|
|
|
|
বিধিভঙ্গ ও অনৈতিকতার অভিযোগ |
প্রচারে পৃথক জেলা দাবি দল নির্বিশেষে |
অনির্বাণ রায় ও নিলয় দাস • আলিপুরদুয়ার |
জেলার দাবিকে কেন্দ্র করে আরও একটা ভোট হচ্ছে আলিপুরদুয়ারে!
গত দু’দশকে, পুরসভা থেকে লোকসভা, প্রতিটি ভোটেই কালজানি-নোনাই দুই নদী পাড়ের এই শহরে নিয়ম করে জেলা ঘোষণার দাবি উঠেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের স্লোগানের পাশাপাশি কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দেওয়াল লিখন-ফ্লেক্সে জেলা ঘোষণার দাবিও সমান মর্যাদা পেয়েছিল। দলের নেতাদের দাবি, সে কারণেই গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরসভা এলাকায় বামেদের থেকে ৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল জোট। বিধানসভায় রাজ্যে পরিবর্তনের পরে দু’দলের জোট ভেঙেছে। জেলার দাবি রাজ্য সরকারের কাছে স্বীকৃতিও পেয়েছে। জেলা নিয়ে সবর্দল বৈঠক-প্রশাসনিক বৈঠক পর্বও শেষ। তবুও এবারের আলিপুরদুয়ার পুর-ভোটের প্রচারের বেশির ভাগটাই দখল করেছে জেলার দাবি। শাসক-বিরোধীদের দাবি-পাল্টা দাবি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ।
গত পনেরো বছর ধরে কংগ্রেসের দখলে থাকা এই পুরসভা দখল করা স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের মর্যাদার প্রশ্ন। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলায় দলের ‘খারাপ ফলের’ পরে আলিপুরদুয়ার পুরসভা মর্যাদার লড়াইকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় নির্বাচনী প্রচারে এসে বলেছেনও, “পুরবোর্ড তৃণমূলকে দিন, আর জেলা নিন।”
এই প্রচারকে কংগ্রেসের তরফে ‘বিধিভঙ্গ’ থেকে শুরু করে ‘অনৈতিক প্রচার’ বলে অভিযোগ জানালেও দলেরা নেতারা একান্তে স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই দাবির মোকাবিলা করা কিছুটা কঠিনই। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে জেলা গঠন নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেই জেলা গঠন নিয়ে প্রশাসন এবং দলীয় স্তরে বৈঠক হয়, এবং জেলা যে হচ্ছেই তা চূড়ান্ত হয়। তার পরেও জেলা গঠনে এত সময় লাগছে কেন। আসলে কংগ্রেস বোর্ডের উন্নয়ন দেখে তৃণমূল বিভ্রান্ত হয়ে এমন স্বস্তা প্রচার চালাচ্ছে।” কংগ্রেসের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “জেলা যে হবে সেটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে তৃণমূলের বাড়তি কিছু বলারই থাকতে পারে না। আলিপুরদুয়ারকে জেলা ঘোষণা করতেই হবে।”
তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জহর মজুমদারের সোজাসুজি বক্তব্য, “জেলা হবে বলে আমরা প্রচার করছি, তাতে মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভায় তো দুর্নীতি ছাড়া উন্নয়ন মূলক কাজ করেনি তা মানুষ বুঝছেন। তাই তাদের দলের বহু কর্মী নেতারা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।” তবে শুধু জেলা ঘোষণার প্রতিশ্রুতিতেই আশ্বস্ত হতে পারছে না তৃণমূল। দলের সবর্ভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের পাশাপাশি প্রচার করে গিয়েছেন অভিনেতা জুন মাল্যও।
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের দূর্গ ‘ধাক্কা’ খেয়েছে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তাই শাসক দলের মতোই কংগ্রেসেরও ‘মর্যাদা’র লড়াই। ১৯৭২ সালের পরে গত বিধানসভা নির্বাচনেই প্রথম আলিপুরদুয়ারে কংগ্রেস বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। সে নিরিখেও, দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অটুট রয়েছে এটিও প্রমাণের তাগিদ রয়েছে কংগ্রেসের। বিদায়ী পুরবোর্ডের সাফল্য হোর্ডিং, ফ্লেক্স বানানোর পাশাপাশি সংবাদপত্রেও ফলাও করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের প্রচারের মোকাবিলায় নিয়ে আসা হয়েছে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সহ তাবড় নেতাদের।
কংগ্রেস-তৃণমূলের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ফায়দার আশায় বামেরা। কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতে তাদের লাভ দেখছেন সিপিএম নেতৃত্ব। জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “জেলার দাবিকে আমরাও সমর্থন করেছি। তবে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফায়দা তোলা যায় না। গত কংগ্রেসের বোর্ডের কাজকর্ম মানুষ ভালই জানেন। শহরের কোনও পরিকাঠানোগত উন্নয়ন হয়নি, সাধারণ মানুষও পরিষেবা পান না। আর রাজ্যে তৃণমূল যে অরাজকতা চালাচ্ছে, তাও সবাই জানতে পারছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ বামের পাশে থাকবেন।” |
এক নজরে |
• আসন ২০
• ভোটার ৪৮৫২৪
• তৃণমূল ও কংগ্রেস সব আসনে
• সিপিএম ১০ আরএসপি ৮
• ফব ২ সিপিআই ১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। |
|
|
|
|
|
|