ফের শিখবিদ্বেষের ঘটনা মার্কিন মুলুকে। এ বার আক্রান্ত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধ্যাপক, প্রভজ্যোত সিংহ।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে নিউ ইয়র্কের কাছে হারলেম এলাকায় নিজের বাড়ির সামনেই এক দল দুষ্কৃতী আক্রমণ করে বছর তিরিশের প্রভজ্যোতকে। রক্তাক্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
|
প্রভজ্যোত সিংহ |
‘স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ারস’ বিভাগের ওই অধ্যাপকের বয়ানে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে স্ত্রী ও এক বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পর তাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে বাড়ির সামনেই কিছু ক্ষণের জন্য হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তখনই ২০ জন ছেলে মোটর বাইকে করে এসে ঘিরে ফেলে তাঁকে। কোনও বিপদ আঁচ করার আগেই শুরু হয়ে যায় মার, গালাগালি। হামলাকারীদের মুখ থেকে ছিটকে আসতে থাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’, ‘ওসামা’ এই ধরনের কিছু টুকরো টুকরো শব্দ। মাটিতে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত এলোপাথাড়ি চড়-ঘুসি-লাথি মারতে থাকে তারা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও অনুমান, ধর্মীয় বিদ্বেষই এই হামলার কারণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পুলিশের কাছে হামলাকারীদের কোনও বর্ণনাই দিতে পারেননি প্রভজ্যোত।
রবিবার প্রভজ্যোত সিংহের বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি সিমরনজিৎ সিংহের একটি অনলাইন পোস্ট বিষয়টিকে প্রকাশ্যে এনেছে।
সিমরনজিৎ নিজেও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই গবেষক। ওই পোস্টে সিমরনজিৎ লিখেছেন, “শনিবার রাতে আমি খবর পাই, আমাদের গোষ্ঠীরই এক বন্ধুকে প্রকাশ্য রাস্তায় নৃশংস ভাবে পিটিয়েছে এক দল দুষ্কৃতী। কিন্তু ভাবতে পারিনি, ওই ব্যক্তি আমার কাছের বন্ধু প্রভজ্যোত। তাঁর চোয়ালের হাড় ভেঙেছে, ভেঙেছে একাধিক দাঁত। ভাল করে কথাও বলতে পারছেন না তিনি।” ওই পোস্টে সিমরনজিৎ এ-ও দাবি করেছেন, তাঁর বন্ধু দীর্ঘদিন ধরেই ওই বর্ণবিদ্বেষী দুষ্কৃতীদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলেন।
পোস্টটিতে সিমরনজিৎ আরও জানিয়েছেন, অধ্যাপনার পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাও করতেন প্রভজ্যোত সিংহ। সামাজিক কাজকর্মে এগিয়ে আসার জন্যও সুখ্যাতি ছিল তাঁর। সিমরনজিতের কথায়, প্রভজ্যোত সিংহ “প্রান্তিক মানুষদের জন্যই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”
কিন্তু সিমরনজিতের আক্ষেপ, শুধু লম্বা দাড়ি আর মাথার পাগড়ি দেখেই তাঁকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে চিহ্নিত করে ফেলল বর্ণবিদ্বেষী দুষ্কৃতীরা। আর এ ধরনের ঘটনা মোটেও প্রথম নয়। আমেরিকায় বসবাসকারী শিখেদের অনেকেরই এমন ঘটনার অভিজ্ঞতা হয়েছে এর আগেও।
‘কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামি কোরিলেশনস’ (সিএআইআর)-এর তরফে পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কাউন্সিলের আধিকারিক সাদিয়া খালিক বলেছেন, “এই ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা এ বার মুখ খুলুক।” |