মাথা ঢাকা সাদা ওড়নায়। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের একের পর এক নির্দেশ দিয়ে চলেছে বছর তিরিশের এক মহিলা।
নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিং মলে জঙ্গি হানার তিন দিনের মাথায় একটি সিসিটিভি ফুটেজ হাতে এল কেনিয়া সেনার। তাতেই দেখা যাচ্ছে এই ছবি। সন্দেহভাজন ওই মহিলার নাম সামান্থা লেউথওয়েট। দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জোসেফ ওলে লেঙ্কুর দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে শুধু পুরুষ জঙ্গিদেরই দেখা গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মলের ভিতরে পুরুষ জঙ্গিরাই মেয়েদের পোশাক পরে নির্দেশ দিচ্ছিল। তাই এই ঘটনার পিছনে আদৌ কোনও মহিলার হাত ছিল না বলে দাবি তার।
|
সামান্থা লেউথওয়েট |
কে এই সামান্থা লেউথওয়েট? ওয়েস্টগেটে জঙ্গি হানায় হঠাৎ তার নাম এলই বা কেন?
পুলিশি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ৭ জুলাই লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে সামান্থার নাম উঠে এসেছিল প্রথম বার। লন্ডনের টিউব রেলে যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে অন্যতম আত্মঘাতী জঙ্গি ছিল সামান্থার স্বামী লিন্ডসে। সে দিনের সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন প্রায় পঞ্চান্ন জন। আহত সাতশোরও বেশি। পুলিশ পরে জেরা করে সামান্থাকে। তখন সামান্থা দাবি করেছিল, বিস্ফোরণ সম্পর্কে কোনও কিছুই জানত না সে। আট বছর পর কাকতালীয় ভাবে একটি জঙ্গি হানার ঘটনায় উঠে এসেছে সামান্থার নাম। গোয়েন্দা মহলে যে ‘শ্বেতাঙ্গ বিধবা’-নামেই পরিচিত।
পুলিশ সূত্রের খবর, সামান্থার জন্ম আদতে আয়ার্ল্যান্ডে। তার বাবা কাজ করতেন সেনাবাহিনীতে। দু’টি মেয়েও আছে তার। গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সামান্থা। এ ছাড়াও, আফ্রিকার একটি মহিলা জঙ্গি সংগঠনকেও বিভিন্ন সময় নানা ভাবে মদত জুগিয়েছে। ইউরো ২০১২ চলাকালীন বিভিন্ন ধর্মস্থানে ঘটা বিস্ফোরণেও তার হাত ছিল বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। লন্ডন বিস্ফোরণের পরে সামান্থার মোম্বাসার ভাড়াবাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকে কিছু বোমা তৈরির রাসায়নিকও উদ্ধার হয়। এই ধরনের রাসায়নিকই লন্ডন বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার পরই ব্রিটিশ পুলিশের ‘হিটলিস্টে’ উঠে আসে সামান্থার নাম।
ওয়েস্টগেটে জঙ্গি হানার দায় স্বীকার করেছে আল সাহবাব নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে সামান্থার যোগাযোগ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে পুলিশ। ইজরায়েলি কম্যান্ডোদের সাহায্য নিয়ে কেনিয়া সেনা সোমবার বিকেলে ওয়েস্টগেটের গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। তার পরই মলের ভিতরে ঢুকে পড়ে তারা। বার করে আনা হয় আটকে থাকা বেশ কয়েক জনকে। বিকেলের পর থেকে সেনাবাহিনীর তরফে বার বার দাবি করা হচ্ছে যে শপিং মল এখন তাদের দখলে। এখনও ভিতরে ঠিক কত জন পণবন্দি রয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে না।
লেঙ্কু সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, দু’জন জঙ্গির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে শপিং মল থেকে। তবে যাকে নিয়ে এত বিতর্ক সেই সামান্থা এখন কোথায় তা নিয়ে ধন্দে কেনিয়া পুলিশ। |