মহমেডান ২ (অ্যান্টনি, টোলগে)
ওএনজিসি ১ (লভিনো) |
গোল করেই উদভ্রান্তের মতে দৌড় লাগালেন! হাত মুঠো করে শূন্যে দিলেন ছুড়ে। অদ্ভুত একটা তৃপ্তি তখন টোলগে ওজবের চোখেমুখে। ইস্ট-মোহনের বিতর্কিত অধ্যায় সরিয়ে বৃহস্পতিবার ডুরান্ডের ফাইনালে যে আবার নিজেকে ফিরে পেলেন অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। সাদা-কালো জার্সি গায়েই ইস্টবেঙ্গলের সেই চেনা ছন্দে পাওয়া গেল টোলগেকে। নিজে গোল করলেন। গোল করালেন। আর সেই সঙ্গে ঘটল প্রতীক্ষার অবসান। ওএনজিসিকে ২-১ হারিয়ে ৭২ বছর পর ডুরান্ড এল মহমেডান তাঁবুতে।
ম্যাচ শেষে টোলগেকে ঘিরে সাজঘরে উৎসবের মেজাজ। ফুটবলারদের সঙ্গে তাতে মাতোয়ারা মহমেডান প্রেসিডেন্ট সুলতান আমেদ এবং অন্যতম শীর্ষ কর্তা কামারুদ্দিন। সেখানেই ক্লাব প্রেসিডেন্টের ঘোষণা, আই লিগে প্রথম ম্যাচের আগে ফুটবলারদের নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে। স্টেডিয়ামের গেটে তখন ভিড় করেছেন দরিয়াগঞ্জ, জামা মসজিদ, আজমেরি গেট, গাঁধিনগর থেকে আসা হাজার কুড়ি দর্শক। প্রিয় ক্লাবের সাফল্যের দিনে প্রত্যেকেই জয়ের নায়কদের ছুঁতে চাইছেন। এরই মাঝে মহমেডানের ডুরান্ড জয়ে শুভেচ্ছা জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু মহমেডান নায়ক টোলগে ওজবে সাফল্যের দিনেও অভিমানী। বলছিলেন, “জবাব তো মাঠেই দিতে হয়। সবে তো মরসুম শুরু। এখনও অনেক পথ চলতে হবে। আরও গোল করে সমালোচনার জবাব দিতে চাই। এই জয় অনুপ্রেরণা দেবে।” |
অবশেষে চেনা টোলগের প্রত্যাবর্তন। বৃহস্পতিবার। |
শুরু থেকেই এ দিন আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন টোলগে। কিন্তু পেন না থাকার কারণে মহমেডানের মাঝমাঠ থেকে বলের সাপ্লাই লাইনটাই বন্ধ হয়ে গেছিল। খেলা শেষে তাই গোমড়া মুখে পেন বললেন, “চোট ছিল না। কেন দলে ছিলাম না সেটা কোচই ভাল বলতে পারবেন।” তবে মহমেডান শিবির সূত্রে খবর, আই লিগের কথা ভেবেই পেনকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি কোচ আজিজ।
পেনের অভাব পূরণ করতে সে জন্যই টোলগে কিছুটা নেমে এসে খেলা ধরছিলেন। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের পায়ে বল মানেই এ দিন বিপক্ষের রক্ষণে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছিল। প্রথমার্ধের দশ মিনিট বাকি থাকতে ওএনজিসি-র রক্ষণের জাল কেটে অ্যান্টনিকে দিয়ে গোল করালেন। তার কিছু পরেই প্রায় তিরিশ গজ দূর থেকে নিজের পরিচিত ঢঙেই ২-০ করেন টোলগে।
একা অজয় সিংহ একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে তিনটে সহজ গোল মিস না করলে এ দিন ৪-১ হতেই পারত। ম্যাচের শেষ লগ্নে ওএনজিসি-ও শেষ কামড় বসানোর জন্য উঠে-পড়ে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টার ফল লভিনোর গোল।
জয়ের আনন্দের মাঝেও মহমেডানের জন্য খারাপ খবর। এ দিন ট্যাকল করতে গিয়ে বাঁ হাতে মারাত্মক চোট পেলেন মহমেডানের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার লুসিয়ানো সাব্রোসা। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার হয়েছে ফুটবলারটির। কবে তিনি মাঠে ফিরবেন সেটাই এখন প্রশ্ন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আগামী তিন সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে এই ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডারকে। মহমেডান কোচ আবদুল আজিজ বলছেন, “জয়টা তৃপ্তির। কিন্তু আই লিগের ঠিক আগে লুসিয়ানোর চোট আমার চিন্তা বাড়িয়ে দিল। রক্ষণে ও আমার বড় ভরসা।” শনিবার পুণেএফসি-র বিরুদ্ধে আই লিগের প্রথম ম্যাচ মহমেডানের। |
ফুটবল সচিব ইকবাল আমেদ বলছেন, “সাম্প্রতিক অতীতে সাফল্য শব্দটাই হারিয়ে গিয়েছিল মহমেডান তাঁবু থেকে। এই জয় শুধু ক্লাবের নয় বাংলারও।” শুক্রবার সকাল দশটায় ট্রফি নিয়ে বিমানবন্দরে নামছেন পেন-টোলগেরা। সেখানে জয়ের নায়কদের বরণ করতে রাত থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন গার্ডেনরিচ, রাজাবাজারের মহমেডান সমর্থকরা।
মহমেডান: সোমনাথ, ধনরাজন, লুসিয়ানো (দীনেশ), সন্দীপ, অ্যান্টনি, গগনদীপ, কলিন, স্যামসং (পাইতে), ইজরায়েল, অজয়, টোলগে (জোসিমার)।
|