হপ্তা খানেক পরেই জন্ম দিতে চলেছিলেন প্রথম সন্তানের। হবু বাবার সঙ্গে সেই আনন্দ ভাগ করে নিতে শনিবার সন্ধায় ওয়েস্টগেট শপিং মলে এসেছিলেন এলিফ ইয়াভাজ।
একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাইরোবির ওই শপিং মলে তখন উৎসবের মেজাজ। এমন সময় হঠাৎই হানা দিল মুখোশধারী এক দল জঙ্গি। শুরু হল অবিরাম গুলিবর্ষণ। বান্ধবী এলিফ ও হবু সন্তানকে তখন বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন রস ল্যাঙ্গডন। এলিফকে প্রতি মুহূর্তে আশ্বাস দিয়ে চলেছেন, “ভয় পেও না, কিচ্ছু হবে না। ঈশ্বর এতটা নিষ্ঠুর নন।”
তবে শেষ রক্ষা হল না। রবিবার রাতে জঙ্গিদের গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল রস ও এলিফের দেহ। রেহাই পেল না গর্ভের শিশুটিও। |
এলিফ-রস। ছবি ডেলি মেলের সৌজন্যে।
|
পুলিশ সূত্রের খবর, এলিফ ইয়াভাজ আদতে হল্যান্ডের বাসিন্দা। গবেষণার কাজে দীর্ঘদিন ধরে কেনিয়ায় ছিলেন তিনি। নাইরোবিতে এসে অস্ট্রেলীয় নাগরিক রসের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। পেশায় আর্কিটেক্ট রসের সমাজসেবী মনোভাব মন কাড়ে এলিফের। রসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজসেবার কাজে নেমে পড়েন তিনিও। এড্স-এর বিনামূল্যে চিকিৎসা কী ভাবে করা যায় সেই প্রচেষ্টাতেই মগ্ন হন রস ও এলিফ। গাঢ় হয় বন্ধুত্ব। যা আস্তে আস্তে পরিণতি পায় প্রেমে।
পরিবার-পরিজন জানাচ্ছেন, মৃত্যুর সময় সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এলিফ। রস ও এলিফের মৃত্যুতে শোকাহত তাঁদের বন্ধুবান্ধবও। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো উপচে পড়ছে শোকবার্তায়। রস যে সংস্থার হয়ে কাজ করতেন তার ডিরেক্টর জানিয়েছেন, “বন্ধু তথা সহকর্মী রসের মৃত্যুতে আমরা দুঃখিত। ও সত্যিই প্রতিভাবান ছিল। হাসিখুশি থাকত সব সময়। পূর্ব আফ্রিকায় সংস্থার যে প্রজেক্টগুলি চলছে তাতে রসের নেতৃত্ব ছিল প্রশংসনীয়।” রস ও এলিফের বন্ধু আরা নেকোয়ই জানান, “খুব মিস করব ওঁদের। রস ও এলিফের পরিবারের প্রতি সমব্যথী আমরা।”
ওয়েস্টগেট মলে জঙ্গি হানায় এখনও পর্যন্ত যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে তিন জন ব্রিটিশ নাগরিক, দু’জন ফ্রান্সের। মৃত্যু হয়েছে এক মার্কিন কূটনীতিকের স্ত্রীর। জঙ্গি হানার শিকার হয়েছেন ঘানার কবি তথা রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কূটনীতিক কোফি অউনরের। নিহতদের দেহ ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কেনিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে।
|