উল্টোডাঙার মোড়ে বচসা বেধে গেল বাস কন্ডাক্টর ও একদল যাত্রীর মধ্যে।
বাসে রয়েছেন জনা দশেক যাত্রী, কিন্তু বাস ছাড়ছেন না কন্ডাক্টর। যাত্রীরা কিছু বলতে গেলেই তাঁর সাফ জবাব, এই ক’জন নিয়ে বাস চালালে পড়তায় পোষাবে না। তিনি বলেন, “অন্য দিন ভিড়ের চোটে টিকিট কাটার উপায় থাকে না, আজ লোকই নেই। এ ভাবে গেলে তো তেলের দামই উঠবে না।”
শুনে মেজাজ হারিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা ভবতোষ সরকার। বলেন, “তা হলে বাস বার করেছেন কেন?” কন্ডাক্টরের পাল্টা জবাব, “ভয়ে। না হলে পারমিট বাতিল করে দেবে।” জবাব শুনে ভবতোষবাবুর স্বরও সপ্তমে উঠল। কিন্তু তাঁকে থামিয়ে দিলেন অন্য যাত্রীরা। এর মধ্যে সিঁথির বাসিন্দা নির্মল রায় বলেন, “অটো, রিকশার ভাড়া বাড়ে, সে বেলায় মন্ত্রীদের মুখে কুলুপ। শুধু বাসের বেলায় ভাড়া বাড়বে না। বিচিত্র নীতি!” নির্মলবাবুকে সমর্থন করে আরও এক যাত্রী সৌমেন দত্ত বলেন, “ভোগান্তি আমাদেরই। বাস না থাকলে খরচ তিন গুণ বাড়ে। এর চেয়ে এক-দু’টাকা ভাড়া বাড়ালে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারি না।”
শুধু উল্টোডাঙার এই যাত্রীরাই নন, এ দিনের বাস ধর্মঘটে রাস্তায় নেমে আমজনতার কাছ থেকে এই প্রতিক্রিয়াই বার বার শুনতে হয়েছে। বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই এ দিন রাস্তায় বার হননি। অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজ সর্বত্রই তাঁর ছাপ পড়েছে। যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন তাঁরাও যে যথেষ্ট ভয়ের মধ্যেই রয়েছেন এ দিন রাস্তায় নেমে তা টের পেয়েছেন খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। ধর্মঘটে সব ঠিক আছে কি না দেখতে বেরিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে ২১৩ নম্বর রুটের একটি বাসে উঠে পড়েছিলেন তিনি। মন্ত্রীকে দেখেই এক যাত্রী বলেন, “বন্ধের মধ্যে বেরিয়েছি। একটু দেখবেন স্যার। কিছু যেন না হয়।” |
অন্য যাত্রীরাও তাতে সায় দেন। মন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আপনাদের পাশে সরকার আছে। আমরা আছি। নির্ভয়ে যাতায়াত করুন।” মন্ত্রীর অভয়বাণীর পরেও বৃহস্পতিবার পরিবহণ ধর্মঘটে যাত্রীদের ধর্মঘট সর্ম্পকে ভয়ের চিত্রটাই ধরা পড়ল শহরের রাস্তায়। যদিও বাসমালিকদের ডাকা ধর্মঘটকে উপেক্ষা করেই শহরের বিভিন্ন রুটে সকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি বাস চলে। তবে অন্য দিনের তুলনায় বাস ছিল কম। যাত্রীদের ভিড়ও অন্যান্য ব্যস্ত দিনের মতো ছিল না বলেই জানান বিভিন্ন রটের বাসচালক ও কন্ডাক্টরেরা।
ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডে সকাল থেকেই শহরের এবং দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের বাস ছিল। চালক এবং কন্ডাক্টরদের অভিযোগ, বাস থাকলেও অন্য দিনের মতো যাত্রী নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাটানগর-ধর্মতলা রুটের এক বাসের চালক বলেন, “রুটে প্রায় সব বাসই চলছে সকাল থেকে। কিন্তু ভিড় নেই।” তমলুক-ধর্মতলা রুটের আর এক বাস চালকের কথায়, “অন্য দিন সকালের বাসে যাত্রীদের জায়গা দেওয়া যায় না। আজ মাত্র পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে সকালের বাস ছেড়েছে।”
বিবাদী বাগের মিনিবাস স্ট্যান্ডে এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বিভিন্ন রুটের মাত্র দশটি মিনিবাস দাঁড়িয়েছিল। কোনও বাসে এক জন যাত্রী তো কোনওটায় বসে রয়েছেন দু’জন। ওই হাতে গোনা যাত্রীদের অভিযোগ, ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পরেও বাস ছাড়ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গড়িয়া-বিবাদী বাগ রুটের এক বাস চালক বলেন, ‘‘তেলের যা দাম, মাত্র দু’জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।” একই চিত্র পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, মৌলালি, শিয়ালদহেও। সর্বত্রই বিভিন্ন রুটের সাত-আটটি বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন দশ থেকে বারো জন যাত্রী।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ির চাপ অন্য দিনের তুলনায় ছিল কম। সকালের দিকে শহরের যান নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। তবে বেলা বাড়তেই কিছু এলাকায় যানবাহনের গতি কম থাকায় হাল্কা যানজট হয়।
কলকাতার মতো একই চিত্র সল্টলেকে। বিটি রোড থেকে ধর্মতলা বা সল্টলেক, গড়িয়াহাট, শিয়ালদামুখী রুটের বাসগুলিতেও রোজের মতো ভিড় ছিল না। মিনিবাস অবশ্য তুলনায় অনেক কম ছিল। তবে পরিবহণ দফতর যে দাবিই করুন, সরকারি বাস কম ছিল বলেই নিত্যযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ। |