না। ব্যাঙ্ক-আমানত সংগ্রহের উপর কোনও কমিশন দেওয়া হয় না। ডাকঘরে তা দেওয়া হলেও নামমাত্র। এবং এখানেও কিছু কিছু প্রকল্পে কমিশনই দেওয়া হয় না। এই শ্রেণিভুক্ত মানুষের জন্য সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হলে তা বহু পরিবারের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব করবে।
নতুন লগ্নিকারীদের জন্য অবশ্য সময়টা বেশ ভাল। এটাই কম জলে মাছ ধরার সময়। রুপোর দরে সোনা কেনার সুযোগ। এমন অনিশ্চিত বাজারে ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা প্রকৃত ভাল শেয়ার দীর্ঘমেয়াদের জন্য কিনে রাখেন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু সময়কালে লক্ষ্মীলাভ করেন। প্রশ্ন হল, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি ঝুঁকি নেবেন। বাজারের তলানি কোনটা, তা নিশ্চয় করে কেউই বলতে পারবেন না। এই কারণে শেয়ার কিনতে হবে প্রতিটি পতনে।
একই কথা প্রযোজ্য ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পের ক্ষেত্রে। যাঁরা বিশ্বাস করেন বাজার আরও অনেকটা পড়তে পারে, তাঁরা সাময়িক ভাবে ব্যাঙ্কের ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে টাকা রেখে অপেক্ষা করতে পারেন পতনের জন্য। বন্ডের লগ্নিকারীরা এখনই বাজার থেকে না-কিনে ইস্যুকারী সংস্থা থেকে সরাসরি বন্ড কিনতে পারেন পাবলিক ইস্যুর সময়ে। এতে বাজারজনিত ঝুঁকি কম থাকবে।
এজেন্ট এবং ব্রোকারদের ভাল জনসংযোগ থাকে। লগ্নির বাজারের এই দুর্দিনে এঁরা বিভিন্ন লগ্নি প্রকল্পের পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা মতো নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য বিপণনের এজেন্সি নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। সরাসরি বিপণন এঁদের নতুন আয়ের পথ দেখাতে পারে। ছোট-বড় বহু সংস্থা এই বিরাট বাহিনীকে ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারে তাদের পণ্য ঘরে ঘরে অতি সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এতে লাভবান হতে পারে দু’পক্ষই। এঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে বিমা বিক্রির কাজেও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.