রাজ্যকে চাপ দিতে ছাত্রদের ফতোয়া গুরুঙ্গের
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর ফতোয়া জারি করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার মাউন্ট হারমন স্কুলের মাঠে ছাত্র সংগঠনের সভায় তিনি বলেন, “পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীদের ছোট থেকেই আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাতে শুক্রবার শুরু হবে ‘মিশন গোর্খাল্যান্ড’। ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের নিয়ে দল গড়া হবে। ২০-২৫ জনের ওই দলগুলি সপ্তাহে এক দিন স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করবে। আমরা মনে করি শিক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হল গোর্খাল্যান্ডের দাবি।”
পাহাড়ের রাজনীতিকদের মতে, বন্ধ তুলতে মোর্চাকে বাধ্য করানোর পরে দার্জিলিংকে পুরোপুরি ছন্দে ফেরাতে কড়া পদক্ষেপ জারি রেখেছে রাজ্য। ২৭ তারিখ যাতে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) নতুন চিফ এগ্জিকিউটিভ বাছাই হয় তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে তারা। সে দিন জিটিএ-র নতুন প্রধান বাছাই না-হলে রাজ্য সরকার যে আরও কড়া পদক্ষেপ করবে, সেই বার্তাও পৌঁছেছে মোর্চার কাছে। মূলত সেই কারণেই রাজ্যের উপরে পাল্টা চাপ দিতে পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীদের ‘মিশন গোর্খাল্যান্ড’-এ সামিল হওয়ার ফতোয়া দিলেন গুরুঙ্গ।
দার্জিলিঙের মাউন্ট হারমন স্কুলের মাঠে ছাত্র সংগঠনের
সভায় বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার। ছবি: রবিন রাই।
ঘটনাচক্রে এ দিনই মহাকরণে চিঠি পাঠিয়ে পাহাড় থেকে তিন দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি আর পি গুপ্ত। কেন ওই সিদ্ধান্ত, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করা হয়নি। ঘটনা হল, সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যে সব আর্জি জানিয়েছিল মোর্চার প্রতিনিধি দল, তার অন্যতম ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য এ দিনই জানিয়ে দিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব নয়। সে কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাহাড়ের সমস্ত স্তরের বাসিন্দাদের আবেদন মেনেই দাজিলিং পুরোপুরি ছন্দে না-ফেরা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার কথা ভাবা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ের পড়ুয়াদের আন্দোলনে সামিল করার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই পাহাড়ের একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক, বিশিষ্টজনদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু গুরুঙ্গ আজ যে ঘোষণা করেছেন, তাতে সেই পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছে রাজ্য। অভিভাবকদেরও বক্তব্য, “যখন যা খুশি বলে দিলেই হল! দেশে আইন বলে কিছু নেই নাকি!” পাহাড়ের একাধিক বেসরকারি স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক জানান, এমন চললে তাঁরা অন্যত্র স্কুল সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হবেন।
দার্জিলিঙের মাউন্ট হারমান স্কুলের মাঠে বিমল গুরুঙ্গের সভায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়।
মোর্চার অন্দরের খবর, নানা ভাবে কোণঠাসা হওয়ার জেরেই নানা হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের কর্তৃত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোর্চা সভাপতি। পাশাপাশি, স্কুলকে ছাড় দিয়েও পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচারের সিদ্ধান্ত স্ববিরোধিতা কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তাতে গুরুঙ্গ কিছুটা বিব্রত হলেও তাঁর যুক্তি, “তেলঙ্গানার আন্দোলনের সময়ে ৫ বছর সেখানে ঠিক মতো পড়াশোনা হয়নি। এখানে এক মাস বন্ধ হতে না-হতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ হইচই শুরু করেন। তা ছাড়া, পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাচ্ছে কোথায়?”
গোর্খাল্যান্ড নিয়ে পাহাড়ে প্রচারের পাশাপাশি ২১ জন পড়ুয়ার একটি দল দিল্লিতে গিয়ে নানা স্তরে পৃথক রাজ্যের দাবিতে স্মারকলিপি দেবে বলেও এ দিন ঘোষণা করেছেন গুরুঙ্গ। সেই যাতায়াতের খরচ তুলতে পাহাড়ের সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের এক দিনের মাইনে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২০ অক্টোবরের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সদর্থক পদক্ষেপ না-করলে প্রয়োজনে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের হুমকিও ফের দিয়েছেন।
কিন্তু গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি যখন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছে, (১৯ অক্টোবর কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানেই পরের কর্মসূচি ঠিক হবে।) তখন গুরুঙ্গ কেন বারবার একক সিদ্ধান্ত নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে কমিটির অন্দরেই। যদিও গুরুঙ্গ-ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁরা দলের তরফে আলাদা কর্মসূচি নিলে কমিটির কিছু বলার থাকতে পারে না। ওই যুক্তি অবশ্য কমিটির শরিকদের একাংশ মানতে নারাজ। তাঁদের আশঙ্কা, পড়ুয়াদের সামিল করতে যে আন্দোলনের কথা এ দিন ঘোষণা হয়েছে, তাতে পাহাড়ের অভিভাবকদের বড় অংশের সমর্থন হারাতে হবে। কমিটি সূত্রেই দাবি করা হয়েছে, সাধারণ সমর্থকরাও আন্দোলনের প্রতি আগের মতো উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। পাহাড় জুড়ে দোলাচল বাড়তে থাকায় মোর্চার মিটিং-মিছিলে আগের মতো জনসমাগম হচ্ছে না। মোর্চার নেতা-কর্মীদের অনেকেই গ্রেফতারি এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। জিটিএ সদস্যদের একাংশও চিকিৎসা ও নানা জরুরি কাজের কথা বলে বাইরে চলে গিয়েছেন। মোর্চা-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের একাংশও গা-ঢাকা দিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ের আরও অন্তত তিন জন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তাই কমিটির শরিকদের একাংশ শুধু নন, দলের অনেকেই এখন জিটিএ চালিয়ে উন্নয়নে গতি আনার ফাঁকে আন্দোলনের পক্ষপাতী।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.